চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড থানা এলাকা থেকে চাঁদা তুলতেন তারা। পরিচয় দিতেন ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’র সদস্য এবং ‘সমন্বয়ক’। তবে বিধিবাম চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে দুই যুবককে ধরে পুলিশে দিয়েছেন হকার ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর দাবি, ফুটপাতে বসা হকারদের কাছ থেকে ওই দুই যুবক বেশ কয়েকদিন ধরে চাঁদা নিচ্ছেন। সম্প্রতি চাঁদার ৩০ হাজার টাকার জন্য ওই হকারকে গালাগাল করেন এবং পরবর্তীতে তার ওপর চড়াও হন ওই দুজন।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দিবাগত রাতে বন্দরটিলা সিটি করপোরেশন মার্কেটের সামনে থেকে তাদের আটক করে ইপিজেড থানা পুলিশ। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী মো. আজিম নামে এক ব্যবসায়ী বাদী হয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে ইপিজেড থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
দুই যুবক নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার নর সিংহপুর গ্রামের মৃত মফিজ উল্লাহর ছেলে আবদুল কাদের ইমন (২৩) এবং বাগেরহাট জেলার শরনখোলা থানার পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের মাঝিরবাড়ির মৃত হেমায়েত মাঝির ছেলে আসাদুজ্জামান রাফি (২৬)। তারা দুজনই জাতীয় নাগরিক কমিটি, ইপিজেড থানা কমিটির সদস্য হিসেবে ছিলেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মো. আজিম এবং তার সঙ্গীয় মো. রিপন আলী ভ্যানগাড়িতে করে সিইপিজেড এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করেন। ইমন ও রাফি আগে থেকেই নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করতে হলে তাদের চাঁদা দিতে হবে জানায়। ভয়-ভীতি দেখালে নিরুপায় হয়ে তারা বেশ কয়েকবার চাঁদার টাকা দেন। গতকাল সকাল ১০টায় ইমন চাঁদার টাকা নেওয়ার জন্য সিইপিজেড মোড়ে যান। তখন টাকা না থাকায় তারা দিতে পারেননি।
ওইদিন দিবাগত রাত ১২টার পর ব্যবসায়ী আজিজের মুঠোফোনে রাফি কল করে টাকা না দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করে এবং টাকা না দিলে ব্যবসা করতে দিবে না বলে হুমকি দেয়। এরপর আজিম ও রিপনকে বন্দরটিলা সিটি করপোরেশন মার্কেটের সামনে যেতে বলেন রাফি। সেখানে পৌঁছা মাত্রই রাফি ও ইমন ব্যবসায়ী রিপনের কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। তাৎক্ষণিক ২ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললেও তারা গালাগাল করতে থাকে। ওইসময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে অজ্ঞাত ৩-৪ জন ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে এবং ইমন ও রাফিকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক আরিফ মঈনুদ্দিন সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এখন নির্বাহী কমিটি রয়েছে। সমন্বয়ক কোনো পদ আর নেই।
ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আখতারুজ্জামান জানান, কয়েকজন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য পরিচয়ে ইপিজেড এলাকার হকারদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করতে যান। পরে স্থানীয় হকাররা মিলে ইমন ও রাফি নামে দুজনকে আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। গ্রেপ্তার দুজন জাতীয় নাগরিক কমিটির ইপিজেড থানা কমিটির সদস্য বলে আমাদের জানিয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।’
উল্লেখ্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়— আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র ও মুখ্য সংগঠক ছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির অন্যান্য অর্গানোগ্রাম, নির্বাহী, সেল ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।