মানুষের দেহের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর নাম আসলেই সবার আগে নাম আসে ফলের, তবে সেই ফলই এবার উচ্চ দাম বৃদ্ধির কারনে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে সাধারণত মানুষের। বাজার ঘুরে এমন উচ্চ দামের কারনে ক্রেতাদের ফিরতে হয় খালি হতে। এতে আপেল কেনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন অনেক ক্রেতা। ফলে চাহিদা কমতে থাকায় আমদানিও কমিয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। ফলটিতে শুল্ক আরেক ধাপ বাড়ায় রমজানের আগমুহূর্তে দাম আরও বেড়ে গেছে।
প্রতি কেজি ফলে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০থেকে ৬০টাকা, এর মধ্যে প্রতি কেজি মাল্টার দাম বেড়েছে ৫০-৮০ টাকা। বাজারে দেশি মাল্টার সরবরাহ কম, তাতে ২২০ টাকা কেজির আমদানি করা মাল্টা কিনতে হচ্ছে ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে। কোথাও কোথাও দাম আরও বেশি চাওয়া হচ্ছে। এছাড়া বিদেশি কমলার দাম পড়ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। কমলার দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০ থেকে ৭০ টাকা। বাড়তি আপেলের দামও। আপেলের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা। বাজারে সবুজ আপেল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজিতে।
জানা যায় চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২০২৫) প্রথম মাসে আপেল আমদানি আগের বছরের জুলাইয়ের তুলনায় কিছুটা বাড়তি থাকলেও বাকি সাত মাসে আমদানি কমেছে। গত অর্থবছরের আট মাসে ৮৭ হাজার ৭৯৭ টন আমদানির বিপরীতে চলতি অর্থবছরের সাত মাস ১৭ দিনে ৬৯ হাজার ৪১৫ টন আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাইয়ে ২ হাজার ৪৫০ এবং ডিসেম্বরে ১৮৪ টন বাড়তি আমদানি হলেও আগস্টে ২ হাজার ৫৪৮, সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ৩৯৩, অক্টোবরে ৬ হাজার ১৪৬, নভেম্বরে ৩৫৫, জানুয়ারিতে ১ হাজার ৮৬০ টন কম আমদানি হয়েছে। ফেব্রুয়ারির ১৭ দিনে ৫ হাজার ৩৫৮ টন আমদানি হয়েছে। যা গত অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১১ হাজার ৭৮২ টন।
পাইকারদের দাবি আমদানিকৃত ফলের উচ্চ(এলসি) এবং সংরক্ষণ কারনে বাড়তি অর্থ গুণতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া ও বাজার সিন্ডিকেটের কারনে ফলের এমন উচ্চ দাম।ব্যবসাইরা বলছেন যদি এই সিন্ডিকেট বিরুদ্ধে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্তায় নিতে পারে তাহলে কিছুটা সস্তি আসতে পারে ফলের বাজারে
চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক নাছির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এখন যে ফলের দাম তা মধ্যবিত্তের হাতের নাগালের বাইরে। দাম বেশি হওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে ফলের চাহিদা অনেকাংশে কমে গেছে। এসবের পেছনে মুখ্য বিষয় হলো ডিউটি। তার সাথে ট্রান্সপোর্টেশন, স্টোরেজ চার্জ আনুষাঙ্গিক সব মিলিয়ে আমদানিকৃত ফলের মূল্য অনেক বৃদ্ধি পেয়ে যায়। আমরা ডিউটি কমানোর জন্যে সম্প্রতি আমরা মানবন্ধন এবং মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। প্রথম রমজানে এবিষয় নিয়ে একটা স্বীদ্ধান্ত আসার কথা ছিল। তা এখনো আসনি। রমজানে ফ্রুটস এর চাহিদা অন্য সময়ের তুলনায় বেশি থাকে। আমরা আশাবাদী সরকার ডিউটি কমানর বিষয়ে দ্রুত নজর দিবে।
চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল আলম বলেন, ‘শুধু আপেল না, আমদানি করা প্রায় সব ফলের দাম বাড়ার কারণ মূলত দুটি। একটি হলো উচ্চশুল্ক, অন্যটি ডলারের বাড়তি দাম। ২০২১ সাল পর্যন্ত ১২০ থেকে ১৬০ টাকায় আপেল বিক্রি হতো। যখন থেকে আপেলকে বিলাসীপণ্য হিসেবে শুল্ক ৩২-৩৩ শতাংশ থেকে ১১৩ থেকে ১৩৬ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন দাম স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। সরকার সর্বশেষ দেড় মাস আগে শুল্কহার বাড়িয়ে ১৩৬ শতাংশ করায় দাম অনেকটা বেড়েছে। চাহিদা কম থাকার পরও সম্প্রতি আমরা রমজানকে টার্গেট করে পর্যাপ্ত পরিমাণ আপেল এনেছি। তাই সরবরাহ নিয়ে সমস্যা হবে না।’
এমএইচ/এ এস/বাংলাধারা