চাঁদাবাজির অভিযোগে চট্টগ্রামের সাংবাদিক আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বাসিন্দা মো. আলমগীর হোসেন। মামলায় বলা হয়েছে, ১০ মার্চ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে আবু বকর সিদ্দিকসহ অন্য আসামিরা চাঁদা দাবি করেছেন।
তবে সিসিটিভি ফুটেজ ও বায়োমেট্রিক উপস্থিতি প্রমাণ করে, ওই সময় আবু বকর সিদ্দিক চট্টগ্রামের “আজকের পত্রিকা” অফিসে উপস্থিত ছিলেন।আজকের পত্রিকার অফিস ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ১০ মার্চ দুপুর ১২টা ৫৩ মিনিটে তিনি অফিসে প্রবেশ করেন। বায়োমেট্রিক উপস্থিতি শিটেও তার উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।
মামলার বিবরণ
১১ মার্চ খাগড়াছড়ি সদর থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন মো. আলমগীর হোসেন। মামলায় চট্টগ্রামের সাংবাদিক আবু বকর সিদ্দিক, আজকের পত্রিকার রামগড় প্রতিনিধি বেলাল হোসেন এবং এনটিভি অনলাইনের দীঘিনালা প্রতিনিধি আখতার হোসেনসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩-৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা তার মালিকানাধীন ফোর বিএম ব্রিক ফিল্ডে গিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
আসলে ঘটনার পেছনের সত্য কী?
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আলমগীর হোসেন অবৈধভাবে পাহাড় কেটে ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ২০ জানুয়ারি উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। কিন্তু প্রশাসনকে উপেক্ষা করে তিনি আবারও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে কয়েক মাস আগে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে এনটিভির দীঘিনালা প্রতিনিধি আখতার হোসেনকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
এনটিভি প্রতিনিধি আখতার হোসেন বলেন, “আমি শুধুমাত্র সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করেছি। আলমগীরের অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায়, এখন প্রতিশোধ নিতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।”
আজকের পত্রিকার রামগড় প্রতিনিধি বেলাল হোসেন বলেন, “আমি জীবনে কখনো দীঘিনালা যাইনি, এমনকি বাদীর সঙ্গে আমার সামান্য পরিচয়ও নেই। এটি সম্পূর্ণ গায়েবি মামলা। প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি জানাই।”
চট্টগ্রামের সাংবাদিক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “আমি ওইদিন চট্টগ্রামেই ছিলাম, অফিসে আমার উপস্থিতির প্রমাণ রয়েছে। এটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা। আমাকে হয়রানি করতেই এই মামলাটি করা হয়েছে।”
সাংবাদিকদের প্রতিবাদ
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সালেহ নোমান বলেন, “আমরা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ করছি। এটি সম্পূর্ণ হয়রানিমূলক মামলা। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি প্রত্যাহার করতে হবে।”
আজকের পত্রিকার ব্যুরো চিফ ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ বলেন, “আবু বকর সিদ্দিক চট্টগ্রামের সাংবাদিক। তিনি চট্টগ্রামে থাকেন এবং এখানেই সাংবাদিকতা করেন। তাকে খাগড়াছড়ির ঘটনায় জড়ানো হাস্যকর। অবিলম্বে এই গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।”
টিভি ইউনিটের প্রধান তৌহিদুল আলম বলেন, “বর্তমান সরকারের আমলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের গায়েবি মামলা দুঃখজনক। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।”
বাদীর রহস্যজনক আচরণ
শুক্রবার (১৪ মার্চ) বিকেলে বাদী মো. আলমগীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে ফোন কেটে দেন। শনিবার দুপুরে আবার ফোন করা হলে, তিনি রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে অপরিচিত একজন ফোন কেটে দেন।
পুলিশের বক্তব্য
খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি আব্দুল বাতেন বলেন, “প্রাথমিক তদন্ত ছাড়া অনেক সময় মামলা নিতে হয়। তবে নিরীহ কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন করা হবে।”
সাংবাদিক মহলের দাবি
এটি সম্পূর্ণ গায়েবি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা।সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধে দ্রুত তদন্ত করে নিরপরাধ সাংবাদিকদের নাম মামলা থেকে বাদ দিতে হবে।আলমগীর হোসেনের অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।