ksrm-ads

১৫ জানুয়ারি ২০২৫

ksrm-ads

‘সামাজিক দায়বদ্ধতাই কবিতা লিখতে উদ্বুদ্ধ করে’

রবিউল রবি »

ফেসবুক, টুইটার, লিংকড-ইনের  সমস্ত স্ট্যাটাসই লিমেরিক (পঞ্চপদী ছড়া) দিয়ে শুরু করেন তিনি। নিত্যকর্ম ও ভাবনালোকে  জুড়ে শুধুই যার কবিতা আর কবিতা। কবিতা কালের সুদীর্ঘ পথ চলায় তিনি স্বতন্ত্র ও নিভৃতচারী এক নিবেদিত প্রাণ। দেশ বিদেশের বিভিন্ন নিউজ ওয়েব পোর্টালে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হচ্ছে হরহামেশাই।  যিনি ২০২১ সালে পেয়েছেন সাহিত্যে কলকাতার ‘বাংলা এক্সপ্রেস’ পদকও। পাঠক, বলছিলাম কবি এ কে সরকার শাওনের কথা।

ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীনগরের গোপালপুর সরকার বাড়িতে ১৯৬৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী এক সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী এই কবির পিতার নাম মো. আবদুল গনি সরকার। তার মাতার নাম সালেহা গনি সরকার। সরকারি- বেসরকারি চাকরির পাঠ চুকিয়ে লেখা-লেখি করতে তিনি এখন নিরিবিলিতে  বাস করছেন ঢাকার উত্তরখানের নিজ বাসভবন ‘শাওনাজে’।

তাঁর কবিতায়  রোমান্টিক ভাবধারার আধিক্য পরিলক্ষিত হয় বলে প্রেম পিয়াসীরা তাঁকে রোমান্টিক কবি ও সীমাহীন ভালোবাসার কবি বলে থাকেন! ‘কথা-কাব্য’ কাব্যগ্রন্থের ‘বিরাগ-বচন’ কবিতায় লিখেছেন,

যে হৃদয়ে লাঙ্গল দিয়ে

রক্ত গঙ্গা বহাস,

জানিস না তুই

সেই হৃদয়ে

তোরই বসবাস!

জনপ্রিয় কবিতা ‘আমার সজনী সেন’-এ তিনি বিশ্বের মহান প্রেমিক প্রেমিকাদের তুলে ধরে নিজ প্রেয়সীকে লিখেছেন,

সুন্দরের রানী ক্লিওপেট্রা তুমি

ট্রয় নগরীর হেলেন।

রবী ঠাকুরের লাবন্য তুমি,

তুমি আমার সজনী সেন!

চট্টগ্রামের জনপ্রিয় নিউজপোর্টাল ‘বাংলাধারা’র পাঠকদের জন্য এই কবির সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বাংলাধারা’র নিজস্ব প্রতিবেদক রবিউল রবি।

বাংলাধারা: আসসালামু ওয়ালাইকুম। আপনি কেমন আছেন?

এ কে সরকার শাওন: ওয়ালাইকুম সালাম। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি। আশা করি বাংলাধারার আপনারা সবাই ভালো আছেন।

বাংলাধারা: আপনার লেখালেখির শুরুটা কখন, কেমন করে জানতে চাই।

এ কে সরকার শাওন: শুরুটা নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল থেকেই। তখন শুধু ছড়া এবং লিমেরিক লিখতাম।

বাংলাধারা: সেই প্রথম দিকের কোন একটা ছড়া বা কবিতার চার লাইন যদি শোনাতেন।

এ কে সরকার শাওন: ডায়েরিগুলো হারিয়ে গেছে। কয়েকটা মনে আছে। একটি বাবা মা’কে নিয়ে। অন্যটি বন্ধুদের নিয়ে দু’টো  শোনাই।

“বাবার আদেশ মায়ের নির্দেশ

সুসন্তান মানে যথাযথ!

সবার উপরে বাবা-মা

কথাটি মনে গাথি সতত!”

“বন্ধু সবুজ চির অবুঝ,

ইকবাল সৌভাগ্যবান!

আমি নাকি ক্ষমতাবান;

কবে পাবো তার প্রমান!”

বাংলাধারা: দারুণ!  আপনার এই সময়ের একটি কবিতার চারটি লাইন শুনতে চাই।

এ কে সরকার শাওন: চারটি নয়, দু’টি কবিতার আটটি লাইন শোনাবো। প্রথমটি ‘আপন-ছায়া’ কাব্যের ‘বাবার ছবি’ কবিতার।

“আমার বাবা আমার বিশ্ব

বাবা ছাড়া আমি নিঃস্ব!

গুনে-মানে  ধ্যানে জ্ঞানে

বাবা গুরু আমি শিষ্য!”

অন্যটি মা’কে নিয়ে শিকড়-শিখর কবিতার ‘শিকড়-শিখর’ কবিতার চারটি লাইন…

“মিঠেকড়া মা আমার

গুনি অতি প্রত্যুৎপন্নমতি!

মিষ্টভাষী সরলা বিদুষী

বিধি সৃজিছেন অল্প অতি।।

বাংলাধারা: চমৎকার! আপনার মোট কাব্যগ্রন্থ কয়টি?

এ কে সরকার শাওন: প্রকাশিত কাবগ্রন্থ তিনটি। কথা-কাব্য, নীরব কথপোকথন ও আপন ছায়া। সবগুলো রকমারি ডটকমে পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাধারা: অপ্রকাশিত কাব্য ও অন্যান্য লিখার কথা বলুন।

এ কে সরকার শাওন: অপ্রকাশিত কাব্য ৯টি। এছাড়া গল্পগ্রন্থ ‘মেক-আপ বক্স’ ও অপ্রকাশিত।

বাংলাধারা: ইংরেজি কবিতাও তো লিখেন দেখি মাঝে মাঝে।

এ কে সরকার শাওন: হ্যাঁ, মাঝে মাঝে লিখি বৈ কি। ইংরেজি কাব্যগ্রন্থের নাম ‘Songs of Insane’. অল পোয়েট্রি ডটকমে বেশ কিছু ইংরেজি কবিতা রয়েছে আমার।

বাংলাধারা:  একটি ইংরেজি কবিতার কয়েকটি লাইন বলে যদি শোনাতেন…

এ কে সরকার শাওন: ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক বাঙ্গালী ললনা আমাকে ব্রিটেনে যাবার আহ্বান করলে তাঁর উত্তরে আমি লিখি আমার প্রথম ইংরেজি কবিতা ‘Priority’. সেই কবিতা থেকে কয়েকটি লাইন বলছি…

I am a simple man

Somebody says fool,

But I keep cool;

Imparting love full.

I also like to roam

All over the world.

First of all motherland

Then the wonderland.

বাংলাধারা: লেখালেখির কোন স্মরণীয় ঘটনা আছে? থাকলে একটি স্মরণীয় ঘটনা বলুন।

এ কে সরকার শাওন: তখন ১৯৮৪ সাল। পত্রিকায় লিখা আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৪টি জেলায় লিখা পাঠাই। ময়মনসিংহের ফুলপুর, খুলনার ফুলতলা, সিলেটের সুবিদ বাজার ও কুমিল্লা সদরে।

কুমিল্লা সদরের ম্যাগাজিনটির নাম ছিলো ‘রক্তাক্ত সংলাপ’। সম্পাদকের নাম ভুলে গেছি। কবিতা প্রকাশ হবার পর জেনেছি আমাদের নবীনগরের  লাউর ফতেহপুরে গ্রামের বাড়ি। সেই ‘রক্তাক্ত সংলাপ’ এ আমার কবিতার নামও ছিলো ‘রক্তাক্ত সংলাপ’। ম্যাগাজিনে আমার কবিতার আগের লিখাটি ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক  ডক্টর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর। পরের লেখকের নাম স্বপ্না রায়। তিনি বাংলা ব্যাকরণের কিংবদন্তি লেখক হরলাল রায়ের কন্যা এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষক। তার পরের লেখক ছিলো তৎকালীন  কুমিল্লার অজিত গুহ কলেজের অধ্যক্ষের।

এতোগুলা গুনী মানুষের মাঝে আমার লিখা দেখে আমি অভিভূত হয়েছিলাম। ব্যাপক অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম। সম্পাদক সাহেব বই, ম্যাগাজিন ও চকলেট উপহার দিয়েছিলেন।

বাংলাধারা: আপনার লেখালেখির অনুপ্রেরণা কে কে? কেউ কি নিরুৎসাহিত করেছে কখনো?

এ কে সরকার শাওন: অনুপ্রেরণা দানে বিয়ের আগে ছিলো বন্ধু-বান্ধবীগণ। বিয়ের পরে স্ত্রী নাজমা আশেকীন শাওন, আমার তিন রাজকন্যা, বন্ধু-বান্ধবীগণ ও পাঠকগণ।  মেঝো রাজকন্যা কামরুন সালেহীন তৃনা আমার দুইটি প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের (কথা-কাব্য ও আপন ছায়া) প্রচ্ছদ এঁকে আমাকে ব্যাপক উৎসাহ যুগিয়েছে। নিরুৎসাহিত করা কাছের মানুষদের নাম প্রকাশ না করাই সমীচীন। ১৯৮৪ সালে দেশের চার প্রান্ত থেকে ৪টি ম্যাগাজিন ডাকযোগে পেয়ে আমি যখন আবেগে আপ্লুত ঠিক তখনই কাছের কেউ একজন যা বললেন, তা এখনো কবিতা লিখতে গেলেই কানে বাজে। ‘ওহ লিখাপড়া বাদ দিয়ে কবিতা লিখছো! কবি হলে না খেয়ে মরা লাগবে।’ তাঁর সেই কথার জবাব দিয়ে আমি লিখেছিলাম, ‘সাহিত্য ও কবিতার কথা’ প্রবন্ধে।

বাংলাধারা: আপনি তো গান, নাটক, টেলিভিশন প্রোগ্রামও লিখেছেন। বিষয়গুলো সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।

এ কে সরকার শাওন: ১৯৮৮ সালে আমার  লিখা গান ‘জীবনে যখন তুমি এলে না’ প্রথম বিটিভিতে গায় শিল্পী টিটু শিহাব। গানটি সুর করেছিলো বদরুল আলম বকুল। বিটিভি ও বাংলাদেশ  বেতারে অনির্বান ও  দুর্বারে বেশ কিছু  গান প্রচারিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালে সংগীতার এ্যালবাম ‘কার পথ চেয়ে’-তে আমার লিখা কয়েকটি  গান ছিলো।

উল্লেখযোগ্য নাটক ও টেলিফিল্ম ‘সুটিং’, ‘আদর্শ লিপি’, ‘পরিবর্তন’! এগুলোতে দেশের সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রীগণ অভিনয় করেছে। এছাড়া স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে ‘সোনামনি’ নামে শিশুদের একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা এবং ‘বিজনেস বাংলাদেশ’ নামে একটি অনুষ্ঠান প্রযোজনা করেছি। টেলিফিল্ম ‘সুটিং’ এবং জি সিরিজের ‘অগ্নিবীণা’ থেকে রিলিজ হওয়া টেলিফিল্ম ‘গিট্টু মিয়ার গিট্টু’র সম্পাদনা করেছি আমি। সংগীত শিল্পী শান্তর ‘তুমি সেই প্রিয়জন’ গানটির সম্পাদনা করেছি আমি। যার ইউটিউবে ভিউর সংখ্যা ২.৫ মিলিয়ন।

বাংলাধারা: বাহ্! বেশ। কোন বিষয়টি আপনাকে কবিতা লিখতে উদ্বুদ্ধ করে?

এ কে সরকার শাওন: শুধু সুনাম, সম্মান বা বাহবা পাবার জন্য আমি লিখি না। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাও লিখার কারণ। ‘চেয়ার ও চোর’, ‘প্রলয়-প্রলাপ’ ও ‘বাঁশীওয়ালা’ সমাজ ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে লেখা।

বাংলাধারা: ‘চেয়ার ও চোর’ থেকে চারটি লাইন বলেন।

এ কে সরকার শাওন: ‘হারামখোর’ কবিতা থেকে চারটি লাইন বলছি…

“কাকে বলি ভালো

বেশীরভাগই চোর!

কিছু আছে নির্জীব

বাকী হারামখোর!”

বাংলাধারা: ষড়ঋতু নিয়ে তো আপনার বেশ কিছু কবিতা আছে। শরতের একটি কবিতা থেকে কয়েকটি লাইন শোনান, প্লীজ!

এ কে সরকার শাওন: শুধু শরৎকাল ও কাশফুল নিয়েই আমার ৮-১০টি জনপ্রিয় কবিতা রয়েছে। ‘শারদ সন্ধ্যায়’ দুই বাংলায় বেশ জনপ্রিয় কবিতা। ‘শারদ সন্ধ্যায়’ কবিতার ৮টি লাইন শোনাচ্ছি…

অসীম নীলে মাতাল অনিলে

মেঘের তুলো ভাসে!

সবুজ দিগন্ত  বন বনান্ত

প্রান খুলে হাসে!

 

সাদা নীলে দারুণ মিলে

দূর আকাশের গায়!

নীলে সবুজে দারুণ সাজে

দিকচক্রবাল রেখায়!

বাংলাধারা: খুবই সুন্দর। মানুষজন তো কাশফুলের ছবির সাথে আপনার কবিতার লাইনগুলো জুড়ে দেয় হরহামেশাই!

এ কে সরকার শাওন: ওগুলো ‘কাশকন্যা’ ও ‘কাশবনের রাজকন্যা’ কবিতার। অনেকেই কপি-পেষ্ট করেছে। কেউ কেউ রাতারাতি কবি বনে গিয়ে সেরা কবিও হয়ে গেছে! অনেক কবিতাই আছে ওরকম জনপ্রিয়। যেমন- কাঁঠাল, হলুদ ছোঁয়া, আমি নেইকো একেলা, পরেনকথা হবে, বাবার ছবি ইত্যাদি।

বাংলাধারা: দেশ ও সমাজে কবিতার প্রভাব কতটুকু?

এ কে সরকার শাওন: অনেক ও ব্যাপক। সাহিত্য ও কবিতার কথা প্রবন্ধে এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছিলাম।

আমেরিকার ৩৫তম রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডি কবিতাকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক বলে অভিহিত করে বলেছেন, “When power leads man toward arrogance, poetry reminds him of his limitations. When power narrows the area of man’s concern, poetry reminds him of the richness and diversity of existence. When power corrupts, poetry cleanses.”

ফ্রান্সিস বেকন কবি কে ধীমান বলেছেন, “History makes a man wise.”

এরিস্টটল কবিতাকে ইতিহাসের উপরে স্থান দিয়ে বলেছেন, ” Poetry is finer and more philosophical than history; for poetry expresses the universal, and history only the particular.”

কবিতা যদি একটি আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলনে সবচেয়ে জোরালো বক্তব্য রেখে গিয়েছেন কিংবদন্তী কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দকে কবিতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানাকেও কবিতা বলে কবিতাকে মুকুট পরিয়েছেন। কবিতা যে আদর্শ সমাজের জন্য কত গুরুত্বর্পূণ তা বোঝাতে তিনি বলেছেন,

“যে কবিতা শুনতে জানে না

সে ঝড়রে র্আতনাদ শুনবে ।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে।”

বাংলাধারা:  আপনার ছোটবেলার কিছু স্মৃতি বলেন।

এ কে সরকার শাওন: বাবার সোনালী ব্যাংকে চাকরির সুবাদে ছোট বেলাটা কেটেছে ঝালকাঠিতে। ছোট্ট ছিমছাম স্বপ্নের শহর ঝালকাঠি। ১০ কাপড়িয়া পট্টির ছোট্ট বাসায় আমার বাবা-মা ও আমরা ছয় ভাই বোনের অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে। শিক্ষার হাতেখড়ি উদ্বোধন হাইস্কুলের চান স্যার, মুকুন্দ স্যারেসহ কতো স্মৃতি এখনো মনকে নাড়া দেয়।  সুগন্ধা নদী ও বাসন্ডা নদীতে নিত্য সাঁতার কাটা, ধানসিঁড়ি নদীতে খাল কাটা, ডাকঘাটায় গোছল করা, বন্ধু ইকবাল, সবুজ, মনকা, খোকন খলিফা, রূপম তালুকদার, বাবুল-দুলাল, বাবলু-বাচ্চু, নান্না, শিবু এদের নিয়ে হাজার স্মৃতি রয়েছে। স্টেডিয়ামে খেলার স্মৃতি। ফুটবলার নজরুল ইসলাম স্বপন কাকুর ফুটবল শিক্ষাদানের জ্বাজ্জল্যমান স্মৃতি।

বাংলাধারা: আপনার পারিবারিক জীবন সম্পর্কে যদি একটু বলেন।

এ কে সরকার শাওন: স্ত্রী ও তিন রাজকন্যা নিয়ে আমার চাঁদের হাট ছিলো শাওনাজ ভবন। এখন ফাঁকা। ছোট রাজকন্যা রাশিয়ান সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে মস্কোয় অবস্থিত  রাশিয়ার টপ মেডিকেল রিসার্চ ইউনিভার্সিটি ‘সেচনভ’ এ ডাক্তারি পড়ছে। মেঝো রাজকন্যা ভারত সরকারের পূর্ণ স্কলারশিপ নিয়ে ভারতের ভুবনেশ্বরে কলিঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এরোস্পেস ইন্জিনিয়ারিং পড়ছে। বড় রাজকন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করার পর চাকরি করতো যমুনা টেলিভিশনে। সে ও ভারত সরকারের  স্কলারশিপ নিয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট’-এ মাষ্টার্স করার জন্য মুম্বায়ের টাটা ইন্সটিটিউট অব সোস্যাল সাইন্স এ ভর্তি হয়েছে। এক বছর পর অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর পড়ার পর মাষ্টার্স শেষ হবে। এটাকে বলে ডুয়েল স্কলারশিপ। যে কোন সময় মুম্বাইয়ে চলে গেলে আমরা বাড়িতে একা হয়ে পড়বো।

বাংলাধারা: নতুন প্রজন্মের কবিদের উদ্দেশে আপনার উপদেশ কি?

এ কে সরকার শাওন: আমি নিজেই  শিক্ষানবিশ কবি। উপদেশ দেবার প্রশ্নই আসে না। অনুরোধ করবো বেশি বেশি পড়তে তারপর লিখতে। অন্য কারো কবিতা বা লেখা যেন কেউ কপি-পেষ্ট না করে।  আমার লেখা কপি দেখতে দেখতে আমি মর্মাহত ও ক্লান্ত।

বাংলাধারা: আপনার কবিতা  লিখায় ‘জগলু’ ও ‘সজনী’ নামটি থাকে কেন?

এ কে সরকার শাওন: দেশের শীর্ষস্থানীয় নিউজ ওয়েব জাগোনিউজ২৪ সহ স্বনামধন্য নিউজপোর্টালগুলোতে একটি কবিতা ছাপালে দুই দিন পর কমপক্ষে ১০-১৫ জায়গায় কপি হয়। বেশিরভাগ জায়গায় আমার নামও থাকে না। তাই কবিতার মাঝে কোথাও ‘জগলু’ নামটি ঢুকাই কবিতটি যে আমার তা প্রমানের জন্য। সজনী তো প্রেয়সী। আমার রোমান্টিক কবিতার অনুপ্রেরণা। তবে সে কি অলীক না বাস্তবিক—সে প্রশ্নের উত্তর আমি দিবো না।

বাংলাধারা: ও আচ্ছা! আপনার সাহিত্যকর্ম নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে নাকি?

এ কে সরকার শাওন:. দলবাজির কষাঘাতে সমাজের সবখান থেকে নির্দলীয় সুধী সম্প্রদায় নির্বাসিত। এ অবস্থার উন্নতি না হলে  আশা ও পরিকল্পনায় গুড়ে বালি। তবে সাহিত্য নিয়ে আমার অনেক বড় স্বপ্ন আছে।

বাংলাধারা: ইদানিং দেখা যাচ্ছে  কিছু প্রতিষ্ঠান কবিদেরকে পুরষ্কৃত  করার নামে বাণিজ্যিক সুবিধা ভোগ করছে, আপনি বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?

এ কে সরকার শাওন: এগুলো অধিকাংশ  ধান্ধাবাজী। ‘মাদার তেরেসা’ পদক দেওয়ার এখতিয়ার কি বাংলাদেশের কারো আছে? এই ধান্ধাবাজিকে আমরা বলি লোহার ব্যবসা। মানুষ ধান্ধাবাজি করে মূলত দু’টি কারণে। একটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আর অন্যটি সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য। আমি বিত্তশালী না হলেও আল্লাহ্র রহমতে বেশ চলে যাচ্ছে। সম্মানের কোন কমতি নাই আমার। ধান্দাবাজি আমি চরম অপছন্দ করি। আমি এক আল্লাহ’তে বিশ্বাসী। পরকালে পাই পাই হিসাব দিতে হবে সেটা মাথায় থাকে সব সময়।

বাংলাধারা:  বাহ! বাংলদেশ সম্মিলিত কবি পরিষদ সম্পর্কে কিছু বলেন।

এ কে সরকার শাওন: আমি ওটার একদমই নিষ্ক্রিয় সভাপতি।  অন্যরা  কাজ করছে দিবস ভিত্তিক।

বাংলাধারা: পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলুন।

এ কে সরকার শাওন: পাঠকগণ সম্মানিত। তাঁদের মর্জি মেজাজ রাজা বাদশাহ’র মেজাজ। কখন কোন কবিতা তাঁদের হৃদয়ে দাগ কাটে বলা মুশকিল। অনুরোধ করবো সাহিত্য পড়তে, অনুধাবন করতে, সাহিত্য রস আস্বাদন করতে ও সহিত্য ও সাহিত্যিকের পৃষ্ঠপোষকতা করতে।

বাংলাধারা: ‘বাংলাধারা’র পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এ কে সরকার শাওন: আপনাকে এবং বাংলাধারা’র সম্পাদক শিপন ভাইসহ পুরো টিমকে এবং পাঠকবৃন্দদের অনেক ধন্যবাদ।  আমি বাংলাধারা’র উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি।

আরও পড়ুন