ksrm-ads

৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ksrm-ads

‘সিআরবির অংশ টাইগারপাস রেলওয়ের রাস্তাকে সুরক্ষিত রাখতে হবে’

চট্টগ্রাম মহানগরীর টাইগারপাস থেকে নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার পথে যে নান্দনিক রাস্তা আছে উপরে এবং নিচে একপাশে উচু পাহাড় বঙ্গোপসাগরের দিকে তাকিয়ে আছে মাঝখানে নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার রাস্তা। তার নিচের স্তরে রেল স্টেশন থেকে আসার রাস্তা। দক্ষিণ পাশে সমতলস্তরে কিছু দালান এবং ভবন, খেলার রেলওয়ে স্কুল মাঠ অন্যান্য কিছু নান্দনিক অবস্থান।

শত বর্ষের কাছাকাছি এই রাস্তার বয়স। ঐতিহ্য আছে, নান্দনিকতা আছে, সৌন্দর্যের অনেকটাই আছে। সবুজের নান্দনিক সমারোহ আছে। শতবর্ষী বৃক্ষের মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার বিপ্লবী ঐশ্বর্য আছে। সবকিছু মিলিয়েই ত্রিমাত্রিক চট্টগ্রামের নান্দনিকতা, ঐতিহ্য এবং ইতিহাস ধারিত হচ্ছে এখানে।

শোনা যাচ্ছে, টাইগারপাস থেকে রেলওয়ে পাবলিক হাই স্কুল গেট পর্যন্ত ছোট বড় ১৪০ এর অধিক গাছ রয়েছে। ইতিমধ্যেই এসব গাছ থেকে ৪৬টি কাটার অনুমতি দিয়েছে গাছের অন্যতম কর্তৃপক্ষ বন অধিদপ্তর। গাছগুলো কেটে টাইগার পাশের ফ্লাইওভারে ওঠার রেম্প তৈরি করা হবে। এখানে পুরনো রেইন নট্রি আছে, বাদাম গাছ আছে, ইপিল ইপিল, কৃষ্ণচূড়া, মেহগনি এবং বিভিন্ন প্রকার জ্বালানি কাঠের গাছ আছে।

গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। উষ্ণতার অন্যতম উপাদান কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। পৃথিবীর তাপমাত্রাকে সহনীয় পর্যায়ে রাখে। ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে মাটিকে সুরক্ষা দেয়। জীবজন্তুকে সুরক্ষা দেয়। সর্বোপরি ইতিহাসের এক কালকে অন্যকালে স্থানান্তর করার ইতিহাসের অংশীজন হয়।
এই গাছকে কেটে ফেলা হচ্ছে উন্নয়নের স্বার্থে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে মাটি চাপা দিয়ে। এরকম কাজ সিডিএর এই প্রকৌশলী বায়েজিদ বোস্তামীর বাইপাস তৈরি করতেও সম্পাদন করেছিল। সেখানে ৬ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে নির্বিঘ্নে নির্দ্বিধায় ১৮টি ঐতিহ্যের পাহাড় কাটার ব্যবস্থা করেছিল।

আহা! পরিবেশ বিধ্বংসী উন্নয়ন, উন্নয়নই বটে! উন্নয়নের সুবিধাভোগী জনগণ। আজ ও আগামী দিনের নাগরিকরা। তারা কখনোই এরকম ফুসফুস বিধ্বংসী উন্নয়ন চায়না। ইতিহাস ঐতিহ্য থেকে পরিবেশকে ধ্বংস করে তথাকথিত উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সাথে যারা যুক্ত, তারা পরিবেশের শত্রু। সভ্যতার শত্রু, ইতিহাসের শত্রু, দেশের শত্রু। এদের হাতে থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে ও তার ঐতিহ্যকে সুরক্ষা দেয়াই এখন সর্বস্তরের জনগণের দায়িত্ব।

ঐতিহ্যের চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের স্থাপনা রাস্তাঘাট, গাছ, নদী খাল সুরক্ষা করা এখন এখানকার বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের মানুষের অন্যতম পবিত্র দায়িত্ব। ‘রেম্প নির্মাণের জন্য মাত্র ৪৪ টি গাছ কাটা হবে’- প্রকল্প পরিচালকের এই অর্বাচীন বক্তব্য মূর্খের সাথে তুলনা করা যায়। যদিও মূর্খেরও পরিবেশ জ্ঞান আছে। এই প্রকল্প গ্রহণকারী অর্বাচীনগুলো পরিবেশের শত্রু হিসেবে, ঐতিহ্যের ঘাতক হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিচিতি অর্জন করেছে।
এদেরই অনুচর, সহচর, অংশীজনরা সিআরবি ধ্বংস করার জন্য প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছিল নিকট অতীতে। এখন ঐতিহ্যের অংশ সিআরবি এর চারপাশে এরা হানা দিচ্ছে, সিআরবির ঐতিহ্যকে একদিন শেষ করে দেয়ার জন্য।

উন্নয়নের সাথে পরিবেশের সংঘর্ষ থাকে। দেশপ্রেমিকরা এটিকে কমিয়ে এনে উভয় কুল রক্ষা করে। ইতিহাস ঐতিহ্য সুরক্ষার অন্যতম উপাদান বৃক্ষ। ইতিহাসের অংশীজন এই বৃক্ষকে নিধন করে ইট কাঠ পাথরের উন্নয়ন প্রকারান্তরে ইতিহাসকেই তাচ্ছিল্য করে, অস্বীকার করে। অসভ্যতাকে উসকে দেয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশের প্রান্তে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত। তার অংশীজনরা প্রকৃতির ঐতিহ্য, ঐশ্বর্যকে নষ্ট করে তাকে বাণিজ্যের রূপ দেয়ার প্রক্রিয়ার সাথে সব সময় নিজেদেরকে সম্পৃক্ত রাখছে। এরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নযাত্রার উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত থাকলে তা স্মার্ট বাংলাদেশের সমূহ অকল্যাণ করবে। দ্রুত চিহ্নিত করে এদের কর্মকাণ্ডকে সীমাবদ্ধ করা দরকার, নিবৃত করা দরকার।

আমরা দাবি করি, যে বা যারাই এই প্রকল্পের সাথে সম্পৃক্ত থাকুন, ঐতিহ্যের বৃক্ষকে ধ্বংস না করে ইতিহাসের উপাদানকে বিলুপ্ত না করে যে উন্নয়ন, তার সাথে প্রকল্পকে সম্পৃক্ত করুন। জনগণকে ঐতিহ্যের সাথে বাস করার সুযোগ দিন। পরিবেশের সাথে জনগণের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার কোন অধিকার জনগণ আপনাদের দেয় নাই।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর- ১১ ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ