চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আন্ডার টেবিল পাস কিংবা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সংস্থাটির অসাধু কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেটে নগর হয়েছ বিশৃঙ্খল। তবে এবার দুদকের সামনে অনিয়মের কথা স্বীকার করেন খোদ সংস্থাটির সচিব। সিডিএর বাস্তবায়ন করা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও আউটার রিং রোড প্রকল্পের দূর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রায় প্রতিষ্ঠানে থাকে কিছু অনিয়ম তো আছে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সিডিএ কার্যালয়ে অভিযানে যাওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছেই এমন স্বীকারোক্তি দেন সচিব রবীন্দ্র চাকমা। তবে কী ধরনের অনিয়ম তা খোলাসা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, তবে আমার দীর্ঘদিনের চাকরি জীবনে এমন দুর্নীতি-অনিয়মে ভরা প্রতিষ্ঠান দেখিনি। মূলত এই প্রতিষ্ঠানে বেতন-ভাতা নিয়ে বেশি অনিয়ম হচ্ছে। যা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানানো যাবে কার দায়বদ্ধতা কতটুকু বা কতটুকু অনিয়ম হয়েছে।
প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনায় দুদক সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়–১ বুধবার দুপুরে ওই অভিযান চালায়। অভিযানে দুদক কর্মকর্তারা সিডিএর বাস্তবায়ন করা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও আউটার রিং রোড প্রকল্পের বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই-বাছাই করেন।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদক সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়–১ এর সহকারী পরিচালক সাঈদ মাহমুদ ইমরান বলেন, ‘আমরা সিডিএ সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি নিজেও বলেছেন এখানে কিছু অনিয়ম আছে। ওই দুটি প্রকল্পের যাবতীয় নথিপত্র আমরা নিয়েছি। কিছু রেকর্ড পাইনি। কালকের মধ্যে সেগুলো আমাদের দিতে বলেছি। সব পেলে আমরা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ঢাকায় দাখিল করব।’
এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কর্মকর্তা সাঈদ মোহাম্মদ ইমরান বলেন, ‘আসলে অস্বীকার করার উপায় নেই। এখানে কিছু অনিয়ম-দুর্নীতি আছে। বিস্তারিত পর্যালোচনা করে জানানো যাবে কার দায়বদ্ধতা কতটুকু বা কতটুকু অনিয়ম হয়েছে।’
এর আগে দুদকের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের প্রধান কার্যালয় থেকে সিডিএতে অভিযান পরিচালনা করার জন্য বলা হয়েছিল। অভিযোগ মূলত দুটি প্রকল্প ঘিরে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের। এটার নির্মাণকাজে অনিয়ম, বিশেষ করে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগে যেখানে সেখানে ফাটল দেখা যাচ্ছে। যেখানে সেখানে র্যাম্প করা হয়েছে। রেলিংয়ে ঠিকভাবে নাট-বল্টু লাগানো হয়নি। প্রয়োজনের বেশি অর্থ এখানে ব্যয় করা হয়েছে। এ ধরনের বেশকিছু অভিযোগ আমাদের কাছে ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটা হচ্ছে চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড প্রকল্প, যেটা সাগরিকা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত গিয়েছে। ওটার বিষয়ে অভিযোগ ছিল এমন যে সিডিএর আটজন কর্মকর্তা সেখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ হচ্ছে উনারা সিডিএ থেকেও বেতন নিচ্ছেন আবার ওই প্রকল্প থেকে বেতনের ৪০ শতাংশ ভাতা নিচ্ছেন, যা আসলে অনেক টাকা।’
সাঈদ মাহমুদ বলেন, ‘সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলে মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা দেড় হাজার টাকা পান। উনারা যে ৪০ শতাংশ ভাতা নিয়েছেন সেটা কীভাবে নেওয়া হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে আমরা এসেছি।