কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজারের চকরিয়ায় সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় মধ্যযুগীয় কায়দায় নুর আয়শা (২৫) নামের এক গৃহবধুকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। স্থানীয় সুদি কারবারি শওকত ওসমান নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে এ নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে ।
চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের মোরাপাড়ার হাপানিয়াকাটা এলাকায় মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) এ ঘটনা ঘটলে বুধবার (১৭ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের পর ঘটনাটি প্রচার পায়। নির্যাতনকালে নুর আয়েশার দু’মেয়ে শিশু নির্বাক ভাবে তাকিয়ে আছে। যা নেটিজনদের ব্যতিত করেছে।
এ ঘটনায় পুলিশ শওকত ওসমানের বাবা জহির আহমদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। সে সাথে ভিকটিম নুর আইশাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে। ভোক্তভুগি নুর আয়শা ওই এলাকার দিনমজুর আলী আহমদের স্ত্রী।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার নিয়াজুল ইসলাম বাদল বলেন, কয়েক মাস আগে নুর আয়শা তার স্বামীর চিকিৎসার জন্য শওকত ওসমানের কাছ থেকে চার হাজার টাকা সুদের উপর ধার নেয়। ইতিমধ্যে নুর আয়শা সুদ ও আসলসহ আট হাজার টাকা পরিশোধও করেন।
মঙ্গলবার দুপুরের দিকে শওকত ওসমান আরো দুই হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু নুর আয়শা ওই টাকা বৃহস্পতিবার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে তা মানতে নারাজ শওকত। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে শওকত ওসমান গৃহবধু নুর আয়শাকে একটি গাছের সাথে শাড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর ও অমানবিক নির্যাতন চালায়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, সুদি শওকত ওসমান একটি গাছের সাথে শাড়ির আঁচল দিয়ে বেঁধে রাখে নুর আয়শাকে। এসময় নুর আয়শা তার বাঁধন খুলে দিতে বলে। কিন্তু নুর আয়শার আহবানে সাড়া না দিয়ে শওকত ওসমান কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে নুর আয়শাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে এবং চুলের মুটি ধরে টানতে থাকে ও চুলের মুটিও গাছের সাথে বেঁধে রাখে। পরে স্থানীয় বেশ কয়েকজন মহিলা নুর আয়শাকে উদ্ধার করতে গেলে তাদেরকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় শওকত ওসমান।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বলেন, ঘটনাটি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি সাহেবকে জানানো হয়েছে। আমি চাই এ ঘটনার একটি দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হোক।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখার পরপরই পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে পাঠায়। অভিযুক্ত শওকতকে না পাওয়ায় তার বাবা জহির আহমদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তূতি চলছে।
বাংলাধারা/এফএস/এআর