কক্সবাজার প্রতিনিধি »
দোষারোপ থেকে বাঁচতে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা জরুরী উল্লেখ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেছেন, প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিন শুধু দেশের নয়, পৃথিবীর সম্পদ। ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান হওয়ায় গত দেড় দশকে এখানে দর্শনার্থীর অতিরিক্ত চাপ বেড়েছে। আগ্রাসী পর্যটক ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের অসচেতনতায় ধ্বংস হচ্ছে দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশসহ জীববৈচিত্র্য। অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল জল। ট্যুরিজমের জন্য পরিবেশকে পিষিয়ে মারা যাবে না। আমরা টেকসই ট্যুরিজম চাই। সেন্টমার্টিনে পরিবেশ সমুন্নত রেখেই ইকোটুরিজম উন্নয়ন করতে হবে।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) কলাতলীর তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস এন্ড রিসোর্টে ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন উন্নয়নে অংশীজনদের সমন্বয়ে পরামর্শ’ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিবেশ সচিব আরও বলেন, এখন যারা সেন্টমার্টিন যাচ্ছে তারা প্রবাল ও প্রতিবেশ সম্পর্কে জ্ঞাত নয়, তাই সবাই আগ্রাসী পর্যটক। তারা পরিবেশের তোয়াক্কা করছে না। সেন্টমার্টিন নিয়ে ভাবা মানে শত্রুতা নয়। আমরা দারিদ্র্য পীড়িত জাতি থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশে এগিয়েছি। আমাদের এখন চিন্তাশীল ও সংবেদনশীল হতে হবে দেশ ও প্রত্যেক জীবের প্রতি। সেন্টমার্টিনে যাতায়াতকারিদের, দায়িত্বশীল পর্যটক হতে হবে। আমরা সেন্টমার্টিনকে প্রাকৃতিক স্বর্গ হিসেবে দেখতে চাই।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহযোগিতায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আয়োজিত কর্মশালায় জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম।
বক্তারা বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর উন্নয়ন ও ট্যুরিজমের বিরোধী নয়। সেন্টমার্টিন প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা। এখানে অধিকাংশ স্থাপনার পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। স্থানীয়দের আরো সচেতন হওয়া দরকার। সেন্ট মার্টিন ঘিরে রেসপন্সিবল ট্যুরিজম ডেভেলপ করতে হবে। দক্ষ ট্যুর গাইড তৈরি হলে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নয়ন হবে।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দা মাসুমা খানম। এর আগে সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ সংরক্ষণ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ ও কক্সবাজারের প্রজেক্ট ম্যানেজার মাহতাবুল হাকিম।
কর্মশালায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু তাহের, মুহাম্মদ আলী জিন্নাত, সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান, দীপক শর্মা দিপু ও স্কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর।
কর্মশালায় কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. গিয়াস উদ্দিন, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সোলাইমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরওয়ার আলম, উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব আবু জাফর রাশেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম, টুয়াক সভাপতি আনোয়ার কামাল ও সাধারণ সম্পাদক একেএম মুনীবুর রহমান টিটুসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী ও অংশীজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের বন, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা,প্লাস্টিক পণ্য বর্জন,কমিউনিটি বেইজড পর্যটনসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।