ksrm-ads

১৬ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

সেয়ানে সেয়ানে লড়াই আজ

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক»

ব্রিটিশ শাসনামল থেকে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের লড়াই চলে আসছে চট্টগ্রামের বলী খেলায়। এ লড়াই কৌশলের। পেশীশক্তি আর বাহুবল দিয়েকৌশলে কুপোকাত করতে পারলেই জয়ী হবে কুস্তিগির। আজ লালদিঘীর মাঠ সংলগ্ন জহুর হকার্স মার্কেটের পঞ্চমুখ মোড়েই সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হবে। চট্টগ্রামের এই আয়োজন দেখবে সারাবিশ্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। দুপুর দুটোয় হবে ফাইনাল বাউট। রমজানের কারনে এবার বলীর অংশগ্রহন অনেকটা কমে গেছে। চট্টগ্রামের রেওয়াজ হিসেবে তথা ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বণেদী ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বারের বলী খেলার আকর্ষণ সারা বিশ্বজুড়ে। তবে করোনার কারনে ২০১৯ এর পর দু’বছর হয়নি এই আয়োজন।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার ১৯০৯ সালে সর্বপ্রথম এ মেলার আয়োজন করেন ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে। এ উপলক্ষে শুধু মেলাই নয় বলী খেলার আয়োজনও সামান তালে চলে আসছে। প্রতিবছর ১২ বৈশাখে বলী খেলার আয়োজন করা হয়। ১৯০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এই আয়োজনের ১১৩ তম আয়োজন আজ। তবে এবার এই আয়োজন লালদিঘী মাঠে হচ্ছেনা। কারন ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান আর বীর বাঙ্গালীর ৬ দফা কর্মসুচীর আদলে লালদিঘী মাঝে ৬দফা কর্মসূচীর মঞ্চ তৈরী হচ্ছে।

আমারা জানি বাঙালির ঐতিহ্য শহুরে সংস্কৃতি থেকে উঠে আসেনি। উঠে এসেছে গ্রাম বাংলার মানুষের হালচাল থেকে। তাই গ্রাম বাংলা থেকেই বৈশাখী মেলার আয়োজন শুরু হলেও তা চট্টগ্রামেই বিশাল আকারে ঠেকেছে। ফলে শধু শহরের আনাচে কানাচে থেকেই নয় চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে বলীরা এ খেলায় অংশ নেয়। খেলাকে ঘিরে মেল হলেও এখন তা উল্টো অবস্থানে রয়েছে। তথা মেলার পরেই খেলা। তবে তিন দিনের মেলা বলা হলেও তা গড়াবে এক সপ্তাহ। এবার মেলা চাঁদ রাতেই থাকবে এমটি জানালেন, ঢাকা থেকে আসা মৃৎ শিল্প ব্যবসায়ী আনোয়ার।

চট্টগ্রামে শতবর্ষ পেরিয়ে বৈশাখ উপলক্ষ্যেজমে ওঠে মেলা। অজপাড়া গাঁয়ে যেমন মেলার আয়োজন করা হয় সেই মেলা চট্টগ্রামে ১২ বৈশাখের জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষ্যেই জমে উঠে। শততম পার হয়ে আরও ১২ বছর পেরিয়ে এবারের আয়োজনকে নিয়ে ১১৩ তম। মেলার সর্ববৃহৎ আকর্ষণ হচ্ছে আব্দুল জব্বারের বলী খেলা। চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের ১১৩তম বলী খেলা আজ সোমবার। এ খেলাকে ঘিরে চট্টগ্রামে তিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছে গত ২৪ এপ্রিল থেকে। গ্রাম বাংলার অজপাড়া গাঁয়ে তৈরি হস্তশিল্পের বিশাল সমাহার রযেছে এ মেলায়। আজ সেই কাঙ্খিত মেলার দ্বিতীয় দিন। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা তাদের পসরা নিয়ে গত শনিবার থেকেই এ চত্বরকে ঘিরে নিজেদের অবস্থান ঠিক করে নিয়েছে। সেইসঙ্গে সাজিয়ে নিয়েছে কালেকশনে থাকা পণ্য সামগ্রি।

মেলার আয়োজনকে ঘিরে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে রাস্তার দুধার। অতীতের ইতিহাস ভেঙ্গে আজ দুপুরেই ফাইানাল বাউট হবে রমজানের কারনে। হকার্স মার্কেটের মেড়েই বালি দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে মাটি থেকে প্রায় ৪/৫ফুট উঁচু মঞ্চ। এতেই লড়বে দেশের বরেণ্য অঞ্চল থেকে ছুটে আসা বলীয়ানরা। সাধারণ বাউট ও চ্যাম্পিয়ন বাউটে ১শরও বেশি প্রতিযোগী গত একদশক ধরে লড়ে আসছে। কক্সবাজারের দিদার বলী, কুমিল্লার আলি, রামুর আলম বলীরা অংশ নিবে এবারের আয়োজনে। এদিকে বলীরা ৫/৬ বছর ধরে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ পদক নিজেদের মধ্যে অনেকটা পালাবদলের মত ধরে রাখলেও গত ১০২তম আয়োজনে রেফারির বিরক্তির কারণে নক আউট হয়ে যায় কক্সবাজারের দিদার বলী।

তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলাকে ঘিরে দেশের উত্তরাঞ্চল ছাড়াও নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, মীরসরাই, সীতাকুন্ড, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার ও খাগড়াছড়ি থেকেও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ব্যবসায়ী নগরীতে আসতে শুরু করেছেন। কেউ খাবারের পসরা নিয়ে আবার কেউবা বসেছেন ঘটিবাটি আর রান্না ঘরের তৈজসপত্র নিয়ে। শিশুদের নজর কাড়তে বিচিত্র রকমের খেলনার চালান এসেছে কুমিল্লা ও নোয়াখালি থেকে। কাঠ ও বাঁশের তৈরি তৈজসপত্রের সরবরাহ নিয়ে তিন পার্বত্য অঞ্চল থেকে ছুটে এসেছে আদিবাসিরা। এদিকে, খাট পালং আলনা আর সেগুন কাঠের আসবাবপত্র রং বিহীন অবস্থায় রাঙ্গামাটি থেকে কয়েক ব্যবসায়ী যোগ দিয়েছেন এ মেলাকে ঘিরে। শহুরে ফার্নিচারের নক্সীর ছোঁয়া বা ডিজাইন পার্বত্য অঞ্চলের কারিগরদের মাঝে পুরোপুরি অর্জন নেই। তবুও চেষ্টার কমতি ছিল না পরিস্ফূটনে। এবারের সরবরাহে অনেকটা কৌশলী নকশার আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে কাঠের আসবাবপত্রে।

এদিকে, মৃৎ শিল্পের ফুলদানি, ছাইদানি, টেবিল বা ড্রয়িং রুমে আলোকসজ্জার ছাউনিসহ নানা ধরনের তৈজসপত্র স্থান পেয়েছে এ মেলায়। মনের মাধুরি মেশানো রংয়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে মৃৎ শিল্পে গড়া রূপসী সমাহারে। চোখ ধাঁধাঁনো নানা আইটেম দেখে আগেভাগে আসা ক্রেতাদের মাঝে গভীর আগ্রহ যেমন প্রকাশ পাচ্ছে তেমনি মেলা শুরুর আগেই বিক্রির অর্ডার দিচ্ছে নগরীর বিভিন্ন শপিং মলে থাকা দোকানীরা। এছাড়াও গৃহসজ্জার জন্য ছুটে আসছে তরুণী ও গৃহিনীরা।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ