ksrm-ads

৬ ডিসেম্বর ২০২৪

ksrm-ads

সৈকতে ‌‘নারী হেনস্তার’ ঘটনায় যুবক কারাগারে

Cox

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা নারীকে কান ধরিয়ে ওঠবস-মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। হেনস্তার শিকার নারী আরোহী ইসলাম বাদী হয়ে দুইজনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করেন (মডেল থানা মামলা নং-৪০/২৪)। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৫/৬ জনকে।

এরআগে শুক্রবার দিবাগত রাতে নারী হেনস্তার অভিযোগে ফারুকুল ইসলাম নামে এক যুবককে ডিবি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মামলার দায়েরের পর ফারুককে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি জাবেদ মাহমুদ।

গ্রেফতার ফারুকুল ইসলাম (২৮) চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতী বড়হাতিয়া ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মওলানা আব্দুল মাজেদের ছেলে। তিনি বর্তমানে কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন ‘কেএসএম ভিলায়’ বাস করছেন। মামলার অপর আসামি হলেন, মো. নয়ন রুদ্র। তিনিও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকার বাসিন্দা।

বাদি তার এজাহারে দাবি করেছেন, বাদিসহ হেনস্তার শিকার তিন চারজন তৃতীয় লিঙ্গের লোক প্রতিদিনের ন্যায় ১১ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সুগন্ধা সি-বিচ এলাকায় ঘুরতে যান। মামলার আসামি ফারুকুল ইসলাম নিজেকে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে বাদি ও তার বন্ধুরা কেন সৈকতে এসেছে, মানুষকে কেন হয়রানি করে’ এসব বলতে বলতে গালিগালাজ করতে ও মারতে থাকে। একপর্যায়ে আসামি ফারুক লাঠি দিয়ে আমাকে (বাদি) এবং আমার সাথে থাকা অন্ত:সত্বা প্রিয়া মনিকে উপর্যুপরি আঘাত করে। খুশি নামে অপরজনের কাপড় চোপড় টানা হেছড়া করে চরম শ্লীলতাহানি করে। এসময় প্রিয়া মনিকে কান ধরে উঠ-বস করিয়ে ভিডিও ধারণ করে এবং সে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। যা ব্যাপক ভাইরাল হয় ও পর্যটন এলাকা সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বাদি আরোহী ইসলাম আরো বলেন, কোন কারণ ছাড়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র দাবি করে কয়েকজন যুবক ১১ সেপ্টেম্বর রাতে আমি ও আমার বন্ধুদের উপর ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। আমি বারবার বলছিলাম ‘আমরা কক্সবাজার ঘুরতে এসেছি, কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আসিনি, তারপরও তারা আমাদের মারধর করে এবং আমার ফোনটি কেড়ে নেয়। পাশে টুরিস্ট পুলিশ থাকলেও তারা কাউকে বাঁধা দেয়নি। আমাকে মারতে মারতে তারা বলছে “তুমি ছাত্রলীগ, তোমাকে ছাত্রলীগের আন্দোলনে দেখা গেছে’। পুলিশের উপস্থিতিতে আমাকে যেভাবে হেনস্থা করেছে এটা কোন টুরিস্ট স্পট হতে পারে না। ঘটনার পর থেকে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি।

ডিবি ওসি জাবেদ মাহমুদ বলেন, সৈকতে এক নারীকে কান ধরিয়ে ওঠবস করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে চারদিকে সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ফারুকুল ইসলামকে শুক্রবার দিবাগত রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে হেনস্তার শিকার নারী মামলা করলে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ বলছে, কানধরে যাকে ওঠবস করানো হচ্ছে সে মেয়ে নয়, তৃতীয় লিঙ্গ।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন-এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম বলেন, এটা মেয়ে নয়, তৃতীয় লিঙ্গ। ওইদিন রাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের নামে কিছু যুবক পুলিশের অগোচরে সৈকতে এমন কান্ড ঘটিয়াছে। এভাবে আইন হাতে নেয়ার অধিকার কারও নেই। তারা পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারতো। পুলিশকে না জানিয়ে এমন ঘটনা আইনগত অপরাধ। পর্যটকদের নিরাপত্তায় পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে নারী হেনস্তার ঘটনায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন সমন্বয়করা। তারা বলেন, আইন হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কারও নেই। যে বা যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে পুলিশ।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কক্সবাজারের সমন্বয়ক জিনিয়া শারমিন রিয়া বলেন, ছাত্র আন্দোলনে কোথাও বলা নেই যে, আপনি আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন। আরোহীদের উপর যে নির্যাতন হয়েছে এটা কোন ছাত্রদের কাজ হতে পারে না। এটা অপরাধ।

শাহেদুল ওয়াহেদ শাহেদ নামে আরেক সমন্বয়ক বলেন, আমরা ছাত্ররা কোনভাবেই কাউকে বেধড়ক পিটাতে পারি না। আইন হাতে তুলে নিতে পারি না। আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে পারি। কেউ আইন বহির্ভূত কাজ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার সৈকতে ‌কয়েকজন নারীকে প্রকাশ্যে শারীরিক হেনস্থা ও নির্যাতনের একটা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর জেলা পুলিশ বিষয়টাকে গুরুত্বসহকারে এবং স্পর্শকাতর হিসেবে নিয়ে অভিযুক্ত যুবককে আটক করা হয়। ভিডিওতে যারা ছিল বাকিদেরও সনাক্তকরণের কাজ চলছে।

আরও পড়ুন