ksrm-ads

৬ নভেম্বর ২০২৪

ksrm-ads

উঁচুতে ফ্ল্যাগ টানিয়ে যাচ্ছে যাত্রী-খাদ্যপণ্য

স্বাভাবিক হচ্ছে সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌ-যাত্রা

সেন্টমার্টিন

বিকল্প পথেই স্বাভাবিক হচ্ছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌযান চলাচল। দীর্ঘ পক্ষকাল পর যাত্রী ও মালামাল বোঝাই ট্রলার ও স্পিডবোট বাঁধাহীন ভাবে যাতায়ত শুরু করেছে। ট্রলারের মাথায় উঁচুতে বাংলাদেশী ফ্ল্যাগ টানিয়ে অনায়াসে চলাচল করছে কাঠের সার্ভিস ট্রলার ও স্পীড বোটগুলো এমনটি জানিয়েছেন, সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।

চেয়ারম্যান মুজিবের মতে, রবিবার (৭ জুলাই) সকালে টেকনাফ ঘাট থেকে ২টি ট্রলার সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে দুপুরে দ্বীপে পৌঁছে। আর সেন্টমার্টিন থেকে যাত্রী নিয়ে ৪টি ট্রলার ও কয়েটি স্পিডবোট টেকনাফের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে বেলা সাড়ে ১২টায় পৌঁছায় টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ।

চেয়ারম্যান বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতের কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় প্রায় একমাস আগে। কিন্তু প্রশাসনের সহযোগিতায় বিকল্প পথে দুবার সেন্টমার্টিনে আসা-যাওয়া করে ট্রলার। পরবর্তী সাগর উত্তাল থাকায় বিকল্পপথও বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে রবিবার সকাল ৯টায় সেন্টমার্টিন জেটি থেকে যাত্রী নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা হয় প্রথম সার্ভিস ট্রলার। এরপর ৯টা ২০ মিনিট, সাড়ে ৯টা ও ৯টা ৪০ মিনিটে আরও ৩টি ট্রলার যাত্রী নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে সেন্টমার্টিন ছেড়ে যায়। এছাড়া যারা একটু দ্রুত পৌছাতে চেয়েছেন এমন যাত্রি নিয়ে একাধিক স্পিডবোট টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে নিরাপদে ট্রলার ও স্পিডগুলো টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পৌঁছেছে বলে খবর পেয়েছি। এসব নৌযানে দু’শতাধিক যাত্রী ছিল।

সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ জানান, জুন-জুলাই মাসে সাগর বেশি উত্তাল থাকে। এসময়ে সাগরে যাওয়া নিষেধ আছে। তবে আজ (রবিবার) একটু শীতল মনে হচ্ছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেন্টমাটিন জেটি থেকে দেড়শতাধিক যাত্রী বোঝাই এসবি সুমাইয়া, এসবি আল্লাহরদান, এসবি আল-নোমান নামের ট্রলার যাত্রা করে দুপুর ১২ টার দিকে শাহপরীরদ্বীপে এসে পৌঁছে।

তিনি আরো জানান, বেলা ১১টায় টেকনাফ থেকে এসবি আবরার হাফিজ, এসবি ওসমান গণি, এসবি রাফিয়া নামের এ তিনটি ট্রলারে শতাধিক যাত্রী, কয়েকশ গ্যাস সিলিন্ডার, চাল, ডালসহ কিছু খাদ্যপণ্য নিয়ে যাত্রা দিয়ে বিকেলে সেন্টমাটিন দ্বীপের জেটিতে পৌঁছে।

টেকনাফে অবস্থানরত স্পীড বোট সমবায় সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, সকালে তিনটি স্পিডবোটে ২৫জন যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন থেকে শহপরীরদ্বীপে পৌঁছেছে। শনিবারও সেন্টমার্টিন থেকে কয়েকটি স্পিডবোট যাত্রী নিয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পৌঁছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, নাফনদের মাঝখান দিয়েই নৌযানগুলো চলাচল করে আসছে। কিন্তু মিয়ানমারে সংঘাতের কারণে এখন সাগরে জোয়ার আসলে বাংলাদেশের কিনারা হয়ে নৌযানগুলো চলাচল করছে। বিজিবি প্রধানের পরামর্শ মতো, প্রতিটি নৌযানে উঁচু করে জাতীয় পতাকা টাঙানো হয়েছে। মিয়ানমারে সংঘাত বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত নাফনদের মাঝামাঝি স্থানের পরিবর্তে বাংলাদেশের কিনারা দিয়ে নৌচলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।

সার্ভিস ট্রলারে সেন্টমার্টিন হতে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ঘাটে পৌঁছানো আব্দুল্লাহ নামে এক যাত্রি বলেন, দীর্ঘদিন পর স্বাভাবিকভাবে ট্রলার করে টেকনাফ পৌঁছালাম। কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। আমরা যারা আগের মতো স্বাভাবিক ভাবে টেকনাফ আসতে পেরেছি তারা সবাই খুশি। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ, সামনের দিনগুলোতেও যেন এভাবে সবাই স্বাভাবিক যাতায়ত করতে পারি।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, স্বাভাবিক হচ্ছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে নৌযান চলাচল। এখন পর্যন্ত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন বিকল্প রুটে ছয়টি সাভিস ট্রলার ও বেশ কয়েকটি স্পিড বোট চলাচল করেছে। পূর্বের মতো যাচ্ছে খাদ্যপণ্য বোঝাই ট্রলার বিকেলে দ্বীপে পৌঁছে বলে খবর এসেছে। আশা করি, সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে আমরা এখনো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সংকটের অবসান না হওয়া পর্যন্ত টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌরুটের বিকল্প পথেই সবধরণের নৌযান চলাচল করতে বলা হয়েছে। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা এমন ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে।এরপরও চার দিকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে আমাদের।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জেরে ১ জুন বিকেলে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে রওনা হওয়া পণ্যসহ ১০ জন যাত্রীসহ এক ট্রলারকে লক্ষ্য করে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়। এরপর ৫ জুন সেন্টমার্টিনের স্থগিত একটি কেন্দ্রে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদের ফলাফল নির্ধারণের জন্য ভোট গ্রহণ হয়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফেরার পথে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্রলারকে লক্ষ্য করেও একই পয়েন্টে ফের গুলি করে। ৮ জুন আরও এক ট্রলারকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয় একই পয়েন্টে। সর্বশেষ ১১ জুন একটি স্পিডবোটকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ হয়। প্রতিটি গুলিবর্ষণের ঘটনাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলসীমায় ঘটেছে। গুলিবর্ষণের এসব ঘটনায় হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দ্বীপে খাদ্য সংকট ও জরুরি আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।

১২ জুন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের জরুরি সভায় বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে যাত্রীদের আসা-যাওয়া ও পণ্য নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৩ জুন থেকে টেকনাফের সাবরাং মুন্ডার ডেইল উপকূল ব্যবহার করে শুরু হয় যাত্রীদের আসা-যাওয়া। ১৪ জুন কক্সবাজার শহর থেকে দ্বীপে পণ্য নিয়ে যায় জাহাজ। আর বিকল্প পথ হিসেবে শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে সীমিত পরিসরে কিছু নৌযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ২২ জুনের পর থেকে সেটিও বন্ধ রয়েছে। শনিবার (৬ জুলাই) রাত হতে বৃষ্টিপাত বন্ধ হলে রবিবার সকাল হতে স্বাভাবিক নিয়মে সেন্টমার্টিনে নৌ-যান চলাচল শুরু করা হয়েছে।

আরও পড়ুন