বাংলাধারা ডেস্ক »
সেই বিভীষিকাময় রাতের কথা আজও ভুলতে পারেনি অনেকে। অন্য পাঁচটা দিনের মতোই ছিল সে দিনটি। কিন্তু রাতে জঙ্গিদের হামলায় ওলট-পালট হয়ে যায় সব কিছু। ভীতি ভর করে দেশবাসীর ওপর। প্রাণ হারায় ১৮ বিদেশীসহ অন্তত ২২ জন। বলছিলাম আজ থেকে তিন বছর আগে ঘটে যাওয়া গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ঘটে যাওয়া ট্রাজেডির কথা। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের নৃশংস জঙ্গি হামলার তৃতীয় বছর। এ হামলা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ও নৃশংস জঙ্গি হামলা ছিল।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় বন্দুকধারী জঙ্গিরা। ওই রাতেই তারা দেশি-বিদেশি মোট ২২ জনকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে জাপানের নাগরিক, আর্জেন্টিনার নাগরিক, ইতালির নাগরিক ও ভারতের নাগরিক ছিল। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন ঘটনার সময় হোলি আর্টিজানে জিম্মি হয়ে পড়া ফাইরুজ মালিহা ও তাহানা আসমিয়া। তারা আদালতে নিজেদের জবানবন্দিতে সেই ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দেন। ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট আদালত তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করে।
জবানবন্দিতে তারা জানায়, লোকজনকে গুলি করে মেরে ফেলার পর লাশগুলো কুপিয়েছিল জঙ্গিরা। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। ফাইরুজ মালিহার জবানবন্দি: দুই বন্ধু ফাইরুজ মালিহা ও তাহানা তাসমিয়া ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে যান। সেখানে ছিলেন ফাইরুজের বন্ধু তাহমিদ।
জবানবন্দিতে ফাইরুজ মালিহা বলেন, ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে প্রথমে একটা গুলির আওয়াজ পান। প্রথমে তারা ভেবেছিলেন, এটা বোধ হয় পটকার শব্দ। এর কিছুক্ষণ পর তিন থেকে চারজন যুবক হোলি আর্টিজানে ঢোকার প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকছেন। সবার কাঁধে একটা করে ব্যাগ। এর মধ্যে একজন দ্রুত এগিয়ে সামনে যান। যে টেবিলে চার-পাঁচজন বিদেশি বসেছিলেন সেখানে তারা গুলি করেন। তারপর তাদের দিকে বন্দুক তাক করে চলে আসেন। তখন তিনি ও তাহমিদ বাংলায় তাদের কাছে প্রাণভিক্ষা চান।
ছেলেটি ইংরেজিতে তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তারা মুসলিম কি না। হামলা চলাকালে জঙ্গি নিবরাস এসে তাদের ভেতরে যেতে বলেন। তখন তারা না যেতে চাইলে নিবরাস জানান, তাদের কোনো ভয় নেই। ভেতরে আরও একটি পরিবার আছে। তখন তারা ওই ঘরে যান। তাহমিদ তাদের টেবিলের নিচে লুকাতে বলেন। পরে তারা টেবিলের নিচে চলে যান। সেখান থেকে তারা দেখেন, জঙ্গিরা একজন বিদেশি নারীকে শৌচাগার থেকে টেনে বের করে এনে গুলি করছে। তারপর ওই নারীকে কোপাতে থাকে। প্রায় ৩০ মিনিটের মতো তারা সেখানে লুকিয়ে থাকেন। তারপর নিবরাস এসে তাদের মাথা নিচু করে চেয়ারে বসতে বলেন। সেই সময় জঙ্গিরা রান্নাঘরের দরজা ভাঙার চেষ্টা করে কিন্তু পারছিল না।
জঙ্গিরা ফাইরুজ মালিহাকে বলে, তিনি যেন পুলিশকে ফোন দিয়ে বলেন, এখানে যেন পুলিশ আক্রমণ না করে। আক্রমণ করলে সবাইকে তারা মেরে ফেলবে। এ ঘটনা তিনি মুঠোফোনে মাকে জানান। হাসনাত করিম তাঁর চাচাকে ফোন দেন। এরপর রেস্টুরেন্টের লাইট বন্ধ করে দেয়। জবানবন্দিতে ফাইরুজ মালিহা আরও বলেন, একজন জঙ্গি বেকারি থেকে কেক এনে দিয়ে সেগুলো খেতে বলে। তখন দুই জঙ্গি আবারও বলে, তারা আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না। তবে ঝামেলা করলে আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে না। ওপর থেকে একজন জঙ্গি নেমে আসে। রান্নাঘরের দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। কিন্তু না পেরে টেবিল ভাঙার চেষ্টা করে। লাশগুলো কোপাতে থাকে। এ সময় নিবরাসও ওপরে চলে যায়। অন্য একজন নেমে আসে।
তাহানা তাসমিয়ার জবানবন্দি: তাহানা জবানবন্দিতে বলেন, জঙ্গিদের কথামতো সেদিন তারা মাথা নিচু করে বসেছিলেন। রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে জঙ্গিরা লাইট বন্ধ করে দেয়। তিনি বলেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে মানুষকে কোপানোর শব্দ পাচ্ছিলাম। গুলি করে খুনের পরও লাশ কুপিয়েছিল জঙ্গিরা উল্লেখ্য, হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার সময় রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন।
পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। পরে পুলিশ ১৮ বিদেশিসহ ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একজন রেস্তোরাকর্মী।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/টিএম /বি