বাংলাধারা ডেস্ক »
দীর্ঘ ২ মাস ধরে কূপ খনন করার পর অবশেষে দিনাজপুরের হাকিমপুরে প্রথম লোহার আকরিকের (ম্যাগনেটাইট) খনি আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ভূ-তাত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের (জিএসবি) কর্মকর্তারা । সেখানে ভূগর্ভের ১ হাজার ৭৫০ ফুট নিচে ৪০০ ফুট পুরুত্বের লোহার একটি স্তর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (১৮ জুন) অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর সকাল সাড়ে ১১ টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তারা।
খননকাজে নিয়োজিত জিএসবির উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মাসুম জানিয়েছেন, বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে লোহার খনি আবিষ্কার করা হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের লোহার মান ৬৫ শতাংশের ওপরে। আর কানাডা, চীন, ব্রাজিল, সুইডেন ও অস্ট্রিলিয়ার লোহার মান ৫০ শতাংশের নিচে। জয়পুরহাট বিসিএসআইআর পরীক্ষাগারে পরীক্ষায় এই তথ্য পাওয়া গেছে। হাকিমপুরের ইসবপুরে লোহার খনি আবিষ্কার বাংলাদেশে এটিই প্রথম। যা দেশের জন্য একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। যার ব্যপ্তি ৬-১০ স্কয়ার কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে সোনার অস্তিত্বের পাশাপাশি কপার, নিকেল ও ক্রুমিয়ামেরও উপস্থিতি রয়েছে। ১১৫০ ফুট গভীরতায় চুনাপাথরের অস্তিত্বেরও সন্ধান পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, এর আগে ভূ-তাত্বিক জরিপ অধিদপ্তর ২০১৩ সালে এই গ্রামের ৩ কিলোমিটার পূর্বে মুশিদপুর এলাকায় কূপ খনন করে খনিজ পদার্থের সন্ধান পেয়েছিল। সেই গবেষণার সূত্র ধরে দীর্ঘ ৬ বছর পর চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল থেকে ইসবপুর গ্রামে কূপ খনন শুরু করা হয়। এরপর ১৩৮০-১৫০০ ফুট গভীরতা পর্যন্ত খননকালে সেখানে আশার আলো দেখতে পাওয়া যায়। অবশেষে দীর্ঘ চেষ্টার ফলে ১৭৫০ ফুট গভীরতায় খনন করে লোহার খনির আবিষ্কার করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৪০০ ফুট পুরুত্বের লোহার আকরিকের এই স্তরটি পাওয়া গেছে। এই অঞ্চলে ৬০ কোটি বছর আগে সমুদ্র ছিল। সেই কারণে এখানে জমাট বাঁধা আদী শীলার ভিতরে লোহার আকরিকের এই সন্ধান পাওয়া যায়।
জিএসবির উপ-পরিচালক (ড্রিলিং ইঞ্জিনিয়ার) মো. মাসুদ রানা জানান, গত ১৯ এপ্রিল থেকে ইসবপুর গ্রামে কূপ খনন শুরু হয়। ৩০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ একটি দল ৩ শিফটে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
ইসবপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, আমরা জানতে পারলাম এখানে লোহার খনি পাওয়া গেছে। এখান থেকে লোহা উত্তোলন করা হলে এখানকার মানুষদের জীবনমান পাল্টে যাবে। কর্মসংস্থান হবে স্থানীয় মানুষের। দেশের জন্যও লাভজনক হবে। এমনই আশায় বুক বাঁধছেন সর্বস্তরের মানুষ। তাই গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারের কাছে খনি বাস্তবায়নে জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলেন, আমাদের মাটির নিচে যে সম্পদটুকু রয়েছে সেটাকে যথাযথ ব্যবহারের জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে এ ধরনের অসংখ্য জরিপ করছেন। সেটা গ্যাসের জন্য করছেন, কয়লা ও পাথরের জন্য করছেন, বিভিন্ন সম্পদের জন্য ড্রিলিং করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর ইতোমধ্যে যে লোহার খনি আবিষ্কার করেছে তা দেশের অগ্রগতির পাশাপাশি এলাকাবাসীর জীবনমানেরও উন্নয়ন হবে।
জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইসবপুর গ্রাম। এই গ্রামের কৃষক ইছহাক আলীর কাছ থেকে ৫০ শতক জমি ৪ মাসের জন্য ৪৫ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে খনিজ পদার্থের অনুসন্ধানে কূপ খনন শুরু করে ভূ-তাত্বিক জরিপ অধিদপ্তর।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/টিএম