হাটহাজারী প্রতিনিধি »
দক্ষিন এশিয়ার একমাত্র মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার অপেক্ষায় মা মাছ। এদিকে মা মাছ ডিম ছাড়বে এ অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন হালদা পাড়ের পোনা সংগ্রহকারীরা। হালদা নদীতে মা মাছের আনাগোনা শুরু হলেও লাগাতার বজ্রসহ বৃষ্টি, শীতল আবহাওয়া ও পাহাড়ি ঢল না থাকায় ডিম ছাড়ছে না। হালদা নদী দেশে স্বাদু পানির কার্পজাতীয় মাছের প্রধান প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র।
পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে হালদা নদী চট্টগ্রামের রাউজান, হাটহাজারী ফটিকছড়ি উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রবাহিত হয়ে মিশেছে কর্ণফুলী নদীতে। তবে ফটিকছড়ি উপজেলায় আংশিক পড়েছে হালদা নদী প্রতি বছর মা মাছ এপ্রিল থেকে জুন মাস বজ্রসহ ভারীবর্ষণের সময় হালদায় ডিম ছাড়ে। তাই এ সময়টাতে হালদা পাড়ের ব্যস্ততার সীমা নেই। ডিম আহরণের জন্য তারা নানান প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। কেউ নতুন নৌকা তৈরি করেছেন, আবার কেউ নৌকা মেরামতে করেছেন, কেউ কেউ মাটির কুয়া তৈরি করেছেন ডিম থেকে রেণু তৈরির জন্য।
মাছুয়াঘোনা মৎস্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ডিম সংগ্রহকারী শফিউল আলম বলেন, হালদা নদী আমাদের কাছে মায়ের মতো। এ নদীতে প্রতি বছর এপ্রিলের শেষের দিকে এবং মে মাসে মা মাছ ডিম ছাড়ে। এ সময়টা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। আগ্রহ আর উদ্দীপনার শেষ থাকে না কখন মা মাছ ডিম ছাড়বে। নদীকে রক্ষা করতে আমরা সর্বদা সচেষ্ট থাকি। আশাকরি বৃষ্টি হলে এবার আমরা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি ডিম সংগ্রহ করতে পারবো।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হুদা রনি জানান, ৯৮ কিলোমিটারের জুড়ে বিস্তিন্ন হালদা। মুলত মা মাছ ডিম ছাড়ে ১৬ কিলোমিটার তার বেশির ভাগ হাটহাজারী এলাকায় ডিম ছাড়ে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ডিম বেশী পাওয়ার আশা করছি।হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার জন্য মার্চ থেকে মাছ নদীতে অবস্থান করছে। আশা করি, এবার মাছ রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছাড়বে।
জেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্য মতে, হালদার দুই পাড়ের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৬০০ জন ডিম সংগ্রহকারী রয়েছেন, যারা প্রতি মৌসুমে হালদা থেকে ডিম সংগ্রহ করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরীয়া বলেন, প্রাকৃতিক ভাবে এপ্রিল থেকে জুন মাসে পূর্ণিমা যেকোন সময় বা আমবশ্যা পর্যন্ত বড় মাছ জো বজ্র বৃষ্টিতে ডিম ছাড়ে। এর মধ্যে তিন জো চলে গেছে। ৪র্থ জো টি ২৪মে থেকে ২৮মে পর্যন্ত। এটি হবে পর্ণিমাতে। এই জোতে ডিম ছাড়ার সম্ভবনা আছে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রহুল আমিন বলেন, প্রজনন মৌসুম সামনে রেখে মা-মাছ শিকারিরা তৎপর। তাই আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালে মে পর্যন্ত ১৭৪টি অভিযান পরিচালনা করি। এ অভিযান একলক্ষ ১৫ হাজার ঘনফুট বালু,৩লক্ষ ২হাজার ৫শত মিটার জাল জব্দ করা হয়। ১৫টি বালু তোলার ড্রেজার, ১টি ট্রাক্টর, সারে ৩কিলোমিটার বালু উত্তোলনের পাইপ, ৫৩টি ইন্জিন চালিত নৌকা ধংস ও ৬টি নৌকা জব্দ করা হয়। প্রায় ১লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় এবং ৩জনকে কারাদন্ড প্রদান করা হয়। এছাড়াও আমাদের উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথ হালদা পরিবেশ রোধে উদ্দ্যেগে এশিয়া পেপার মিল ও ১শত মেগাওয়াট পাওয়ার পিকিং প্ল্যান কেন্দ্র বন্ধ করা হয়। প্রতিদিন আমাদের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, হালদা নদী থেকে ২০১৮ সালে ২২ হাজার কেজি এবং ২০১৯ সালে ১০ হাজার কেজি ডিম আহরণ করা হয়। আর ২০২০ সালে ২৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করে রেকর্ড করেছে ডিম আহরণকারীরা।
বাংলাধারা/এফএস/এআর