ksrm-ads

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ksrm-ads

হাসিল আদায় ও প্রশাসনের নীরবতা: কর্ণফুলীতে ৮০ ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ প্রকাশ

হাসিল

‘বাজারটি যদি সরকারি ইজারায় ডাক হয়, তবে আমরা নিয়মিতভাবে সরকারি কর (হাসিল) পরিশোধ করব এবং কোনোভাবেই সরকারি মহাসড়কে ভাসমান বাজার বসাবো না’ এমনটাই জানিয়েছেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ক্রসিং এলাকার ৮০ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও তাঁদের সঙ্গে থাকা প্রায় ২০০ কর্মচারী।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও র‍্যালিতে এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা শিকলবাহা ক্রসিং বাজারের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানান এবং প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রতি ন্যায়বিচারের আহ্বান জানান।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন এবং বাঁচা মিয়া সওদাগর বলেন, ‘শিকলবাহা ক্রসিং বাজার দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এখানে চলছে। এই বাজারের ওপর নির্ভরশীল অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির সুযোগ পান। বাজারটি বন্ধ হয়ে গেলে কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে পড়বে।’

তাঁরা আরও বলেন, ‘ক্রসিং বাজারের আশেপাশে দুই কিলোমিটারের মধ্যে অন্য কোনো হাটবাজার নেই। তাই বাজারটি চালু রাখার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।’

ব্যবসায়ী সেকান্দর এবং আলী আজগর অভিযোগ করেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের অধীনস্থ তহসিলদার অফিসের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কাছ থেকে দৈনিক ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত হাসিল আদায় করলেও কোনো রশিদ প্রদান করতেন না। তারা দাবি করতেন, এই অর্থ ইউএনও বরাবর জমা দিতেন।’

তবে সচেতন মহল জানিয়েছে, বাজারটি ইজারাবিহীন, যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ভাসমান হওয়ায় এর কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশেই কলেজ বাজার, ফকিরনিরহাট এবং শান্তিরহাট বাজারের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও কিছু কুচক্রী মহল এই বাজারটি সড়কে বসাতে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন।

মহাসড়ক আইন লঙ্ঘন এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি
মানববন্ধনে উপস্থিত অনেকে জানান, মহাসড়কে বাজার বসানোর ফলে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়। পথচারী এবং যাত্রীদের দুর্ভোগ ছাড়াও রাস্তা পারাপারের সময় ঘটা দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। কয়েকদিন আগে শিকলবাহা ক্রসিং এলাকায় একটি বাস ও পিকআপের সংঘর্ষে দুই ব্যক্তি নিহত হন এবং আরও কয়েকজন আহত হন।

বর্তমান মহাসড়ক আইন অনুযায়ী, মহাসড়কের ১০ মিটারের মধ্যে কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী অবকাঠামো তৈরি কিংবা ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি নেই। তবে স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ এই নিয়ম কার্যকর করতে দীর্ঘদিন ব্যর্থ হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, ব্যবসায়ীদের মানববন্ধনের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে এবং বাজারটি স্থানান্তরিত করার সম্ভাব্য বিকল্প নিয়ে কাজ চলছে।

অতীতে কারা হাসিলের নামে টাকা আদায় করতেন এসব জানতে কর্ণফুলী উপজেলা অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত ও সহকারি কমিশনার ভূমি (এসিল্যাণ্ড) মিজ রয়া ত্রিপুরার মুঠোফোনে কল করেও ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাদি উর রহিম জাদিদ বলেন, ‘মহাসড়কে বাজার বসানোর কোনো নিয়ম নেই। তাই বাজারটি উচ্ছেদ করা হয়েছে। ইজারা ছাড়া বাজার বসানো যাবে না। আমি বিষয়টি খোঁজ খবর নিচ্ছি।’

মানবন্ধনে উপস্থিত কর্ণফুলীর শিকলবাহা ক্রসিং বাজার এলাকার মহিউদ্দিন, বাঁচা মিয়া, আবুল হাসেম, সেকান্দর, আলী আজগর, রুবেল, নুর মিয়া, ফারুকসহ প্রায় শতাধিক গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।

শিকলবাহা ক্রসিং বাজারের মতো ভাসমান বাজারটি স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং প্রশাসনিক উদ্যোগ। এতে একদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা স্থায়িত্ব পাবেন, অন্যদিকে মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী এবং যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ