ksrm-ads

২৫ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

হিসাবরক্ষক থেকে যেভাবে ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ সীতাকুণ্ডের ইকবাল

নিজস্ব প্রতিবেদক »

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সার কারখানার সহকারী হিসাবরক্ষক খোন্দকার মুহম্মদ ইকবালের (৪২) বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে অর্থ আত্মসাতের। এ ঘটনায় চার বছর আগে সার কারখানা থেকে চাকরিচ্যুত করা হয় তাকে। জানা যায়, হিসাবরক্ষক ইকবাল তার স্ত্রী হালিমা আক্তারের নামে নামমাত্র দুটি কোম্পানি খুলে ভুয়া বিল ও রসিদ জমা দিয়ে সার কারখানা প্রকল্প থেকে ৩৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

জানা গেছে, খোন্দকার ইকবালের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে। তিনি সর্বশেষ ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানার সহকারী প্রধান হিসাবরক্ষক ছিলেন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি মামলায় বলা হয় ইকবাল শাহজালাল দুটি কোম্পানির নামে বেশ কিছু ভুয়া বিল ও রসিদ জমা দিয়ে সার কারখানা থেকে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

২০০৫ সালে বিসিআইসির প্রকল্প শাহজালাল সার কারখানায় সহকারী হিসাবরক্ষক পদে চাকরি নিয়েছিলেন। এরপর ১৪ বছরের চাকরি জীবনে তিনি সর্বশেষ ওই কারখানার সহকারী প্রধান হিসাবরক্ষক ছিলেন। এই সময়ে ৯১টি গাড়ি, ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, দুটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন খোন্দকার মুহম্মদ ইকবাল।

সিআইডির দাবি, তারা গত বছরের জুলাই থেকে ১০ মাস অনুসন্ধান করে এই দম্পতির অপরাধলব্ধ আয়ের তথ্য পেয়েছে। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, খোন্দকার ইকবাল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

জানা যায়, গত বছরের জুনে র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হন মুহম্মদ ইকবাল ও তার স্ত্রী হালিমা আক্তার (৪০)। তখন তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে র‌্যাব। পরে র‌্যাবের অভিযোগের ভিত্তিতে এবিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডি। অনুসন্ধান শেষে তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেন সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) সোহানুর রহমান।

সোহানুর রহমান বলেন, খোন্দকার মুহম্মদ ইকবাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া বিল ও রসিদ জমা দিয়ে বিসিআইসির শাহজালাল ফার্টিলাইজার প্রকল্পের ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ ২৭ হাজার ৮৫১ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এসব ভুয়া বিল ও রসিদ তৈরি করা হয়েছে আলাদা দুটি প্রতিষ্ঠান টিআই ইন্টারন্যাশনাল ও নুসরাত ট্রেডার্সের নামে। মূলত ইকবালের স্ত্রী হালিমা আক্তারের নামেই খোলা হয় এই দুটি প্রতিষ্ঠান।

বিসিআইসির মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) আ ন ম শরীফুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে খোন্দকার মুহম্মদ ইকবালকে চাকরিচ্যুত করে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ। পরে তার বিরুদ্ধে মামলাও করা হয় । বর্তমানে ইকবাল ও তার স্ত্রী কারাগারে আছে ।

জানা গেছে, এই দম্পতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে ১৬টি মামলা করেছে দুদক। সিআইডির মামলায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইকবাল ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৯১টি গাড়ির নিবন্ধন রয়েছে।

সিআইডির অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও মামলার বাদী এসআই সোহানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এই দম্পতির মালিকানায় থাকা মাইক্রোবাস, কার, পিকআপসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন টিআই ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে রেন্ট-এ–কারের ব্যবসা করা হয়। এ ছাড়া তাদের ঢাকার শান্তিনগরে কয়েকটি ফ্ল্যাট ও ময়মনসিংহে জমি রয়েছে। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে ওয়ান পয়েন্ট ফার্মা অ্যান্ড ডিপার্টমেন্টাল স্টোর নামের তিনটি চেইন শপ রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে সিদ্ধেশ্বরীতে ওয়ান পয়েন্ট ফার্মা অ্যান্ড ডিপার্টমেন্ট স্টোর নামে দুটি দোকানের খোঁজ পাওয়া যায়। ডিপার্টমেন্ট স্টোরের ব্যবস্থাপকের সাব্বির হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তিন বছর আগে খোন্দকার ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী তিনটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খুলে ব্যবসা শুরু করেন। একটি দোকান মাস চারেক আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সাব্বির হোসেন আরও বলেন, এ দুটি প্রতিষ্ঠানের বর্তমানে কোনো অফিস নেই এবং গাড়িগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া রয়েছে। গাড়ির মধ্যে রয়েছে কোস্টার, মাইক্রোবাস, কার ও পিকআপ। তবে গাড়ির সংখ্যা কতটি, সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি সাব্বির হোসেন।

অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, বিসিআইসির সহকারী হিসাবরক্ষক খোন্দকার ইকবালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আরও অনেক কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। কারও একার পক্ষে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ভুয়া বিলের মাধ্যমে এত কোটি টাকা বের করে নেওয়া সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন