চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিতে বা জোয়ারের পানিতে অরক্ষিত খাল, নালা, ড্রেনে পড়ে প্রাণহানি ঠেকাতে এধরনের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে বৃহস্পতিবারের মধ্যে তালিকা প্রণয়ন ও জমাদানের নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
রবিবার (২০ এপ্রিল) নগর ভবনে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রকৌশল ও পরিচ্ছন্ন বিভাগের সাথে আয়োজিত এক বিশেষ সভায় মেয়র বলেন, এই দুঃখজনক ঘটনায় আমরা কেউ দায় এড়াতে পারি না। একজন নগরবাসী হিসেবে ও মেয়র হিসেবে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে আমাদের কাজ করতে হবে। মাঠপর্যায়ে কর্মরত প্রকৌশলী, পরিচ্ছন্ন বিভাগের জোন প্রধানবৃন্দ আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে স্ব-স্ব আওতাধীন ওয়ার্ডের কোথায় ম্যানহোলের ঢাকনা নেই, কোথায় স্ল্যাব খোলা আছে, কোথায় উন্মুক্ত নালা-খাল আছেতা চিহ্নিত করে রিপোর্ট দিবেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ খাল বা নালাগুলোতে আপাতত বাঁশ দিয়ে ঘিরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পরে স্থায়ী ঘেরাও দেয়া হবে। মেয়র আরও বলেন, “আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনে বহদ্দারহাটে চসিকের মার্কেট ভেঙে দিয়েছি, যেখানে থেকে বছরে প্রায় ১২-১৪ লাখ টাকার রাজস্ব আসতো। জনগণের কষ্ট লাঘবই আমাদের অগ্রাধিকার।”
কত মৃত্যুতে চসিকের এমন উদ্যোগ?
অরক্ষিত নগরের প্রায় খালের পাড়, নেই কোনো ধরনের রেলিং। প্রায় নালায় স্ল্যাব থাকে ভাঙা, আবার কোনো কোনো জায়গায় একেবারে থাকেই না। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হলে সড়ক কোথায় আর খাল-নালা কোথায়, তা বোঝার উপায় থাকে না। ফলে গত চার বছরে খাল ও নালায় পড়ে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে ১৬৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৫৭টি খাল আছে চট্টগ্রাম নগরীতে। আর নালা আছে ৯৭২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। এর মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩৬টি খাল সিডিএ’র আওতায় রয়েছে, অপর ২১টির দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। সিডিএর আওতায় নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে ২৩টিতে। অন্যগুলোর কাজ এতদিন অর্থ সংকটে করতে না পারলেও সম্প্রতি বরাদ্দ পাওয়ায় শিগগির কাজ শুরু বলে জানা গেছে।
তবে সিডিএ কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামের খাল ও নালাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ করছে সিডিএ। তবে দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বয় না থাকায় ভোগান্তি তৈরি হচ্ছে।
উল্লেখ্য সর্বশেষ গেলো শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রাত ৮টায় নগরীর চকবাজারের কাপাসগোলায় অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালের পড়ে ছয় মাস বয়সী শেহরিজ এক শিশুর মৃত্যু হয়। শনিবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে চাক্তাইখালে ভেসে ওঠে তার মরদেহ। অথচ এ খালের পাড়ে বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী রেলিং দেয় স্থানীয়রা। কিন্তু ধীরে ধীরে ওই রেলিং ভেঙে গেলে আর দেওয়া হয়নি।
এর আগে ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর মোড়ে সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমেদ বৃষ্টির সময় নালায় পড়ে নিখোঁজ হন। একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় হাঁটার সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া উন্মুক্ত নালায় পড়ে মারা যান। ওই নালার ওপর কোনো ধরনের স্ল্যাব ছিল না। ২০২২ সালে ষোলশহর এলাকায় নালায় পড়ে নিখোঁজ হয় শিশু কামাল। তিনদিন পর মুরাদপুর থেকে উদ্ধার হয় তার মরদেহ। ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট আগ্রাবাদ রঙ্গীপাড়ায় উন্মুক্ত নালায় পড়ে যায় ১৮ মাসের শিশু ইয়াছিন আরাফাত। ১৭ ঘণ্টার চেষ্টায় উদ্ধার হয় তার মরদেহ ফায়ার সার্ভিস। ২০২৪ সালের জুনে গোসাইলডাঙ্গায় সাত বছরের শিশু সাইদুল ইসলাম নালায় পড়ে নিখোঁজ হয়। পরদিন পাওয়া যায় তার মরদেহ।
এএস/বাংলাধারা