সুমন বৈদ্য »
ডন সিনেমার সেই ভর্দান চরিত্রের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই! যে কিনা গোটা সিনেমায় ডনকে রীতিমতো নাকানিচুবানি খাইয়েছিল। পার্শ্ব চরিত্রে খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন অভিনয়ে আগ্ৰহ থাকলে যেকোনো পজিশন থেকে ভালো করা যায়। শুধু ভর্ধান চরিত্র নয়, এইরকম আরো বিভিন্ন গল্পে নায়ক না হয়েও পার্শ্বচরিত্রে দক্ষতার সাথে অভিনয় করে সাধারণ দর্শক থেকে ও সমালোচকদের আলাদা নজরে থাকেন তিনি সবসময়। এই অভিনেতা আর কেউ নন, বলা হচ্ছে- অভিনেতা বোমান ইরানির কথা। যার কিনা অভিনয় ক্যারিয়ারে ১০০ সিনেমা পূর্ণ হলো। কিন্তু আজকের এই অভিনেতার অভিনেতা হওয়ার পিছনে রয়েছে এক অন্যরকম গল্প। তাকে নিয়ে থাকছে আজকের বিশেষ পর্ব।
১৯৫৯ সালে মুম্বাইয়ের একটি পারসি পরিবারে জন্ম তার। কিন্তু এই ছোট্ট বয়সে তাকে মুখোমুখি হতে হয় স্নায়বিক সমস্যার সামনে। এডিএইচডিসহ (অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার) নানা ধরনের স্নায়বিক সমস্যা ভুগেছেন। ধীরে ধীরে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠেন এবং পড়াশোনা করা অবস্থায় তাজ হোটেলে কাজ নেন। হ্যা, তাজ হোটেলে। কিন্তু কেউ কি কল্পনা করেছিল সেইদিনের তাজ হোটেলে কর্মরত এক ওয়েটার আজ কিনা বলিউডের বুকে রাজত্ব কায়েম করবে।
সেই তাজ হোটেলে টানা দুই বছর ওয়েটার ও রুম সার্ভিসে কাজ করেছেন বোমান ইরানি। পরে পদোন্নতি পেয়ে হোটেলের রুফটপ রেস্তোরাঁর ওয়েটার হন। কিন্তু এই অভিনেতার অভিনয়ে আসার আগে আরো একটি শখ ছিল, সেটি হচ্ছে ছবি তোলা। তাই তাজ হোটেলে কাজের সময় যে টিপস পেতেন, সেটি জমিয়ে ক্যামেরা কেনেন। শুরুর দিকে অবশ্য স্কুলের ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার ছবি তুলতেন। কিন্তু কাজের প্রতি যাদের জেদ তাদের আর আটকায় কে! ঠিক করলেন ছবি তুললে ভালোভাবেই তুলবেন। যুক্ত হবেন বড় কোনো কাজের সঙ্গে। এরপরই কপাল খুলে যায়, সুযোগ মেলে মুম্বাইয়ে বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপের ছবি তোলার।
কিন্তু এই ছবি তোলার পাশাপাশি তার নেশা ছিল অভিনয়ের প্রতি, যা স্কুল ও কলেজ থেকে তার এই আগ্ৰহ কাজ করতো। কিন্তু এতো আগ্ৰহ থাকলেও নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। শেষমেষ আশির দশকের শুরুর দিকে অভিনয়ে তালিম নিয়ে থিয়েটারে নাম লেখান। অবশেষে ২০০০ সালে পর্দায় আর্বিভাব ঘটে এই অভিনেতার, শুরুতে বিজ্ঞাপন দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ২০০৩ সালে ‘ডরনা মানা হ্যায়’ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে নজর কাড়েন।
এই ২০০৩ সাল, তার জীবনে ছিল সবচেয়ে বড় আর্শীবাদ। একই বছরে রাজ কুমার হিরানির পরিচালিত ‘মুন্না ভাই এমবিবিএস’ সিনেমায় ডাক্তার আস্থানা চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক মহলে সবচেয়ে বড় পরিচিতিটা পান। এক ছবি দিয়েই হয়ে উঠেন রাজ কুমার হিরানির প্রিয় মুখ। একে একে রাজ কুমার হিরানির সাথে ‘লাগে রাহো মুন্না ভাই’, ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘পিকে’, ‘সঞ্জু’তেও দেখা যায় তাঁকে।
শুধু রাজ কুমার হিরানিই নয়, ফারহান আক্তার, সাজিদ খান, সুভাষ কাপুর সব পরিচালকের নজরে চলে আসেন তিনি। শেষে এমন অবস্থা হয়ে গিয়েছিল যে তার নামের থেকেও পর্দায় অভিনয় করা নামেই সাধারণ মানুষ চিনতো তাকে। ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর ডক্টর বিরু ওরফে ‘ভাইরাস’ , ‘হাউজফুল’ সিরিজের ‘বাটুক পাটেল’, ‘জলি এলএলবি’ এর উকিল রাজপাল অথবা ‘পিকে’র সেই সাংবাদিক চেরি বাজওয়াকে কে ভুলতে পারে।
হিন্দি সিনেমা ছাড়াও তামিল, তেলেগু, কন্নড়, মালয়ালম ভাষায় সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সামান্য রেস্তোরাঁর ওয়েটার হিসেবে শুরু করা সেই বোমান ইরানি এখন ভারতের অন্যতম সেরা অভিনেতা। করেছেন ১০০–এর বেশি সিনেমা।
সর্বশেষ বোমান ইরানির মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘উঁচাই’। বন্ধুত্বের বন্ধন নিয়ে নির্মিত এই সিনেমা বক্স অফিসে ভালো ব্যবসা করেছে। সিনেমাটিতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন অমিতাভ বচ্চন, অনুপম খের ।