৮ জুলাই ২০২৫

২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

গোপন বৈঠকের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার আগে নবগঠিত কমিটির পরিচিত সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও গুটিকয়েক সদস্য নিয়ে বৈঠক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়।

বৈঠকে ছিলেন হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীসহ কয়েকজনকে ।

শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) নতুন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের নাম ও কমিটি ঘোষণা করেন হেফাজতের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী ।

গত ২৩ ডিসেম্বর দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের কার্যলয়ে এক বিশেষ বৈঠকে হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে হেফাজতের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়।

হেফাজতের প্রথম কেন্দ্রীয় সম্মেলনে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হলেও তখন ১২১ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছিলো। তবে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি ১৫১ জনের কথা থাকলেও পরে সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বাদ পড়া নেতা কর্মীদেরকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছিলো হেফাজতের শীর্ষ নেতারা।

এদিকে যাচাই-বাচাই শেষে বাদ পড়াদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। নতুন করে বাদ পড়াদের নেওয়ার কারণে গঠিত ১৫১ সদস্যের কমিটিকে ২০১ সদস্যের করা হয়। তবে মাওলানা আনাস পন্থিদের কমিটিতে নিলেও বিভিন্ন কারণে আলোচিত আল্লামা শফিপুত্র মাওলানা আনাস মাদানী, তার অনুসারী মাওলানা মঈনউদ্দিন রুহিকে নতুন কমিটিতে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন হেফাজত নেতারা। 

হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী বলেন, সারাদেশ থেকে বাদ পড়া হেফাজত নেতাকর্মীদের নেওয়া হয়েছে। সাবেক প্রচার সম্পাদক মাওলানা আনাস মাদানী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনউদ্দিন রুহি, মুফতি ফয়জুল্লাহ্ ও মাওলানা আলতাব এই চারজনকে নতুন কমিটিতে রাখা হয়নি।

২৩ ডিসেম্বর বৈঠকে সংগঠনের নায়েবে আমির ঢাকা জামিয়া নূরিয়া কামরাঙ্গিচরের মহাপরিচালক আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জিকে সিনিয়র নায়েবে আমির, সহকারী মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা শফিক উদ্দীন, মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী ও মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীকে যু্মি মহাসচিব হিসেবে মনোনীত করেন।

এছাড়া হেফাজতের ২০১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি করা হয়। এতে বিভিন্ন পদে, মাওলানা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ হাসান (পীর সাহেব বাহাদুরপুর), মাওলানা আব্দুস সবুর (শায়খুল হাদীস বগুড়া), মাওলানা আফজালুর রহমান ফেনী, মাওলানা আব্দুল বাছির সুনামগঞ্জ,  মাওলানা আইয়ুব বাবুনগর, মাওলানা মহিউল ইসলাম বোরহান রেঙ্গা মাদরাসা, মাওলানা আব্দুল বাছেত আজাদ হবিগঞ্জ, মাওলানা আব্দুল হালিমকে (বরিশাল) নায়েবে আমির, সহকারী মহাসচিব মাওলানা মুফতী সাইফুদ্দিন কাসেমী, মাওলানা মুশতাকুন নবী কাসেমী ও মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ ময়মনসিংহ, মাওলানা সানাউল্লাহ মাহমুদী বরিশাল, মাওলানা রেজাউল করীম রংপুর, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মাওলানা কবি মুহিব খান, সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মাওলানা আব্দুল্লাহ নাজীব, প্রফেসর ড. শেখ মুহাম্মদ ইউসুফ ঢা.বি., সহকারী অর্থ সম্পাদক মাওলানা সুহাইল সালেহ, সহকারী প্রচার সম্পাদক মাওলানা সুলতান মহিউদ্দীন ও মাওলানা কামরুল ইসলাম কাসেমী, সহকারী আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান ও এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, সহকারী সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ শফি ও মুফতী জাকির হুসাইন কাসেমী, সহকারী দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মুফতী কেফায়াতুল্লাহ আযহারী ও মাওলানা ওমর ফারুক ফরিদী, সহকারী আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাওলানা হুসাইন মুহাম্মদ শাহজাহান ইসলামাবাদী, মাওলানা ফয়েজ আহমদ লন্ডন ও মাওলানা হাফেয ওবাইদুল্লাহ কাতার, সহকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ড. শহিদুল ইসলাম ফারুকী এবং সহকারী ত্রান ও পুনর্বাসন সম্পাদক মাওলানা জুনায়েদ বিন ইয়াহইয়া।

সদস্য পদে রয়েছেন, মুফতী এনামুল হক কাসেমী বসুন্ধরা, মাওলানা কামরুজ্জামান ফরিদপুর, মাওলানা আব্দুল হামিদ কুষ্টিয়া, মাওলানা শব্বির আহমদ শরীয়তপুর, মাওলানা নজরুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ, মাওলানা সানাউল্লাহ কামরাঙ্গিচর, মাওলানা ফজলুল করীম রাজু বগুড়া, মাওলানা নাসিরুল্লাহ যশোর, মাওলানা আব্দুল আযিয টাঙ্গাইল, মাওলানা আবুল কাসেম, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম নেত্রকোনা, মাওলানা ফজলুর রহমান গাজীপুর, মাওলানা মনিরুজ্জামান বায়তুন-নূর, মাওলানা শওকত হোসেন সরকার নরসিংদী, মাওলানা আব্দুল্লাহ সাভার, মুফতী দ্বিন মুহাম্মদ আশরাফ কুমিল্লা, মাওলানা আবু ইউসুফ কেরানীগঞ্জ, মাওলানা তোফাজ্জল হুসাইন মিয়াজি, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সুবহানী, মাওলানা মুফতী শেহাব উদ্দিন, মাওলানা আলমগীর মাসউদ রাউজান, মাওলানা আব্দুল্লাহ চন্দ্রদিঘলিয়া, মাওলানা হাসান ফারুক গজারিয়া, মাওলানা মুহাম্মদ সোহেল চৌধুরী, মাওলানা ইউসুফ সাদেক, মাওলানা শোয়াইব চৌধুরী মাওলানা তরিকুল ইসলাম নওগাঁ, মাওলানা ওহিদুল আলম উত্তরা, মুফতী আব্দুল মালেক, মওলানা সালাহ উদ্দিন মানিকগঞ্জ, মাওলানা আবুল কাসেম পটুয়াখালী, মাওলানা মনসুর ও নূর মুহাম্মদ।

উপদেষ্ঠা মন্ডলি সদস্যগণ মাওলানা মুফতী ফয়জুল্লাহ পীর সাহেব মাদানীনগর, মাওলানা আব্দুল হক খতীব ময়মনসিংহ, প্রফেসর হামীদুর রহমান ঢাকা, মাওলানা মোবারক উল্লাহ বি-বাড়ীয়া, মাওলানা মুফতী দেলওয়ার হুসাইন ঢাকা, মাওলানা হাফেয সাআদত হুসাইন রাঙ্গুনিয়া, মাওলানা হিফজুর রহমান মুহাম্মদপুর, মাওলানা মুহসিন আহমদ সাহেবজাদা শয়খে কৌড়িয়া, মাওলানা হেলাল উদ্দীন ফরিদপুর, মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ সিলেট, মুফতী শফিকুল ইসলাম সাইনবোর্ড, মাওলানা মুহাম্মদ মুসলিম কক্সবাজার, মাওলানা শাহাব উদ্দিন মদুনাঘাট।

তাছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবকে সভাপতি ও মাওলানা মামুনুল হককে সেক্রেটারী করে ঢাকা মহানগর কমিটি এবং মাওলানা হাফেয তাজুল ইসলামকে (পীর সাহেব ফিরোজশাহ) সভাপতি ও মাওলানা লোকমান হাকীমকে সেক্রেটারী করে চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি ঘোষাণা করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয়েছিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীক কওমি আক্বীদাপন্থি অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। যদিওবা পরে অরাজনৈতিক এ সংগঠনটি রাজনৈতিক ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার প্রয়াত প্রধান পরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে আমির ও মাদ্রাসার তৎকালীন সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে মহাসচিব করে হেফাজতের ২২৯ সদস্যের মজলিশে শুরা কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেই সময়।

চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর দেশ বরেণ্য শীর্ষ আলেম আহমদ শফি ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার পর হেফাজতের আমিরের পদটি শূন্য ছিলো। ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে হেফাজতের আত্মপ্রকাশ হলেও সংগঠনটি দেশজুড়ে আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ২০১৪ সালে ৫ মে শাপলা চত্বর অবরোধের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে।

বাংলাধারা/এফএস/এইচএফ

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ