বাংলাদেশের একমাত্র নদীর তলদেশে নির্মিত কর্ণফুলী টানেল এর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। এই টানেল ঘিরে গড়ে উঠা শিল্প কারখানা ও দেশী বিদেশী ব্যবসায়ীদের থাকার জন্য আবাসন প্রকল্প হিসেবে কর্ণফুলী টানেল সার্ভিস এরিয়া নামে ৪৫০ কোটি টাকার একটি অত্যাধুনিক আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করেছে।
টানেলকে কেন্দ্র করে আনোয়ারা প্রান্তে সার্ভিস এরিয়াজুড়ে রয়েছে ৩০টি বাংলো এবং সাত তারকা মানের রেস্টহাউস, সম্মেলনকেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হেলিপ্যাড, মসজিদ,পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন। আরও রয়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য নিয়ে একটি জাদুঘর।
এসব স্থাপনায় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ-ব্যবস্থা (এসি) বসানো হয়েছে ১ হাজার ১৮২ টন ক্ষমতার। প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে যার নির্মাণ প্রকল্প শেষ হয়েছে গত বছরের জুন মাসে।গত ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এটি হস্তান্তর করলেও ভবন গুলো অব্যবহৃত হিসেবে পড়ে রয়েছে।যার কারণে বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে টানেল সার্ভিস এরিয়া রক্ষণাবেক্ষণের কর্মীরা বলেন, প্রতিটি বাংলাতে অত্যাধুনিক আসবাবপত্র ও সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু এখানে কেউ আসেনা, মাঝে মধ্যে সেতু কর্তৃপক্ষের ঊর্ধতন কর্মকর্তা এবং কিছু রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা,অতিথি এলেও প্রায় সময় ফাঁকাই থাকে পুরো রেস্ট হাউস এলাকা।অনেক সরকারী কর্মকর্তা সৌন্দর্য দেখতে আসে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, কর্ণফুলী টানেল সার্ভিস এরিয়া রিসোর্টটি আমরা বেসরকারি খাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দ্রুত দরপত্র আহ্বান করা হবে।এসব বাংলো পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত এমন কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হলে সরকারের লোকসান কমে আসবে।
টানেল সূত্রে জানা যায়,২০১৩ সালে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) পরিচালিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় কর্ণফুলী টানেল ২০১৭ সালে চালু হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। সেইসঙ্গে প্রাক্কলন করা হয়েছিল, প্রথম বছরে টানেল দিয়ে দৈনিক গড়ে ১৭ হাজার ৩৭৪টি যানবাহন চলাচল করবে। এ সংখ্যা ২০২০ সালে বেড়ে ২০ হাজার ৭১৯ এবং ২০২৫ সালে ২৮ হাজার ৩০৫-এ পৌঁছাবে।কিন্তু নানা জটিলতা পেরিয়ে এই টানেল উদ্বোধন হয় ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে। উদ্বোধনের সময় টানেলটি দিয়ে যানবাহন চলাচলের যে সম্ভাবনার কথা শোনানো হয়েছিল, তা এখন ‘গালগল্পে’ পরিণত হয়েছে।ফলে টোল আদায়ও অনেক কম। এখন মাসে টোল আদায় হচ্ছে গড়ে আড়াই কোটি টাকা। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ঠিকাদারের পেছনে মাসে খরচ প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা। এতে প্রতি মাসে গড়ে ঘাটতি প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা। এছাড়া কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকার মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৬০.৭৭ মিলিয়ন ডলার।
এ এস/ বাংলাধারা