সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে জোয়ারের পানি। তাই মেরিন ড্রাইভ সড়ক ব্যবহারকারি যানবাহন গুলোকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তিন মাস সময়ে সংস্কারের নির্দেশনায় শুরু হওয়া কলাতলী সংযোগ সড়কের কাজ দীর্ঘ ৫ মাসে অর্ধেকের বেশি শেষ করতে না পারায় এ ভোগান্তি বলে জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা।
সোমবার সকালে সায়মন বীচ এলাকার বালুচর দিয়ে বেলী হ্যাচারি অংশে উঠতে গিয়ে বালিতে আটকে যায় মাইক্রেবাসসহ বেশ কয়েক ধরণের যানবাহন। পরে জোয়ারের পানিতে এসব যানবাহন নৌকার মতো দোল খেয়ে ভেসেছে। গভীর সাড়রে তলিয়ে যাবার ভয়ে গাড়িগুলো রশি দিয়ে বেধে রেখেছে মালিক-চালকরা। ইঞ্জিনসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশে পানি ঢুকে বিকল হয়েছে এসব যান। জোয়ারের পানির ঢেউ তীর ছোঁয়ায় মেরিন ড্রাইভের সাথে সব যান যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থেকেছে সারাদিন। এতে পর্যটক ছাড়াও কলাতলীর দক্ষিণ অংশের হাজারো শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
কক্সবাজার পৌর কর্তৃপক্ষ গত জানুয়ারি মাসের শেষদিকে এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৩ মাসের জন্য কলাতলীর গ্রামীণ সড়কটি সংস্কারের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেন। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সড়কটি বন্ধ করে দেয়া হলে শহরের সাথে মেরিন ড্রাইভ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ মেরিন ড্রাইভের বেইলি হ্যাচারি পয়েন্ট ও কলাতলী সায়মন বীচ পয়েন্ট থেকে সমুদ্র সৈকতে ওঠানামার বিকল্প পথ তৈরি করে।
কিন্তু এ পথ দিয়ে যানবাহন চলাচল নির্ভর করছে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার উপর। প্রতিদিন দুইবার সামুদ্রিক জোয়ারের সময় ৫/৬ ঘন্টা করে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে শহরের একাংশের হাজার হাজার মানুষ ও শত শত যানযাহন সাময়িকভাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সৈকতে আটকে যায় যানবাহন। এ অজুহাতে যাত্রীবাহী অটোরিক্সা ও ইজিবাইকগুলোও গাড়ীভাড়া দ্বিগুণের বেশি নেয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ী ও স্কুলগামী শিশু শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা।
সূত্র জানায়, বালিয়াড়ির উপর ভর করে সড়কটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পগামী এনজিও, সোনারপাড়া, বাহারছরা ও হিমছড়ি এলাকার যানবাহন মালিক-যাত্রিরা ব্যবহার করছে। সোমবারও প্রতিদিনের মতো বালুচর দিয়ে গাড়ি পার হতে গিয়ে চোরাবালিতে আটকে যায় এনজিও সংস্থার মাইক্রোবাস ও পণ্যবাহি ট্রাক এবং ইজিবাইক।
স্থানীয়রা জানান, কলাতলীর দক্ষিণে মেরিন ড্রাইভের ২ কিলোমিটারের মধ্যে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও কোনো হাইস্কুল নেই। তাই ওই অংশের বেশিরভাগ শিশুকে ওই সড়কটি পার হয়ে কলাতলী উত্তর অংশের স্কুলে আসতে হয়। রাস্তা বন্ধ থাকায় ও জোয়ারভাটার কারণে ঠিকসময়ে স্কুলে পৌঁছা যায়না। অনেক শিশু নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করা বন্ধ করে দিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের মতে, সড়কটি সংস্কার শুরুর পর থেকেই কলাতলীর দক্ষিণ অংশের ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহণ খরচ আগের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে জিনিসপত্রের দাম বেশি পড়ায় ক্রেতাদের সাথে নিত্য বাকবিতন্ডা হচ্ছে। একইভাবে মেরিন ড্রাইভের অর্ধশতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলো আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে বলে জানান হিমছড়ির পর্যটন ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন।
সূত্র মতে, সমুদ্রের তীর ধরে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি গত ২০১৭ সালের ৬ মে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে ১৯৯১-৯২ সালে সড়ক প্রকল্পটি গ্রহণের পর থেকেই নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু মেরিন ড্রাইভের স্টার্টিং পয়েন্ট কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে বেইলি হ্যাচারি মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৩শ’ মিটার সড়ক ২০০০ সালে সামুদ্রিক ভাঙনে বিলীন হয়ে গেলে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে সড়ক যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
পরে ২০০৫-০৬ সালে কলাতলী গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সংকীর্ণ সড়কটিকে সামান্য প্রশস্ত করে মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেয়া হয়। কিন্তু সড়কটি দীর্ঘসংস্কার না হওয়ায় তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লে পৌর কর্তৃপক্ষ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এ পথে বর্তমানে হাজার হাজার পর্যটক ছাড়াও প্রতিদিন সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলাচলকারী দেশের ও বিদেশের ভিভিআইপিসহ স্থানীয় অধিবাসীরা চলাচল করেন।
বিশেষ করে কলাতলী ও এর দক্ষিণ অংশ দরিয়ানগর, হিমছড়িসহ বিশাল এলাকার সাথে শহরের একমাত্র সড়ক যোগাযোগ মাধ্যম হওয়ায় এসব এলাকার হাজার হাজার অধিবাসীকে পড়তে হচ্ছে চরম দূর্ভোগের মুখে। অথচ তিন মাসের জন্য সড়কটি বন্ধ করা হলেও গত প্রায় ৫ মাসে কাজ হয়েছে মাত্র অর্ধেক।
কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল আলম জানান, ইউজিআইআইটি প্রকল্পের অধীনে অন্য আরো দুটি সড়কের সংস্কার কাজসহ প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি সংস্কারের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ৩০ জুন পর্যন্ত সড়ক সংস্কার প্রকল্পের কাজ প্রায় ৬৩ ভাগ শেষ হয়েছে। বাকী কাজ শেষ হতে আরো মাসখানেক সময় লাগতে পারে।
তিনি বলেন, বার বার প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তন এবং ড্রেইন নির্মান নিয়ে সমস্যা হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। রমজানে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে আরো ৪৫ দিন সময় বাড়িয়ে নতুন কার্যাদেশ দেয়া হয়। তবে, প্রকল্পটি বর্ধিত সময়েও শেষ করা যাবে কীনা-তা নিয়ে সন্দিহান স্থানীয়রা ।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর