আলমগীর মানিক »
নুরুন্নবী সরকার, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চাকরি তার। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হিসেবে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় টানা পাঁচ বছর দুর্নীতি-লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেন তিনি। দুর্নীতি ছাড়াও হামলা-মামলাসহ নানা কর্মকান্ডে আলোচিত এই কর্মকর্তা ধার ধারেন না কোন কিছুর। তোয়াক্কা করেন না অধিদপ্তরের দেয়া কোন আদেশ-নির্দেশও।
দাপট-চ্যালেঞ্জসহ ক্ষমতাধর হিসেবেও বেশ পরিচিত তিনি। বছরের ৩৬৫ দিন ভ্রমণ ভাতার অর্থ আত্মসাত করেও দুর্নীতির নতুন রের্কড গড়েন তিনি। দুর্নীতিসহ নানা অসৎ কর্মকান্ডের দায়ে গত বছর তাকে সুন্দরগঞ্জ থেকে বাঘাইছড়ি উপজেলায় বদলি করা হয়। দুর্নীতি প্রমাণে গত ২৮ ফেব্রুয়ারী তাকে শাস্তিমূলক স্থায়ীভাবে বেতন গ্রেড নিম্নতরে (ডিমোশন) পদাবনতি দিয়েছে অধিদপ্তর। কিন্তু তাতে কী?
বাঘাইছড়ি উপজেলাতে যোগদানের পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন নুরুন্নবী। গত এক বছরে তার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অফিস কক্ষে ইউপি সদস্য সমর বিজয় চাকমাকে গুলি করে হত্যার নেপথ্যেও তার জড়িতের অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি বাঘাইছড়ি উপজেলার আইনশৃঙ্খলা সভাতেও এই পিআইও’র অনিয়ম, প্রকল্পে কমিশন বাণিজ্য, ক্ষমতার দাপট ও অসদচারণসহ বিভিন্ন অপকর্মের বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু তারপরেও বহাল তবিয়তে বদলির জন্য উচ্চ পর্যায়ে তদবির চালাচ্ছেন সুচতুর নুরুন্নবী।
জেলার ত্রাণ কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যানুসারে পিআইও নুরুন্নবী মাত্র ৫দিনের ছুটি নিয়ে গেলেও একমাসেরও অধিক সময় কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকে ঢাকায় তার অধিদপ্তরে উদ্বর্তন কর্মকর্তাদের টেবিলে টেবিলে দরখাস্ত নিয়ে বদলির দৌড়ঝাঁপ করছেন। বদলির জন্য গত ১০ মার্চ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করেন নুরুন্নবী সরকার। তিনি রংপুর বিভাগের যে কোন উপজেলায় বদলি চেয়ে ওই আবেদন করেছেন।
ইতোমধ্যে নুরুন্নবী সরকার লাখ টাকায় ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় বদলির চ্যালেঞ্জে সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা-লবিং চালাচ্ছেন বলেও তার ঘনিষ্ঠজন সূত্রে জানা গেছে। ভয়-আতষ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে বদলির আবেদন করলেও মুলত ঘুষ-দুর্নীতি আর ইউপি সদস্য সমর বিজয় হত্যাকান্ডের দায় এড়াতে বাঘাইছড়ি ছাড়তে ব্যস্ত হয়েছেন তিনি, এমন অভিযোগ জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা জানান, দুর্নীতি ও অসদচারণের দায়ে শাস্তি হলেও পিআইও নুরুন্নবীর স্বভাব বদলায়নি। বাঘাইছড়িতে যোগদান করেই অনিয়ম ও কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধিসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা স্বোচ্চার হলেও বহাল তবিয়তে আছেন তিনি। দুর্নীতির দায় এড়াতে তিনি বাঘাইছড়ি থেকে বদলির তদবির চালাচ্ছেন। তবে তার দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরেরর যুগ্ন সচিব পরিচালক (প্রশাসন) মো. রাশেদুল হাসান জানান, পিআইও নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগগুলো তদন্ত করে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে, ২০১৯ সালের জুনে ক্লোজিংয়ে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কোটি টাকার বিল উত্তোলন ঘটনার পর পিআইও নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে মাঠে নামে মিডিয়াকর্মীরা। গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপকর্মের তথ্য-চিত্রে নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিবেদন প্রচার হয় টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে। দুর্নীতির দায়ে ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর অধিদপ্তর তাকে স্বন্দীপ উপজেলায় বদলি আদেশ দেয়। কিন্তু সেই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতের শরনাপন্ন হয়েও ব্যার্থ হন তিনি। পরে পুনরায় তাকে বাঘিইছড়ি উপজেলায় বদলির আদেশ দেয় অধিদপ্তর। শুধু তাই নয়, দুর্নীতি ও অপকর্ম ফাঁস করায় ১২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগে রংপুর আদালতে পৃথক দুটি মিথ্যা মামলাও করেন তিনি।
এদিকে, সুন্দরগঞ্জ থেকে বদলির আগে ঘর বরাদ্দের নামে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকার বেশি হাতিয়ে নেয় পিআইও। নুরুন্নবীকে টাকা দেয়ার সত্যতাও স্বীকার করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা। এসবের ভিডিও চিত্রও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
এছাড়া সম্প্রতি বাঘাইছড়িতে নিজ কার্যালয়ে বসে পিআইও নুরুন্নবীর ধূমপানের একটি ভিডিও এসেছে গণমাধ্যকর্মীদের হাতে। এর আগে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলাতেও অফিসে ধুমপান করা, সাংবাদিকের সঙ্গে অসদচারণ ও ৫৮ লাখ টাকার গাড়ি কেনা ছাড়াও নুরুন্নবীর নারী নিয়ে ফূর্তিও আরও দুটি ভিডিও চিত্র ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
বাংলাধারা/এফএস/এআর













