সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »
কক্সবাজারে ২০০১ সালে দায়ের হওয়া অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগের মামলায় ১৯ বছর ৬ মাস পর রায় ঘোষণা হয়েছে। এতে প্রধান অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-১।
একই সাথে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে তাকে। তা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন বিজ্ঞ আদালত। মামলায় ৭ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া তাদের বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ অক্টোরে) বিকেলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-১ এর বিচারক মোসলেহ্ উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-১ এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট বদিউল আলম সিকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত নুরুল হুদা (৪২) কক্সবাজার সদর উপজেলার মধ্যম নাপিতখালী এলাকার ছিদ্দিক আহমদের ছেলে।
সারাদেশে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের লাগাম টানতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ সংশোধনী অধ্যাদেশে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের দিনে কক্সবাজারের এ রায় আদালতপাড়া ও শহরে ‘টক অব দ্যা টাউনে’ রূপ নেয়।
রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে পিপি (নারী) অ্যাডভোকেট বদিউল আলম সিকদার বলেন, মামলায় বাদী, ভিকটিম, তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৬ জন স্বাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদালত। স্বাক্ষীদের স্বাক্ষে আসামি নুরুল হুদার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ৭/৯(১) মূলে যাবজ্জীবন সাজার রায় ঘোষণা করেন।
মামলার এজাহার বিষয়ে পিপি জানান, ২০০১ সালের ১৭ এপ্রিল রাত আটটায় বাদীর আঙ্গিনা থেকে মেয়ে জোসনাকে (১৪) (ছন্দনাম) অপহরণ করে নিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে আসামীরা। এ ঘটনায় ধর্ষিতার পিতা বাদী (নাম পরিচয় গোপন রাখা হলো) হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাজাপপ্রপ্ত আসামি নুরুল হুদাকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করে কক্সবাজার সদর থানাকে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন।
‘আদালতের নির্দেশ পেয়ে অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করেন কক্সবাজার মডেল থানা (৪৫/২০০১)। যা জিআর ১৫৪/০১। তারিখ ২৫/০৪/২০০১। মডেল থানা পুলিশের এসআই সোলাইমান চৌধুরী মামলাটি তদন্ত করে ২০০১ সালের ১৭ জুলাই আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন (চার্জসীট) দেন।’
বিজ্ঞ আদালত অভিযোগ পত্র আমলে নিয়ে চার্জ গঠন করে ৬ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ করে ও যুক্তিতর্ক শেষ মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) চুড়ান্ত রায় প্রদান করেন। এতদিন জামিনে থাকলেও রায় ঘোষণার সময় আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এসময় খালাস পাওয়া আসামীদের মাঝে উৎফুল্লতা দেখা গেলেও যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া নুরুল হুদা আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহাব উদ্দিন শাহেদ।
এদিকে, সারাদেশে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের লাগাম টানতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ সংশোধন করা হয়েছে। সোমবার ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০০০’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভায়।
মন্ত্রিসভায় খসড়া অনুমোদনের পর সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন, সংশোধিত আইন অনুযায়ী ৯(১) উপধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে। সেই সংশোধনের অধ্যাদেশে মঙ্গলবার সই করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এদিনই কক্সবাজারে সাড়ে ১৯ বছর আগে করা একটি ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির যাবজ্জীবন সাজা পাওয়ার বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল আদালত পাড়ায়।
বাংলাধারা/এফএস/এএ













