বাংলাধারা ডেস্ক »
‘অনন্য মামুনকে আমি পরিচালক বানিয়েছি। আমার টাকায় সে পরিচালক হয়েছে। ওকে সামনে পেলে কান ধরে ওঠবস করাব’ বলে মন্তব্য করেছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও নায়ক অনন্ত জলিল।
শুক্রবার (৮ জুলাই) গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় অনন্ত জলিল বলেন, ‘মামুনের এত বড় সাহস কীভাবে হয় যে সে আমার সমালোচনা করে? ওর কি যোগ্যতা আছে অনন্ত জলিলের সমালোচনা করার?’
এবার সেই অনন্ত জলিলকে কড়া জবাব দিলেন পরিচালক অনন্য মামুন। বলেছেন, ‘অনেক চুপ ছিলাম। তবে চুপ থাকা মানে মিথ্যাটাকে অন্যায় হিসেবে মেনে নেয়া। কারণ, অনন্ত জলিল আমার বাবা-মাকে নিয়েও গালাগালি করেছিলেন।’
শনিবার ( ৯ জুলাই) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সময় সংবাদের পাঠকদের জন্য অনন্য মামুনের সেই পোস্টটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘অনেক চুপ ছিলাম দেখলাম চুপ থাকা মানে মিথ্যাটাকে অন্যায় হিসেবে মেনে নেয়া। সত্যটা বলা দরকার অনন্ত সাহেবের সঙ্গে আমার পরিচয় ২০১০ সালের দিকে। আমি তখন কলকাতায় রেগুলার গল্প লেখক হিসাবে Eskay movies-এর সঙ্গে কাজ করি। স্পেলাশ ম্যাগাজিনের বাবুর সঙ্গে আমার আগে থেকেই চেনাজানা ছিল। বাবু আমাকে হোটেলে ঢাকল, অনন্ত ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হলো।
বাংলাদেশের ছেলে কলকাতায় কাজ করে শুনে উনি অনেক খুশি। আমি ল্যাপটপে গল্প লিখি ব্যাপারটা ওনার মনে ধরে। বললেন, দেশে এসে আমার সঙ্গে মিট করবেন। অনন্ত ভাইয়ের একটা ভালো গুণ আছে, উনি ছোট-বড় সবাইকে আপনি করে বলেন। এর মধ্যে শুনি পরিচালক সোহান ভাইয়ের সঙ্গে আমার জুটি হিট। আমার দেয়া সব গল্প হিট। কথা দাও সাথী হবে, আমার জান আমার গান, পরাণ যায় জ্বলিয়ারে, কোটি টাকার প্রেম, সে আমার মন কেড়েছে, এক মন এক প্রাণ।
সোহান ভাই অনন্ত ভাইয়ের সিনেমা দ্য স্পিড লেখার জন্য অনন্ত ভাইয়ের অফিসে নিয়ে গেলেন। তার সঙ্গে আমার দ্বিতীয় দেখা। এরপর তার সঙ্গে আমার কাজ শুরু হলো। আমার কাজের দক্ষতা দেখে অনন্ত ভাই বললেন, আমাকে শুটিং-এ থাকতে হবে। আমি এত কিছু ম্যানেজ করতে পারব না। শুটিংয়ের প্যান অনন্ত ভাইয়ের সঙ্গে থেকে আমি শুরু করলাম। ক্যামেরা লোকেশন শিল্পী সব কিছু। তখন থেকেই আমি সোহান ভাইয়ের চোখে ভিলেন হয়ে গেলাম। সবাই শুটিং শেষ করে দেখে ফেরে। আমি আর অনন্ত ভাইয়ের অফিসের লোক ব্রুসলী এক সপ্তাহ পরে ফিরে আসি। কারণ, তখন নেগেটিভে শুটিং হতো। টেলিসিনিং করে ফাইট এডিট করে আমি দেশে ব্যাক করি। মজার ব্যাপার হলো অনন্ত ভাইয়ের সিনেমার খরচ তার অফিসের লোক দেখাশোনা করে। পরিচালক বা অন্য কারও হাতে টাকা দেয়া হয় না।
মালয়েশিয়া হিসাবে তার লোক ২৩ লাখ টাকা বেশি দিয়ে আসে, আমি পরে হিসাব বের করে তাকে টাকাটা ব্যাক করে দিই। সেদিন উনি বলেছিলেন আপনি আমার ছোট ভাই। দ্য স্পিড সিনেমার সব প্রোস্ট প্রোডাকশনের কাজ আমি চেন্নাই থেকে করে নিয়ে আসি। অবশ্যই তার জন্য অনন্ত ভাই আমাকে সম্মানী দিয়েছেন। দ্যা স্পিড সিনেমার পরে অনন্ত ভাই বললেন, মামুন আপনি এত কিছু পারেন এবাবের সিনেমাটা আপনি বানান। সিনেমার মানুষ হিসাবে এটা আমার স্বপ্ন ছিলো, সেটা পূরণ হলো। আমাকে ১ লক্ষ টাকা সাইনং মানি দিলেন। সম্পূর্ণ সিমেমার জন্য ৫ লাখ টাকা সত্যি একজন নতুন পরিচালক হিসাবে এটা অনেক টাকা। আমি পরিচালক সমিতিতে সেখান থেকে ৫৬ হাজার ফ্রী জমা দিয়ে সদস্য পদ নিলাম। এখন আপনারা বলেন তো টাকাটা কার আমার নাকি অনন্ত ভাইয়ের?
আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞতা জানাই অনন্ত ভাইকে আমাকে তার সিনেমায় প্রথম পরিচালক হিসাবে সুযোগ দেয়ার জন্য। শুটিং আমার সাথে প্রথম ঝামেলা শুরু হয় মুম্বাইয়ের হিরোইন সেনহা উল্লাহ নিয়ার পর থেকে। অনন্ত ভাইয়ের সাথে বর্ষা ম্যাডামের সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছিলো। অনন্ত ভাই বাইরের হিরোইনকে নিয়ে কাজ করবে বর্ষা করতে দিবে না। ফাইনালী তাদের সম্পর্ক ঠিক হলো, আমি ভিলেন হয়ে গেলাম। শেষ হলো মোস্ট ওয়েলকাম সিনেমা এবং এখন অবধি মুনসুন ফিল্মসের সব চাইতে বড় হিট সিনেমা।
তারপর লোকজনের মুখে শুনতে শুরু করলাম, আমি নাকি মোস্ট ওয়েলকাম সিনেমার টাকা মেরে উত্তরাতে ৬ তলা বাড়ি বানিয়েছি। এক দিন সরাসরি অনন্ত ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই উত্তরাতে ৬ তলা বাড়ি বানাতে কত টাকা লাগে আপনি ভালো করেই জানেন মোস্ট ওয়েলকাম সিনেমার বাজেট ৩ কোটি ২ লাখ টাকা। আমি সব টাকা মেরে দিলেও কি জায়গা কিনে উত্তরাতে বাড়ি বানানো সম্ভব। উনি জবাব দিতে পারেন নাই। কারণ উনি জানতেন উনার অফিসে কাউকে সরাসরি টাকা দেয়া হয় না, সব খরচ তার একাউন্ট দেখে।
এবার আসি মোস্ট ওয়েলকাম -২ সিনেমার দেশের বাইরের সব শুটিং আমি পরিচালনা করেছি, নাজিম শাহরিয়ার জয়, মিশা ভাই, ডন ভাই উনারা ব্যাপারটা ভালো করেই জানেন। দেশে আমার পর যখন কথায় কথায় একদিন অনন্ত ভাই আমার বাবা মাকে জড়িয়ে একটা গালি দেয় ঐ দিন থেকে চলে এসেছি। আপনার পাশের লোকজন টাকার জন্য আপনাকে হুজুর হুজুর করতে পারে আমি না। আপনার ব্যক্তিগত জীবনের গল্প গুলো না বলি, কারণ আমি আপনাকে সম্মান করি। মানুষকে সম্মান করা পারিবারিক শিক্ষা। পরিশেষে একটা কথাই বলি, এবার ঈদ তিনটা সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে সব গুলোই সিনেমা। কোনটা ভালো কোনটা খারাপ এটা বলার জন্য পাবলিক আছে। আপনি দেশের সিআইপি, আপনার ব্যবহার দেখে আমরা শিখবো, ভবিষ্যৎ এ সিআইপি হবার স্বপ্ন দেখবো। দয়া করে সেই জায়গাটা নষ্ট করবেন না’।













