তবুও গোলাপেরা ফোটে
অনন্ত শক্তির উৎস সূর্যও
ক্লান্তির দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সমুদ্রে ডুবে যায়!
বিনয়ী ঘাসফুল যায় মাড়িয়ে
অপ্রেমের কিছু চরণধূলো,
যেন ক্রমশ ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়
ভালবাসার জায়গাগুলো!
বনে বনে ঝরাপাতাদের স্তূপ বাড়ে
নদীও যেন কাতরায় জলের পিপাসায়!
পিটিয়ে, পাথর কিংবা লাঠি দিয়ে
আগুনে পুড়িয়ে কিংবা লাথি মেরে
বোমা, গুলি কিংবা দা-ছুরিতে
ক্ষমতার উল্লাসে মানুষ মানুষকে করে বধ!
ভীত অপরাহ্নে অসাড় বয় খরস্রোতা কর্ণফুলী-
সিংহের খাচার বাইরেও
ঘন হয় অধিকতর অন্ধকার;
অনুসরণ করতে চায় মগজের পথ।
এদিকে-ওদিকে মঙ্গল প্রদীপ শিখায়
জ্বলজ্বল করে সচিত্র মৃত্যুর ইতিহাস-
মলাটবন্দি হাসি আর সুখগুলো
রাজার মুকুটে দোল খায় বিবাগী বাতাস।
তবুও সম্ভাবনার প্রেম-চুম্বনে
নতুন সূর্য উঁকি দেয়
চাঁদ ডোবা ভোর রাতে;
জিয়ন্ত শিল্পের প্রখরতায়
গোলাপেরা ফোটে
পুতিনের হিংসার এই পৃথিবীতে!
(২৫ এপ্রিল, ২০২২)
শিশিরের ফোঁটারা, স্মৃতিহারা
চল যাই খোলা মাঠে
শ্বাস নিয়ে আসি স্বাধীনতার হাওয়ায়
দেখে আসি সবুজের স্নিগ্ধ-রূপ, দু’চোখ ভরে।
ইট-কাঁচের চার দেয়ালে
দম যে বন্ধ হয়ে আসে
প্রিয়তমা তোমাদের এই শহরে!
খোলা মাঠ! খোলা হাওয়া! এখন পাবে কই?
পাবে না পাবে না খুঁজে তুমি শিশুদের হৈ চৈ!
দাও তো দেখি খুঁজে সবুজ ঘাসে ঢাকা একখানা মাঠ
‘দূরে দূরে গ্রাম দশ বারোখানি, মাঝে একখানি হাট’;
হারিয়ে গেছে লুকোচুরি, ঢাংগুলি, ধাপ্পা, বৌছি, হাঁসধরা
মোরগ লড়াই, কানামাছি, কুতকুত, কড়ি, সাত চাড়া
এলাডিং বেলাডিং, হাঁ-ডু-ডু, গোল্লাছুট, লাঠাই-ঘুড়ি!
হারিয়ে গেছে আহা স্বাদের সেই পানিফল
বিলিম্বি, বৈঁচি, ঢেউয়া, চালতা, বেতফল;
কোথায় পাবে পদ্ম-ফোটা সেই ছোট্ট পুকুর
পাতায়-পাতায় লেগে থাকা রাতের শিশির
রূপকথার চাঁদে কাটে না সুতা এখন থুরথুরে বুড়ি!
এখন কি শৈশবে বৃষ্টির থৈ থৈ জলে
কাগজের নৌকা ভাসায় খেলার ছলে?
একচুয়াল বন্দি এখন ভার্চুয়াল যাদুজালে
ছোট মাছ নেই নেই নদ-নদী, খালে-বিলে
দানবেরা ক্রমশ শক্তির দালানে গিলছে
খোলা মাঠ, দুরন্ত শৈশব, ভোরের হাওয়া!
আর অচেনা হয়ে যায় পূর্ণিমার চাঁদ
ভোরের দোয়েল পাখি, জোনাকির রাত
বাঁশঝাড়-ঝাউবন-হিজল-তমাল-অশ্বত্থ
সারি সারি কুটির সোনার পাতায় ছাওয়া!
আহা!
হেমন্তের মাঠে ঝরে পরা শিশিরের ফোঁটারা
ফিরে ফিরে তাকায় রূপকথায়, হয়ে স্মৃতিহারা।
(৭ মে, ২০২২)
ভাসব আকাশশূন্যে, তোমাকে ছোঁয়ার জন্যে
তোমাকে ছোঁয়ার ইচ্ছেরা
পেন্ডুলাম হয়ে শুধু দোলে
হৃদয়ের ডানে-বায়ে;
দুপুরের বুকে ঝুঁকে ঝুঁকে
বিরহ’ মশাল দেয় জ্বেলে
ইচ্ছেদের পায়ে পায়ে।
অথচ তোমাকে ছোঁয়ার জন্যে, আজও হই হন্যে
দেখে না কেউ বিক্ষত সময়, দেখো না তুমিও
একমুখী প্রেমের যন্ত্রণায় পুড়ে অঙ্গার হই আমিও!
অথচ তোমারই জন্যে, আজও পাপ ও পূণ্যে
বুকে জ্বেলে রাখি প্রেমের শিখা অনির্বাণ;
দেখিনা অন্য কোন মুখ, খুঁজিনা নির্বাণ!
কতবার পুড়িয়েছ তপস্যালোক, পুড়িয়েছ আমার ভূলোক
ছড়িয়েছ বিরহ আঁখিপাতে, নিঃসঙ্গ রাতে
পদচিহ্নহীন হেঁটে হেঁটে, এই হৃদয়ের বাটে।
তবুও প্রেম জাগে উচাটন মনে, যাপনের লাভা নি:সরণে
আমার অশ্রুজল, ডোবাতে পারে কই তোমার আঙিনা-তল
মৃত্যুর আগেই দেখাও তুমি, এক জন্মচক্রাবলের একত্রিশ লোকভূমি।
একদিন যখন তুমি
আসবে ছুঁতে এই বুক, এই ঠোঁট-হাত-গ্রীবা-চিবুক
ভালোবাসার অপূর্ব ছাঁদ, পূরুষালি বাহু-কাঁধ
দু’চোখের পাতা, তোমার জন্য লেখা কবিতা!
এই দেহ তখন
বরফ শীতল, হাওয়ায় ভাসবে শুধু একমুখী প্রেমের গীতল!
আর আমি ভাসব আকাশশূন্যে, তোমাকে ছোঁয়ার জন্যে
সন্ধ্যার মেঘমালার নতুন সাজে, ওই দূর নক্ষত্রের মাঝে।
(২০ এপ্রিল, ২০২২)