চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার নলুয়ায় মোরশেদ নামে এক যুবলীগকর্মী আহত হয়েছেন নিজ দলেরই অন্তর্কোন্দলে প্রতিপক্ষের হামলায় ।
স্থানীয়দের অভিযোগ অনুযায়ী,গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে প্রতিপক্ষ ফারুক সহযোগীদের নিয়ে মোরশেদর ওপর হামলা চালিয়ে এক পর্যায়ে ফারুকের সহযোগিরা মোরশেদকে বিবস্ত্র করে দাঁড় করিয়ে রাখে। এসময় জামশেদসহও তার দল সাথে থাকাকালীন তাকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেননি বলে জানান স্থানীয়রা। তারা জানিয়েছেন , মিন্টু ও কামালের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য এলাকার মানুষ ক্ষীপ্ত।
কিন্তু মিন্টু কামালের সন্ত্রাসীদল অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই নানাভাবে হয়রানি করে। এবং স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের অন্যতম সহযোগী মোরশেদ ত্রাণের টিন চুরি, গরিব ও অসহায় পরিবারের সুন্দরী মেয়েদের হয়রানি, শালিশের নামে নির্যাতন, অস্ত্রবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলককর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, যুবলীগকর্মী মোরশেদ জামশেদ ফারুক এলাকায় সন্ত্রাসী ও দাঙ্গাবাজ হিসেবে পরিচিত। প্রবাসী সহোদর মিন্টু ও কামালের আশ্রয়ে তাদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এলাকায় দখলদারি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ক্ষমতার বিস্তারে বেপরোয়া আচরণ করছে। প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, গুলিবর্ষণ, মতের বিরুদ্ধপন্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করা এবং অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দেওয়া তাদের নিয়মিত কর্মকাণ্ডের অংশ। এমনকি মোরশেদের শিষ্য টাইগার ফারুক দল ছাড়তে চাইলে, তার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা ফারুকের দুই পা ভেঙে দেয়, যার ফলে তিনি দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
পরবর্তীতে কিছুটা সুস্থ হলে মোরশেদ ফের হামলার চেষ্টা করেন ফারুকের ওপর এবং মামলা প্রত্যাহারের চাপ দেন। এই নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে আপোষ মীমাংসাও হয়। আপোষ মতে, ফারুক স্ত্রীকে দিয়ে মোরশেদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদনও করেন আদালতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোরশেদের এক আত্মীয় জানান, ‘আমরা এলাকায় থাকি না। মোরশেদ স্থানীয় ইউপি সদস্য। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে সন্ত্রাসী টাইগার ফারুকের নেতৃত্বে মুখোশপরা কিছু যুবক ট্যাক্সি করে এসে মোরশেদের ওপর হামলা চালায়। ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে তাকে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। হামলায় মোরশেদের মাথা, কপাল ও শরীরের বিভিন্ন অংশ আঘাত লাগে। হামলার পর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যান।’
এছাড়াও তিনি আরো জানান, ‘মোরশেদকে উদ্ধার করে প্রথমে আলফা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি করা হয়। বুধবার তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে। আমরা বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করেছি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।’
কিন্তু এরই পরিপ্রেক্ষিতে হামলার বিষয়টি মো. ফারুক অস্বীকার করে বলেন, ‘মোরশেদ মেম্বারের নেতৃত্বে আমার ওপর তার লোকজন হামলা চালিয়ে দুই পা ভেঙে দিয়েছে। আমি এখনও পুরোপুরি সুস্থ হইনি। এরমধ্যে আমি এবং আমার পরিবারের ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য। দু’বার হামলাও করা হয়েছে। হামলার বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। জোর করে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য স্ট্যাম্পে সই নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরো জানান, ‘আমাকে ভালো পথে ফিরতে দিচ্ছে না মোরশেদ ও তার সহযোগীরা। আমাকে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। তাই বেশ কিছুদিন থেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছি। তবু আমাকে দায়ী করা হচ্ছে হামলার জন্য। মূলত নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণে তার নিজের লোকজনই হামলা চালিয়ে থাকতে পারে। এ ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই।’
তিনি আরও বলেন, ‘মোরশেদ এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করে। উঠতি তরুণদের দিয়ে ইয়াবা বিক্রি করে এলাকায়। জমি দখল, ফসলি জমির মাটি কাটা, ডলুর বালির ব্যবসা—এমন কোনো অপরাধ নাই সে করে না। মোরশেদ মূলত প্রবাসী সন্ত্রাসী সহোদর মিন্টু ও কামালের ভাগিনা। তাদের নির্দেশে পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আছে বছরের পর বছর। এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের ভয়ে তটস্থ থাকে। কেউ তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়।’
এই বিষয়ে মো. ফারুক বলেন, ‘মিন্টু নলুয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। কামাল জড়িত ছিলেন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে। কিন্তু ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর তারা ভোল পাল্টিয়ে জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এ কাজে সহায়তা করছে তাদের ভাগিনা কাঞ্চনার জামশেদ। মিন্টু ও কামাল নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা গ্রামের মোহাম্মদ বকসু ওরফে সেনুর ছেলে। তারা নিজের বড় ভাই মোস্তককেও সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করে দিয়েছে, গ্রামের বাড়ি থেকেও বিতাড়িত করেছে।’
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল ইসলাম ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ওই এলাকায় নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একটি পক্ষ বেশ সক্রিয়। তারা কোনোভাবেই ভিন্নমত সহ্য করেন না। কথায় কথায় গোলাগুলি, মারধর, গালাগাল, ভুয়া আইডি থেকে ফেসবুক পোস্টে চরিত্রহরণ সেখানকার নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।’
বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ওসি জানান, ‘সংঘাতে জড়ানো উভয়পক্ষ আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। প্রাথমিক তদন্তে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অন্তর্কোন্দলের কারণেই এ হামলার ঘটনা। ইতোমধ্যে আরও বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে ওই এলাকায়। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এআরই/এনএস/বাংলাধারা