কক্সবাজার প্রতিনিধি »
বঙ্গোপসাগরের নাফনদীর মোহনায় মাছ ধরারত অবস্থা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশী ৯ জেলেকে ৪ দিনেও ফেরত দেয়নি মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি)। তাদের ফেরাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা যোগযোগ করলেও কোন ধরণের সাড়া দিচ্ছে না বিজিপি সদস্যরা। এতে অপহৃত জেলেওদর স্বজনদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণ পাড়ার মোহাম্মদ আমিনের মালিকানাধীন একটি মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে নয়জন জেলে সেন্টমার্টিন উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যায়। এসময় ট্রলারটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে মাঝিমাল্লাসহ ট্রলারটি ভাসতে ভাসতে নাফনদে চলে আসে। মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) সদস্যরা ট্রলারটি লক্ষ্য করে ধাওয়া করে। কিন্তু ট্রলারটির ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় মুহুর্তে তারা বিজিপির হাতে ধরা পড়ে। বিজিপি সদস্যরা ট্রলারসহ জেলেদের নিয়ে মিয়ানমার হাচ্ছুরতা সীমান্ত চৌকিতে নিয়ে যায়।
নিয়ে যাওয়া জেলেরা হলেন, শাহপরীর দ্বীপ এলাকার মাঝি নুরুল আলম, মো. ইউনুছ, সাইফুল ইসলাম, ইলিয়াছ, মো. আলম, ছলিম উল্লাহ, নুর কামাল, মো. সৈয়দ ও সাইফুল ইসলাম। তারা সবাই বাংলাদেশী নাগরিক।
অপহৃত জেলে মো. আলমের মা হাসিনা বেগম বলেন, গত বছর সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার ডুবিতে স্বামীকে হারিয়েছে। মঙ্গলবার মাছ ধরতে যাওয়া ছেলেকেও মিয়ানমার বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে। এখন বড় অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার ছেলেকে ফিরে পেতে সরকারের সাহায্য কামনা করছি।যেন আমার ছেলেসহ বাকিরা দ্রুত ফিরে আসতে পারে।
ট্রলার মালিক মোহাম্মদ আমিন জানান, তার ট্রলারটি নাফনদ ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মাছ শিকার শেষে ফেরার পথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এসময় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা একটি বোট নিয়ে এসে ট্রলারটি ধরে তাদের সীমান্তে নিয়ে যায়। পরে বিষয়টি অন্য জেলেদের মাধ্যমে জেনে তাৎক্ষণিক বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে অবহিত করেছি।
অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সীমানায় ইয়াবার চালান জব্দ হলে দারুণ ক্ষেপে যায় মিয়ানমারের বিজিপি। কারণ তাদের নিয়ন্ত্রণে এদেশে ইয়াবার চালান আসে। এ কারণে বাংলাদেশে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও স্থানীয় অধিবাসীদের মানসিক চাপে রাখতে কারণে-অকারণে তারা নাফনদে মাছ শিকাররত জেলেদের উপর গুলি করে আর সুযোগ পেলে জেলেদের ধরে নিয়ে যায়। ৯ জেলেকে ধরে নেয়ার বিষয়টিও এর একটি। এর দুদিন আগে নৌকায় গুলি করে এক জেলেকে হত্যা করা হয়।
সূত্রটি আরো জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সম্পর্ক ভালো থাকায় যেকোনো সমস্যা সমধান করা যায়। সম্প্রতি সীমান্ত এলাকায় টহল দিতে গিয়ে ভুলে ভারতীয় সীমানায় চলে গেলে দুই বিজিবি সদস্যকে নিয়ে যায় বিএসএফ। সঙ্গে সঙ্গে বিজিবি ও বিএসএফ কর্মকর্তারা পতাকা বৈঠক করে বিষয়টি সুরাহা করে দুই বিজিবি সদস্যকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনেন। অথচ এ ধরনের ঘটনা মিয়ানমারের সঙ্গে ঘটলে তা সমাধান করা অনেক কঠিন হয়ে ওঠে। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ৯ জেলেকে চার দিনেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হওয়া।
টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্ণেল মো. ফয়সল হাসান খান বলেন, ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ফেরতে পতাকা বৈঠক করতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এখনো তাদের চূড়ান্ত সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে জেলেদের দ্রুত ফেরত পেতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাধারা/এফএস/এআর













