১০ নভেম্বর ২০২৫

অবশেষে কারসাজির টেন্ডার রি-টেন্ডারে

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »

আবারো রেলের ই-জিপিতে ৭৫০টি স্টেইনলেস স্টিল (এস.এস) ডোবটেল সিটের রি-টেন্ডারে নীলনকশার শর্তে আমূল পরিবর্তন এনে অনলাইনে (ইজিপি কোড-৬৯৯৭০৯) টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। দীর্ঘ তিনমাস টেন্ডার সিকিউরিটি আটকে রাখার পর রি-টেন্ডারের ঘোষণা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ সরবরাহকারীরা। কারণ ২ লাখ ১০ হাজার টাকার পে-অর্ডার আটকে রাখায় এমন অর্থের ব্যাংক মুনাফা আদায় করতে পারেনি, বরং ক্ষতি হয়েছে এ টেন্ডারে প্রায় ৫ হাজার টাকা। প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘ তিনমাস কি নিয়ে গবেষণা করে টেন্ডার কমিটি সময়ক্ষেপণ করেছে।

আবারো বাজারে বিদ্যমান পণ্যের অবান্তর শর্ত দিয়ে সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়া তথা ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্টকে (ইজিপি) কুলষিত করা হচ্ছে। বাজারে বিদ্যমান পণ্য সরবরাহ করতে অভিজ্ঞতার কেন দরকার হবে এমন প্রশ্ন সরবরাহকারীদের। ডিরেক্টর অব ইনভেন্ট্রি কন্ট্রোল (ডিআইসি) স্বাক্ষরিত নোটিশে আগামী ৬ জুন পুনঃদরপত্র খোলার আহবান করা হয়েছে।

উল্ল্যেখ, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এ টেন্ডারটি অনলাইনে ওপেনিং কার্য সম্পাদন করা হয় এবং ১৫ মার্চের মধ্যে টেন্ডার কার্যক্রম শেষ করার কথা ছিল। ২য় সর্বনিম্ন দরদাতার অভিজ্ঞতা থাকার পরও পছন্দের সরবরাহকারীকে দিতে না পারায় রি-টেন্ডারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে— এমন অভিযোগ উঠেছে। এসব টেন্ডার কমিটির কারণে কলঙ্কিত হচ্ছে সরকারের ইজিপি টেন্ডার পক্রিয়া।

অনলাইনে লাইভ দেওয়া টেন্ডারের দেখা গেছে, বাজারে সহজলভ্য পণ্যের আইএসও অথবা পণ্যের মাণ নির্ধারণকারী এবং উৎপাদনকারীর অথবা স্বদেশি ব্যবসায়ীর অথরাইজেশন লেটার জমা দিতে হবে টেন্ডারের সঙ্গে। ৫০ লাখ টাকার সমজাতীয় পণ্য সরবরাহের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কমপক্ষে দুই বছরের সমজাতীয় পণ্য সরবরাহের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এমন টেন্ডার ওপেনিং কমিটির চেয়ারম্যান ডিরেক্টর ইনভেন্ট্রি কন্ট্রোল (ডিআইসি) ও মেম্বার সেক্রেটারী ডিস্ট্রিক্ট কন্ট্রোলার অব স্টোর্স (জেনারেল) আসিফ উল ইসলাম।

অভিযোগ রয়েছে, পাহাড়তলীস্থ রেলওয়ে কারখানার জন্য ১০০ এমজি (মিটারগেজ) প্যাসেঞ্জার কোচ মেরামত প্রজেক্টের টেন্ডার আইডি-৬৩১৯২০ টেন্ডারটির ওপেনিংয়ের নির্ধারিত তারিখ ছিল ১৬ ফেব্রুয়ারি। টেন্ডারটির ডকুমেন্ট ফি ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা। রিটেন্ডারে তা পরিবর্তন করে দুই হাজার টাকা করা হয়েছে। আর টেন্ডার সিকিউরিটি ছিল ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। তা পরিবর্তন করে দুই লাখ টাকা করা হয়েছে। প্রি-টেন্ডার মিটিং করার বিষয়ে সরবরাহকারীরা কিছুই জানানে না। কাদের সঙ্গে এ মিটিং করা হয় তা কেউ বলতে পারেন না।

টেন্ডারটির বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এসএস সিট মাত্র একটি আইটেমের এই দরপত্রের সিডিউলের পণ্যই বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। আবারো কর্তৃৃপক্ষ নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে, চক্রান্ত করছে রেলের ইইজপি’তে। যেসব শর্ত কোন ভাবেই প্রযোজ্য নয় পিপিআর অনুযায়ী। এ পণ্যের ব্যবসায় খুচরা ও পাইকারি বাজারে শতাধিক আমদানীকারক রয়েছে। ফলে ম্যানুফ্যাকচারারের অথরাইজেশন লেটার চাওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

আরো অভিযোগ রয়েছে, ‘ইলেকট্রনিক টেন্ডার, ঝুট-ঝামেলা নেই আর’ সরকারের এই ধরনের টেন্ডার প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলছে ক্রয় কর্তৃপক্ষ। সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাগুলোতে ক্রয়াদেশ বা ঠিকা কার্য প্রক্রিয়া সহজ করতে সরকার ইজিপি চালু করলেও সঠিক সময়ে তা বাস্তবায়ন করতে অনীহা অসাধু ক্রয় কর্তৃপক্ষের। ন্যাশনাল ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্টে (ই-জিপি) নজরদারি করছে না সিপিটিউ কর্তৃপক্ষ। ফলে ইজপি’কে জটিল করে তুলছে টেন্ডার কর্তৃপক্ষ। অভিজ্ঞতার শর্ত জুড়ে দেয়ায় ইজপি’তে টেন্ডার সাবমিট করতে পারছেন না অনেক ব্যবসায়ী।

টেন্ডার ইনফরমেশন ফরম অনুযায়ী দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোন ধরনের মামলায় বা ঝামেলায় জড়িত কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছে। মূলত কোন প্রতিষ্ঠান এ ধরনের তথ্য দিবে কিনা তা সন্দেহ সরবরাহকারীদের। প্রতিষ্ঠানটির কত বছরের জেনারেল এক্সপেরিয়েন্স রয়েছে, একই ধরনের পণ্যের কতটি চুক্তি রয়েছে, এসব চুক্তির মূল্য কত, কোন সময়ে বা বছরে এসব চুক্তি করা হয়েছে, তরল সম্পত্তির ব্যাক প্রত্যয়ন রয়েছে কিনা— এমন কিছু অবান্তর শর্ত দেওয়া হয়েছে এই টেন্ডারের ডকুমেন্ট শিটে (টিডিএস)।

টেন্ডার ডকুমেন্ট সিট (টিডিএস) এর শর্তানুযায়ী, এ ই-টেন্ডার অনলাইনে দাখিলের সময় এই পণ্যের ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অরগানাইজেশন (আইএসও) অথবা হোম স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফিকেট থাকতে হবে পণ্যের গুণগত মান নির্ধারণে। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন পত্রের কপি জমা দিতে হবে। ৯০/১২০ দিনের মধ্যে এই টেন্ডারের কার্যক্রম শেষ করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। টেন্ডার গ্রহীতার যোগ্যতা হিসেবে অনলাইনে সাবমিটের সময় জেনারেল এক্সপেরিয়েন্স, পূর্বে এই পণ্য বা সমজাতীয় পণ্য সরবরাহের দলিলাদি, চুক্তিপত্রের সংখ্যা, চুক্তিপত্রের মূল্য ও সময়, পণ্য সরবরাহের উৎপাদন ক্ষমতা এবং সিডিউল ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত তরল সম্পদ এবং কার্যকরি মূলধনের সক্ষমতা প্রত্যয়ন করতে হবে।

আরো অভিযোগ রয়েছে, সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে অধিকমূল্যে পণ্য সরবরাহের চুক্তি সম্পাদনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে কিনা ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কৌশলে বিতাড়িত করা হচ্ছে সর্বাধিক সরবরাহকারীকে। সরবরাহকারীদের মতে, যেহেতু এই পণ্যের বাজার সর্বত্র রয়েছে সেহেতু কর্তৃপক্ষ বিশেষ কোন সরবরাহকারীর ইচ্ছাকৃত শর্তারোপ না করে সাধারন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সরবরাহকারীদের সুযোগ দিলে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ক্রয়াদেশ চুক্তি সম্পাদন সম্ভব।

আরও পড়ুন