২ নভেম্বর ২০২৫

‘অবৈধ’ সম্পদ বিক্রির তোড়জোড় ওসির, ভেস্তে দিল দুদক

বাংলাধারা প্রতিবেদক »

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার সাবেক ওসি মো. শাহজাহান। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অর্জন করেছিলেন অবৈধ সম্পদ। নিজের এসব অবৈধ সম্পদকে বৈধ করতে স্ত্রীকে বানিয়েছেন পোল্ট্রি ব্যবসায়ী। কিন্তু লাভ হয়নি তাতেও। স্ত্রীসহ আটকে গেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার জালে। এরপর এসব অবৈধ সম্পদ বিক্রির তোড়জোড় শুরু করে এ দম্পতি। কিন্তু এবারও তা রুখে দেয় দুদক।

জানা যায়, মামলার তদন্ত চলাকালে ওসির স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তারের নামে থাকা নগরীর লালখান বাজারের হাই লেভেল রোডের ‘পরশ মঞ্জিল’ নামে গড়া দুই গন্ডা দুই কান্তি ৪ দন্তক জায়গার ওপর ৬ তলা বাড়ি এবং কক্সবাজারের সদর থানাধীন ঝিলংজা মৌজার বর্থিত পৌরসভায় ৪ কাঠা ভিটে বিক্রির চেষ্টা শুরু করে আসামিরা।

এরপরই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম গত ৩০ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে এসব সম্পত্তিসহ ফেরদৌসি আক্তারের নামে থাকা অন্যান্য সম্পদ অবরুদ্ধ করা এবং ক্রোক করার আবেদন করলে আদালত ১ সেপ্টেম্বর আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদুল হক মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ওসি শাহজাহানের স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তারের নামে যেসব সম্পদ রয়েছে, তা যেন হস্তান্তর না করতে পারে, সে বিষয়ে আদালতে আবেদন করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্পদগুলো অবরুদ্ধ এবং ক্রোক করার আদেশ দেন। ইতোমধ্যে এসব সম্পদ রিসিভার নিয়োগের কার্যক্রমও চলছে।’

প্রসঙ্গত, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করায় গত ২৮ জুলাই সাবেক ওসি শাহজাহান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারা, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারা, ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৭ সালে লোহাগাড়া থানার ওসি মো. শাহজানের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান করলে এর সত্যতা মিলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ শাহজাহান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসি আকতারের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির নির্দেশ দেওয়া হয়।

২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল দুদকে দাখিল করা ফেরদৌসি আক্তারের সম্পদ বিবরণীতে দেখা গেছে, অসৎ উদ্দেশ্যে একে অপরের সহযোগিতায় অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার, দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে এক লাখ ৭১ হাজার ৭৩৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য প্রদান, এক কোটি ৪৮ লাখ চার হাজার ৪১৩ টাকার সম্পদ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করে ভোগদখলে রাখার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ফেরদৌসি আক্তার ২০০৬-০৭ থেকে ২০২০-২০২১ কর কছর পর্যন্ত ঘরভাড়া হতে আয়, বৈদেশিক রেমিট্যান্স, ব্যবসার আয় ও অন্যান্য উৎস থেকে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা বৈধ আয় করলেও তিনি আয়কর রিটার্নে পোল্ট্রি খামার ও মৎস্য খামার থেকে আয় দেখালেও দুদকের অনুসন্ধানে ওই ব্যবসা সম্পর্কিত সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ব্যবসা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি মৎস্য ও পোল্ট্রি খামারে বিদ্যুৎ সংযোগের রেকর্ড, পরিবেশ ছাড়পত্র, খামারের লেনদেন সংক্রান্ত ব্যাংক স্টেটমেন্ট, মালামাল কেনাবেচার বিল ভাউচারসহ প্রামাণ্য রেকর্ডপত্র দেখাতে পারেননি।

তার স্বামী ওসি মো. শাহজাহানের সহযোগিতায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে পোল্ট্রি ও মৎস্য খামার দেখিয়ে ২ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৭৩৫ টাকা ভুয়া আয় প্রদর্শন করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাধারা/আরএইচআর

আরও পড়ুন