২৪ অক্টোবর ২০২৫

অমানবিক আচরণ নয়; চাই করোনাযোদ্ধা চিকিৎসক

শাহ আব্দুল্লাহ আল রাহাত »

পিতার করুণ মৃত্যু, ৫ হাসপাতাল ঘুরে ও জায়গা হয় নি স্বামীর, স্ত্রীর সামনে মৃত্যু। খবরের পাতায় প্রকাশিত এই মৃত্যুগুলোর দৃশ্য আমাকে ভাবিয়েছে দু’ভাবে। প্রথমত, আল্লাহর সামনে হাজির হওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের বিষয়ে এবং দ্বিতীয়ত, চিকিৎসা নামক মৌলিক অধিকার আর কত মৃত্যু হলে পরিপূর্ণ হবে!

মৌলিক অধিকার হনন করে এই মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারেনি। পারবার কথা ও না।তাই মৃত্যুগুলো আমায় ভাবিয়েছে আবার হতাশায় নিমজ্জিতও করেছে। তবে আমরা কি ঐ মানুষগুলোর প্রাণের বিনিময়ে এই সংকটময় সময়ে সমাধান খুঁজবো নাকি ঐ মানুষগুলোর প্রাণের বিনিময়ে এই সংকটময় সময়টাকে আরো বেশি অস্থির করে তুলবো?

যেখানে অন্যায় হবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলা হবে- সে বিষয় নিশ্চিত করণে আমরা তরুণ প্রজন্ম বরাবরই উদ্যমী, সাহসী। তবে কথা সেটি নয়, কথা হচ্ছে পত্রিকার পাতায় ভেসে ওঠা ঐ মৃত্যুগুলোর জন্য দায়ী কারা? এমন প্রশ্নের জবাবে হয়তো হাসপাতালগুলোর প্রতি ঘাড়ত্যাড়া করে লাল চোখে সবাই তেড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তাহলে সহজ ভাষায় এসব মৃত্যুর জন্য দায়ী যে কোনো হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা কোনো ডাক্তার।

তাই যদি হয় তাহলে প্রেস ক্লাবের সামনে আবার চট্টগ্রামের রাজপথ গরম করার জন্য আন্দোলন শুরু করলাম, অনশন করলাম, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর জন্য প্রতিবাদ করলাম কিংবা ফেসবুকজুড়ে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে শুরু করলাম কষাই নামে নানা সমাচার। তাতে ফলাফল আর যাই হোক, সংকটময় এই সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২৪ ঘন্টা করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া ডাক্তাররাও পড়ে যাবে চরম হতাশায়।

কেননা দেশের ৯৫ শতাংশ ডাক্তার করোনা যুদ্ধে নিজেদের সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে প্রতিনিয়ত নিয়োজিত রেখেছে করোনা যুদ্ধে। বাকি ৫ শতাংশ ডাক্তার যদি কষাই হয় তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে বাকি ডাক্তারদের এই পরিস্থিতিতে হতাশায় নিমজ্জিত করা চরম অমানবিক। কারণ চিকিৎসার নামে বহু আগে থেকে এই দেশে রমরমা বাণিজ্য হয়ে আসছে। তখন থেকে যদি আমাদের টনক নড়তো তাহলে করোনার এই দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে এই মৃত্যুগুলোর সাক্ষী আমাদের হতে হতো না।

আমি আন্দোলনকে ভালোবাসি, ভালোবাসি সংগ্রাম। তবে আমরা আন্দোলন কিংবা সংগ্রাম প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইদানিং বারবার ভুল করছি। যেখানে আন্দোলনের প্রয়োজন আছে সেখানে কিছুই করছি না বরং যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানে আন্দোলন করে গুজবের মতো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছি।

আবার আসা যাক, যেখানে বলেছিলাম ডাক্তার নামক কষাইদের কথা। যাদের কাছে জীবনের চেয়ে দামি কচকচে টাকার নোট। তাহলে কি তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া না? কথা হচ্ছে বিরুদ্ধাচরণের জন্য আমরা অনেক সময় পাবো, তবে যদি জীবন চলে যায় সেটি আর পাওয়া যাবে না। তাই আন্দোলন নয় বরং খোঁজতে হবে সমাধানের পথ, কাজ করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।

চট্টগ্রাম কিংবা সারাদেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সরকারিভাবে নজরদারি বাড়াতে হবে। এই হাসপাতালগুলোতে মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত সবধরনের মানুষের স্বল্প খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেসব ডাক্তারদের জন্য চিকিৎসকের মতো পবিত্র পেশা কলঙ্কিত হয় তাদের স্থায়ীভাবে অকেজো ঘোষণা করা উচিত।

সরকারি হাসপাতালগুলোতে বাড়াতে হবে আইসিইউ ব্যবস্থা। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলো যদি কষাই খানায় রুপান্তরিত হয় তাহলে অবিলম্বে সব বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা উপযোগী চিকিৎসাসেবা চালু করে সরকারি হাসপাতালগুলো সাধারণ চিকিৎসা সেবার জন্য ছেড়ে দিতে হবে।

সম্প্রতি জিইসি মোড়ে অবস্থিত একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি জানালে সেখানে সরকার দলীয় ভাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠনের মহানগর ইউনিটের কয়েকজন ছাত্রনেতা এগিয়ে আসার পরে বাধ্য হয়ে ভর্তি নেয় কর্তৃপক্ষ। এভাবে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে।

পুরো চট্টগ্রামের উত্তর-দক্ষিণ মিলিয়ে সবকটি উপজেলার মানুষ এখন চিকিৎসা সেবার জন্য শহরমুখী। ফলে অতিরিক্ত চাপ বাড়ছে শহরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। চিকিৎসক সংকটে রোগীর সংখ্যা অত্যাধিক।

প্রত্যেকটি উপজেলা অবস্থিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে এবং স্ব-স্ব উপজেলায় অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে ভাগ করে কিছু অংশ করোনা উপযোগী চিকিৎসাসেবা হিসেবে এবং বাকি অংশ সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।বাতিল করতে হবে মাইল টু মডারেট ব্যবস্থা। এতে করে শহরের ডাক্তার এবং হাসপাতালের ওপর রোগীর চাপ কমবে।

এজন্যে জনমত গড়ে তুলতে হবে। এটি হবে সবচেয়ে সহজ সমাধান। এই সময় আন্দোলন করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল না করে বরং সমাধানে পথে হেঁটে চলাই উত্তম। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করলে হয়তো বিপরীত হবে, তাই খোঁজতে হবে সহজ সমাধান।

লেখক : মিরসরাই প্রতিনিধি, বাংলাধারা ডটকম

আরও পড়ুন