বাংলাধারা প্রতিবেদন »
চট্টগ্রাম শহরে প্রায় অর্ধশতাধিক ছোট-বড় কিশোর গ্যাং রয়েছে। জড়িয়ে পড়ছে খুনাখুনি ছাড়াও দখলবাজি-চাঁদাবাজির মতো অপরাধেও। বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন তো করছেই, সাথে পাচার কাজে ব্যবহৃতও হচ্ছে। এছাড়া নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে অস্ত্রও ব্যবহার করে তারা।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য জানায় র্যাব-৭।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম জানান, সাম্প্রতিক সময়ে নগরীর বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় এসব গ্রুপের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এদিন সকাল ১০ টার দিকে নগরীর চকবাজারের বালি আর্কেড শপিং মল এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং ‘ডট গ্যাং’ গ্রুপের প্রধানসহ সাত সদস্যকে আটক করে র্যাব।
আটককৃতরা হলো- গ্রুপের প্রধান হোসাইনুল আমিন মিম (১৬), সামিউল ইসলাম (১৬), আহনাফ শাহরিয়ার (১৬), মো. শরিফুল ইসলাম (১৬), শানিপ শাহীদ (১৬), মাশহাদ সিদ্দিকী (১৬) ও আবু তারেক (১৬)। তারা সবাই চট্টগ্রামের স্বনামধন্য সরকারী স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র।
লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম আরও জানান, কিশোর গ্যাং সদস্যদের বিষয়ে নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর গোয়েন্দা নজরদারী শুরু হয়। নজরদারীর একপর্যায়ে দেখা যায়, নগরের বিভিন্ন এলাকার একটি গ্রুপ ফেসবুক আইডি খুলে তাদের বিভিন্ন অপকর্মের স্থির চিত্র এবং ভিডিও চিত্র ধারন করে আপলোড করেছে। পরবর্তীতে বিশেষ একটি তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকাল দশটায় নগরের চকবাজার থানার নবাব সিরাজউদৌলা রোড বালি আর্কেড শপিং সেন্টারের সামনে থেকে কিশোর গ্যাং ‘ডট গ্যাং’ গ্রুপের প্রধানসহ ৭ সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
‘ডট গ্যাং’ গ্রুপের প্রধান গ্রেফতার হোসাইনুল আমিন প্রকাশ মিম। ‘ডট গ্যাং’ নামের ফেসবুক এবং হোয়াটস্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে মিম নিজে কন্ট্রোল করতো। তার নেতৃত্বে নগরের জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় অনেক ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তার বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও আছে। মিমের বাবা একজন চিকিৎসক এবং মা চাকুরিজীবী। গ্রুপের প্রধান মিমের সঙ্গে মাশহাদ হোসেন একই স্কুলে পড়া লেখা করেছে, সেই সুবাধে তাদের পরিচয়। মাশহাদ জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় অনেক ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং হতাহতের ঘটনায় মিমের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে থেকে কাজ করতো। সামিউল আমিন জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় ৪ থেকে ৫টি মারামারিতে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, সবাই চট্টগ্রামের একটি কোচিং সেন্টারের নিয়মিত ছাত্র ছিল। সেখানে থেকে তাদের সবার সঙ্গে পরিচয় এবং একসঙ্গে চলা ফেরা ও আড্ডা দেওয়া শুরু হয়। আড্ডা দেওয়ার সময় কথিত একটি গ্রুপ তাদের কাজে কর্মে বাধা দিতে থাকে এবং অনেক মারধরও করে। মূলত এখান থেকেউ ‘ডট গ্যাং’ গ্রুপটির সৃষ্টি ও কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম থেকেই গ্রুপটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল মিম। মিম তার নিজের নামের একটি পেইজ এবং হোয়াটস্যাপে গ্রুপ তৈরি করে। সেখানে তাদের কার্যক্রমের বিভিন্ন স্থীর চিত্র এবং ভিডিও চিত্র আপলোড করত। তারা তাদের সকল প্রকার অপকর্মে ভিডিওগুলো পেইজে আপলোড করে ফলোয়ার্স বাড়ানোসহ সুনাম এবং খ্যাতি অর্জন করতে চেয়েছিল। এছাড়াও তারা নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে ইভটিজিং, ছিনতাই, দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে জাড়িত ছিল। তাদের এমন কাজে স্থানীয় বড় ভাইরা মদদ দিত বলে জানা গেছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাধারা/এআই













