চট্টগ্রাম নগরের ভয়ানক বায়েজিদ নগরী। অপরাধ আর অপকর্ম এই এলাকার নিত্যদিনের কর্মযজ্ঞ। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি আর অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি নিত্য দিনের বিষয়। পাহাড় বেষ্টিত এলাকা হওয়ায় আবাসনের নামে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়। তেল চুরি সহ অবৈধ দোকান স্থাপন , ফুটপাত দখল বানিজ্যের মতো অনিয়ম এখানে পরিণত হয়েছে নিয়মে। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে চলছে এসকল অপকর্মের হিড়িক। খুন, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি সবকিছুতেই সর্বেসর্বা চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ এলাকা।
পুলিশের দেয়া তথ্য বলছে শুধুমাত্র জানুয়ারী মাসে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশের ৬টি অভিযানে আটক ২১ জন। আটকদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিশেষ ভাবে তৈরী করা দেশীয় অস্ত্র। বেশিরভাগ আসামির বিরুদ্ধে পূর্বে একাধিক মামলা রয়েছে।
পুলিশের তথ্য বলছে ১৫-২০ জনের বাহিনী নিয়ে চার থানা এলাকায় দাপিয়ে বেড়ান সাজ্জাদ। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, চাঁদাবাজির মামলা আছে ১০টি ৷ দুর্ধর্ষ এই সন্ত্রাসী হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ।
খুন, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি—সবকিছুতেই সর্বেসর্বা শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘ছোট সাজ্জাদ’। যাকে অনেকেই চেনে ‘বুড়ির নাতি’ নামে। পুলিশের চোখে ‘ধুলো দিতে’ ওস্তাদ তিনি। পুলিশি অভিযানে ধরা খেতে খেতে পালিয়েছিলেন গুলি ছুঁড়ে। গত পাঁচমাসে ট্রিপল মার্ডারের এই আসামিকে ধরতে পুলিশ কেবল চেষ্টা করেই যাচ্ছে! তবে, দুর্ধর্ষ এই সন্ত্রাসীর নাগাল না পেলেও এবার ধরা পড়েছে তার ৬ সহযোগী।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার কুলগাঁও খলিল শাহ মাজার সংলগ্ন একটি বাড়ির দোতলা থেকে ডাকাতি প্রস্তুতিকালে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ৬ জন হলেন—মো. আসিফ (২২), মো. হাসান (২০), মো. ফয়সাল (১৯), মো. আজিম উদ্দিন (২৩), মো. রিফাদ (১৯) এবং মো. জুয়েল (২০)।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এই দুজনের অপরাধ জগতের ‘গুরু’ সাজ্জাদ হলেও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সারোয়ার বাবলা এবং সাজ্জাদ হোসেনের মধ্যে আছে দ্বন্দ্ব। গত ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। জামিনে বেরিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাজ্জাদ। সবসময় কোমরে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করেন তিনি।
পুলিশ বলছে, সাজ্জাদের গ্রামের বাড়ি জেলার হাটহাজারী হলেও তার অপরাধ জগত নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ থানাসহ চার থানাজুড়ে বিস্তৃত ৷ ওই চার থানা এলাকার তিন লাখ বাসিন্দার মূর্তিমান আতঙ্ক সাজ্জাদ হোসেন। ব্যবসায়ী তাহসীনসহ গত ৫৩ দিনে তিনটি খুনের ঘটনায় সাজ্জাদ সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
একের পর এক খুনে জড়িত দুর্ধর্ষ এই সন্ত্রাসীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করতে না পারায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে এলাকার মানুষ।
পুলিশ জানায়, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের কালারপুল এলাকায় তিনজন অস্ত্রধারী সহযোগী নিয়ে এক ভবন মালিকের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা চাইতে আসেন সাজ্জাদ। তিনজনের হাতেই ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। সেদিন শটগান হাতে ছিল সাজ্জাদ। ভবন মালিককে খুঁজতে খুঁজতে শটগান থেকে গুলি ছুড়তে থাকেন সাজ্জাদ। সেদিন তার সঙ্গে আসা এক অস্ত্রধারীর নাম মো. হাছান বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজীর দৃশ্য ভবনটির সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়ে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক চাঁদা তোলেন সাজ্জাদ। নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল ও পাঁচলাইশ, অক্সিজেন এলাকার অনন্যা, শীতলঝর্ণা, কালারপুল এবং শহরের সীমান্তবর্তী হাটহাজারীর কুয়াইশ এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত।
এ দিকে গেলো বছরের আগষ্টে সোমবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে তার গুলির নিশানা হন নগরের চান্দগাঁও থানাধীন শমসের পাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীন (২৬) ৷
সোমবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে বহদ্দারহাট শমসের পাড়ায় সংঘটিত আফতাব উদ্দিন তাহসীন খুনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকদের জানান, ট্রাকে করে আনা বালু আনলোড করাচ্ছিলেন তাহসীন। কিছুক্ষণ পর সেখানে আসে একটি নোহা মাইক্রোবাস। প্রথমে গাড়ির ভেতর থেকে আফতাবকে লক্ষ্য করে একটি গুলি ছোড়া হয়। এরপর সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ও তার সহযোগী মাহমুদ, হাছানসহ চারজন গাড়ি থেকে নেমে গুলি করতে থাকেন। তারা আফতাবের উরু ও পায়ে পরপর চারটি গুলি করে চলে যান। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল তাহসীনের রক্তাক্ত নিথর দেহ উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে এর আগেই ঘটনাস্থলে নিহত হন ব্যবসায়ী তাহসীন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সারোয়ার বাবলা এবং সাজ্জাদ দুজনেরই ‘গুরু’ এক সময়ের দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার চট্টগ্রামে আলোচিত বহদ্দারহাটে ‘এইট মার্ডার’ মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাজ্জাদ হোসেন। সাজ্জাদ বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতে পলাতক আছেন।
এছাড়াও অশান্ত বায়েজিদকে শান্ত করতে পুলিশি পদক্ষেপ খুব একটা চোখে পড়ছে না। চসিকের তেল চুরি অবাদে দখল বানিজ্য, পাহাড় কাটা পাশাপাশি মাদকে ও সয়লাব এই বায়েজিদ এলাকা। এসকল ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাস্ততার অযুহাতে ধন্যবাদ জানিয়ে কল কেটে দেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান।