কক্সবাজার প্রতিনিধি »
ডাকাতি বন্ধের দাবিতে রামুতে ডেইরি ও প্রান্তিক খামারিদের মানববন্ধন হয়েছে। রবিবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে রামু উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রামুতে গরু চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্ত্রধারী চোর-ডাকাত চক্র নির্বিঘ্নে গরু লুট করায় বর্তমানে অনেক গরুর খামার বন্ধ হয়ে গেছে। গরু লালন-পালনকারী অনেকে রাত জেগে গরুর গোয়াল পাহারা দিচ্ছেন। এরপরও চোর-ডাকাত চক্রের অপতৎপরতা বন্ধ হওয়া দূরের কথা উল্টো সাম্প্রতিক সময়ে গরু চুরি-ডাকাতি আরো বেড়েছে। গরু লুটের সময় অনেক গরু মালিককে হত্যা, কুপিয়ে কিংবা মারধর করে আহত করার ঘটনাও ঘটেছে।
তারা আরো বলেন, গত ১০ জানুয়ারি ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড অফিসের চর (চরপাড়া) এলাকায় কৃষক মো. আলীর বাড়িতে গরু ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতে সংঘবদ্ধ অস্ত্রধারী ডাকাতদল গৃহকর্তা আলীর ভাতিজা মীর কাশেমকে নির্মমভাবে হত্যা করে দুটি বড় সাইজের গরু লুট করে নিয়ে যায়। রামু থানা থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে এ দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ ডাকাতি প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি ঘটনার পরও পুলিশের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। যা গরু খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের হতাশ করেছে।

মানববন্ধনে জানানো হয়, গত ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর ভোরে রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মধ্যম মেরংলোয়া গ্রামের মোবাশ্বের আহমেদের বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির সদস্য পরিচয় দিয়ে ৩টি গরু লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। একইদিন রাতে চাকমারকুল ইউনিয়নে নুর আহমেদের বাড়ি থেকে বড় সাইজের ২টি গরু লুট করা হয়। এছাড়া গত ৮ জানুয়ারি রামুর রাজারকুল ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার নুরুল হকের বাড়িতে অস্ত্রধারী ডাকাত দল হানা দিয়ে ৪টি গরু লুট করে নিয়ে যায়। গরু গুলোর আনুমানিক বাজার মুল্য ৪ লাখ টাকা। সাম্প্রতিক সময় রামু উপজেলায় একের পর এক দুর্ধর্ষ গরু চুরি-ডাকাতির ঘটনা বৃদ্ধিতে জনমনে আতংক বিরাজ করছে।
বক্তারা উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, কেবল গরু চুরি নয় রামুতে বসতবাড়ী, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানেও চুরি-ডাকাতি, খুন, অপহরণের মত ঘটনা বেড়েছে। গরু চুরি-ডাকাতির ঘটনা মহামারী আকার ধারণ করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
উপস্থিত সকলে গরু চুরি-ডাকাতি, মানুষ হত্যা এবং সকল প্রকার অপরাধ দমনে জড়িত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, রামু উপজেলা ডেইরী মালিক ও প্রান্তিক খামারি সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আকতার কামাল, দিদারুল আলম।
খামারী জাহাঙ্গীর আলম, ওমর ফারুক, সমরেশ, কলিমুল্লাহ, আনুমিয়া, নুর নাহার, জাহানারা বেগমসহ বিক্ষুব্ধ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এতে অংশ নেন।
মানববন্ধন শেষে গরু খামারি ও প্রান্তিক কৃষকরা অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার লক্ষ্যে স্থানীয় সাংসদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন সরকারি দপ্তরে অনুলিপি প্রেরণ করেছেন।
মানববন্ধনে অভিযোগের বিষয়ে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন বলেন, রামুর খামার থেকে গরু চুরি হয়েছে এমন কোন নজির নেই। যা হয়েছে, ব্যক্তি কৃষকের বাড়ি থেকে। অভিযোগকারিরা চুরি ও ডাকাতির ভেদাভেদ বুঝেন না, যা হয়েছে তাকে ডাকাতি বলা যাবে না। চুরির বিষয়ে শতভাগ নিরাপত্তা দেয়া যায় কিনা? আপনারাই (সাংবাদিকগণ) বলেন।
অতীতের চেয়ে চলমান সময়ে আইনশৃংখলা অনেক ভালো দাবি করে ওসি আরো বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে। মানববন্ধনে উপস্থিত খামারীরা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করেন না। সাম্প্রতিক গরু লুট ও এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার বিষয়ে চেয়েও অভিযোগ পাচ্ছেন না বলে উল্টো অভিযোগ করেন ওসি।













