১০ ডিসেম্বর ২০২৫

আওয়ামী লীগের পথ চলার ইতিহাস

সৈকত জোহা  »

আজ ২৩ শে জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭২ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়। পরবর্তীতে মুসলিম শব্দটি সংগঠনের নাম থেকে বাদ দেওয়া হয় ১৯৫৫ সালে ।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ১৯৮১ সালে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সকল বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে টানা নবমবারের মত আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায়। উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলের মুল কৃতিত্ব বাংলাদেশে নামক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম একই সাথে উচ্চারিত হবে।

এ প্রসঙ্গে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ, তাঁর “ আওয়ামী লীগ; উত্থানপর্ব ১৯৪৮-১৯৭০” গ্রন্থে লিখেছেন,
“আওয়ামী লীগের ইতিহাস আলোচনা করতে গেলে অবধারিতভাবে চলে আসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নাম। একজন ব্যক্তি, একটি রাজনৈতিক দল ও একটা দেশ যখন এক মোহনায় মিশে যায় তখন তাদের আলাদা করে দেখা বা বোঝা কঠিন একটা কাজ।“

মহিউদ্দিন আহমেদ তাঁর গ্রন্থে আওয়ামী লীগের আত্মপ্রকাশ সম্পর্কে লিখেছেন, “১৯৪৮ সালে পাকিস্তান হওয়ার পরে ঢাকায় মুসলিম লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন মাওলানা আকরাম খান এবং খাজা নাজিমুদ্দিন।

সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশেম নেতৃত্বাধীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অনুসারী যে প্রোগ্রেসিভ [উদারপন্থী) নেতারা ছিলেন, তারা তখন সেখানে নিজেদের অবহেলিত মনে করছিলেন। তখন তারা মোঘলটুলিতে ১৫০ নম্বর বাড়িতে একটি কর্মী শিবির স্থাপন করেছিলেন। সেখানে তারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার কথা চিন্তা করছিলেন। কলকাতা থেকে এসে শেখ মুজিবুর রহমান তাদের সাথে যুক্ত হন।

তখন টাঙ্গাইলে প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ পদত্যাগ করার কারণে শূন্য হওয়া একটি উপনির্বাচনে দুই দফায় মুসলিম লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন মওলানা ভাসানী এবং শামসুল হক। কিন্তু তাদের দুজনের নির্বাচনী ফলাফলই অবৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

তখন তারাও এসে এই মুসলিম কর্মীদের সঙ্গে মিলে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার কথা ভাবতে শুরু করেন। তারা একটি সভা ডাকেন। সেই সভা ডাকার প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইয়ার মোহাম্মদ খান।

কিন্তু সেই সভা করার জন্য কোন অডিটোরিয়াম পাওয়া যাচ্ছিলো না। তখন কে এম দাস লেনের কাজী হুমায়ুন রশীদ তার মালিকানাধীন রোজ গার্ডেনে সভা করার আহবান জানান।

সেখানেই ২৩শে জুন বিকালে আড়াইশো-তিনশো লোকের উপস্থিতিতে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর প্রস্তাব অনুযায়ী সেই দলের নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’।

সেই সঙ্গে পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনের নাম রাখা হয় ‘নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’, যার সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।“

আওয়ামী লীগ যখন গঠিত হয় তখন বঙ্গবন্ধু জেলে ছিলেন। জেলে থাকা অবস্থায় তিনি দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন। দলের নামকরণ নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিল এমন, ‘’পাকিস্তান হয়ে গেছে, সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দরকার নাই। একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হবে , যার একটা শুধু ম্যানিফেস্টো থাকবে। ভাবলাম, সময় এখনো আসে নাই, তাই যারা বাইরে আছেন,তাঁরা চিন্তাভাবনা করেই করেছেন।“

পাকিস্তান আমলে স্বাধিকার আন্দোলনের লড়াইয়ে বার বার নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলেন দলটির নেতা-কর্মীরা।

১৯৫৮-৬২ সালে সামরিক শাসনের সময় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা অনেক বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। কেউবা জেলে বন্দী হয়েছেন আবার কেউবা রাজনীতি থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন নির্যাতন সইতে না পেরে। স্বাধীনতার আগে-পরে আওয়ামী লীগ বেশ কয়েকবার ভাঙ্গনের মুখে পড়েছিল। অনেক বড় নেতাই দল ছেড়ে নতুন দল গঠন করলেও রাজনীতির মূল স্রোতে থাকতে পারেন নি । দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা দলের মূল স্রোতের সাথে থেকেছেন সবসময়।

গত ১৩ বছর ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলেও স্বাধীনতার আগে ২১ বছর আর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ২৯ বছর মোট ৫০ বছর বিরোধী দল হিসেবে রাজপথে ছিল আওয়ামী লীগ ।

আওয়ামী লীগ নিয়ে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মূল্যায়ন ঠিক এরকম, ‘’সময়ের বিচারে আওয়ামী লীগ একটি পুরোনো রাজনৈতিক দল। এ দেশে অনেক প্রতিষ্ঠানই এত দিন টিকে না। রাজনৈতিক দল তো নয়ই। আওয়ামী লীগে ভাঙন ধরেছে বারবার। তবুও এর মূল ধারাটি রয়ে গেছে সচল। আওয়ামী লীগ বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছে বিরোধী দল হিসেবে। দীর্ঘদিন সরকারে না থেকেও প্রতিকূল পরিবেশে একটি রাজনৈতিক দল যে টেকসই হতে পারে , আওয়ামী লীগ তার একটি বড় উদাহরণ।”

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন