২৪ অক্টোবর ২০২৫

আজ কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল’র জন্মদিন

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

মুহম্মদ জাফর ইকবাল। একজন লেখক, বিজ্ঞানী, পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদ। তাকে বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখা ও জনপ্রিয়করণের পথিকৃৎ হিসাবে বলা হয়। আজ তার ৬৮ তম জন্মদিন। ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর অর্থাৎ আজকের এই দিনে মুহম্মদ জাফর ইকবাল সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন।

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার বড় ভাই এবং রম্য ম্যাগাজিন উন্মাদের সম্পাদক, লেখক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব ছোট ভাই। বাবা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফয়জুর রহমান ও মা আয়েশা খাতুন। বাবার পুলিশের চাকরির সুবাদে তার ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়।

জাফর ইকবাল ১৯৬৮ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৭০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন যথাক্রমে ১৯৭৫ ও ১৯৭৬ সালে। তিনি ১৯৮২ সালে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।  তার বিষয় ছিল – ‘Parity violation in Hydrogen Atom.  পিএইচডি করার পর বিখ্যাত ক্যালটেক থেকে তার ডক্টরেট-উত্তর গবেষণা সম্পন্ন করেন।

১৯৮৮ তে তিনি বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ (বেলকোর) এ গবেষক হিসাবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৪ পর্যন্ত সেখানেই কাজ করেন। ওই বছরেই তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। তিনি একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মনোনীত হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত থেকে ৪ অক্টোবর অবসর গ্রহণ করেন।

বেলকোতে বিজ্ঞানী হিসেবে গবেষণাকালীন মুহম্মদ জাফর ইকবাল তিনটি বিষয়ে পেটেন্ট করেন। তার অসংখ্য গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্বের সব বিখ্যাত জার্নালে প্রকাশিত হয়। এছাড়া বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে নিজেও গবেষণার প্রবন্ধ পাঠ করেন।

সাহিত্যমনস্ক পরিবারের সন্তান জাফর ইকবাল খুব অল্প বয়স থেকেই লিখতে শুরু করেন। তিনি প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখেন ৭ বছর বয়সে। তার প্রথম প্রকাশিত সায়েন্স ফিকশন গল্প ‘কপোট্রনিক ভালোবাসা’। এটি সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়। তার লেখা অনেক কিশোর উপন্যাস থেকে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া তিনি নিয়মিত কলাম ও বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার সময় জাফর ইকবাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ড. ইয়াসমিন হকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ইয়াসমিন হক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। তাদের দুই ছেলে নাবিল ইকবাল ও মেয়ে ইয়েশিম ইকবাল।

২০১০ সালে যুগোপযোগী জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সপক্ষে ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে সর্বদা সোচ্চার তিনি। ২০০৯ সালে লেখেন ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ নামে ছোট আকারের একটি বই।

গুণী এই লেখকের এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন, ভৌতিক রচনাবলি, শিশুতোষ রচনাবলি, ইতিহাস, কিশোর উপন্যাস, উপন্যাস, স্মৃতিচারণা, ছোটগল্পসহ দেড় শতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। গণিত অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি।

সাহিত্য কর্মের জন্য মুহাম্মদ জাফর ইকবাল পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ২০০৪; শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে ২০০৫ সালে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার; কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক, ২০০২;
খালেদা চৌধুরি সাহিত্য পদক, বাংলা ১৪১০; শেলটেক সাহিত্য পদক ২০০৩; ইউরো শিশুসাহিত্য পদক ২০০৪; মোহা. মুদাব্বর-হুসনে আরা সাহিত্য পদক ২০০৫; মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্মাননা পদক ২০০৫।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন