২৩ অক্টোবর ২০২৫

আড়াইশো বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলা মিরসরাইয়ের প্রাণের উৎসব

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে আড়াই শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধারণ করে এবারও অনুষ্ঠিত হলো ইছামতির মেলা। রোববার (২০ এপ্রিল) দিনভর মেলা প্রাঙ্গণ পরিণত হয় হাজারো মানুষের প্রাণের উৎসবে।

ইছামতি দেবী (গঙ্গা দেবী) মন্দিরের পুণ্যভূমিকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এ মেলা শুরু হয় পূজা অর্চনার মধ্য দিয়ে। এক সময়ের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা আজ রূপ নিয়েছে এক সর্বজনীন সাংস্কৃতিক মিলনমেলায় যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলেমিশে অংশ নেয়।

লোকজ ঐতিহ্যের ঝলক, প্রাণের স্পন্দন চারদিকে

মেলায় দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে শতাধিক দোকানি এসেছেন তাঁদের বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে। মাটির তৈরি খেলনা, শো-পিস, বাঁশ-বেতের হস্তশিল্প, কাঠের জিনিস, শঙ্খের গয়না, লোহার সামগ্রী ও গ্রামীণ খাদ্যদ্রব্যে মেলায় যেন এক ঐতিহ্যবাহী বাংলার ফিরে দেখা। শিশুদের জন্য ছিল নানা ধরনের খেলনা, আর গৃহস্থালি পণ্যে ছিল ক্রেতাদের ভিড়।

ভোর থেকেই শুরু হয় দেবীর পূজা। এরপর পুরো দিনজুড়ে চলে বিকিকিনি, গানের সুর আর উৎসবের আমেজ। বাদ্যযন্ত্রের ছন্দে মুখরিত হয় গোবিন্দপুরের আকাশ-বাতাস। মেলার পরদিন চতুষ্প্রহর ব্যাপী নামসংকীর্তনের মাধ্যমে শেষ হবে এই উৎসব।

মেলায় আসা মৃৎশিল্পী হরি চন্দ্র পাল বলেন, “প্রতি বছর ইছামতির মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও শো-পিস বিক্রি করি। এখানকার ক্রেতাদের সাড়া বরাবরই ভালো। এই মেলা আমাদের মতো কারিগরদের জন্য এক বড় সুযোগ।”

দর্শনার্থী গৃহবধূ পপি রানী দে ও অপর্ণা নাথ বলেন, “বৈশাখ মানেই প্রাণের উৎসব। আর ইছামতির মেলা আমাদের শেকড়ের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে যুক্ত করে।”

স্থানীয় শিক্ষক হৃদয় রঞ্জন দে বলেন, “এই মেলা কেবল একটি ধর্মীয় আয়োজন নয়, বরং এটি বাঙালি সংস্কৃতির এক অনন্য উদাহরণ—যেখানে সবাই মিলেমিশে উৎসব করে।”

মেলার ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি সুমন দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক মিন্টু কুমার পাল বলেন, “ইছামতির মেলা শুধু একটি আয়োজন নয়, এটি আমাদের গর্বের স্মারক। আগে বলী খেলা, পালাগান ও আসরগান থাকলেও এখন সেগুলো নেই। তবে আগামীতে আরও বৃহৎ পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।”

তারা আরও জানান, মেলা নির্বিঘ্ন রাখতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি এলাকাবাসী, রাজনৈতিক দল ও সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের সহযোগিতা ছিল প্রশংসনীয়।

শিবলু/এআরই/বাংলাধারা

আরও পড়ুন