২৪ অক্টোবর ২০২৫

আদালতে জবানবন্দি : টাকা ও স্বর্ণালংকারের লোভে হত্যা করা হয় সেই বিমান ধরকে

বিমান ধর নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেফতার আইয়ুব আলী শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত-২-এর বিচারক নাজমুন নাহারের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তারিক রহমান আলোচিত ক্লু-লেস এই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান।

পুলিশ সুপার মো. তারিক রহমান বলেন, অপেশাদার খুনি রিকশাচালক জিল্লুর রহমান অনেক দিন ধরে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধরকে ফলো করছিলেন। তিনি জানতে পারেন চট্টগ্রাম শহরে বিমান ধরের সাতটি স্বর্ণের দোকান আছে। বিমান ধর চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রতিদিন রাতে মোটরসাইকেলযোগে পটিয়ার গ্রামের বাড়িতে আসা-যাওয়া করেন। তার ব্যাগে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার আছে। সেই লোভেই গত ৩ সেপ্টেম্বর রিকশাচালক জিল্লুর একই এলাকার রাজমিস্ত্রি আইয়ুব আলীকে সঙ্গে নিয়ে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে বিমান ধরের পথ রোধ করেন। জিল্লুর রহমান বিমান ধরকে গলায় দা (অস্ত্র) ধরে যা কিছু আছে সব নেওয়ার জন্য ধস্তাধস্তি করতে থাকেন। একপর্যায়ে জিল্লুর রহমান ও আইয়ুব আলী বিমান ধরকে ধরে কোপাতে থাকেন। এ সময় বিমান ধর বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করলে তাকে জবাই করে আইয়ুব আলী পুকুরের পাড় ধরে পশ্চিম দিকে আর জিল্লুর রহমান স্বাভাবিকভাবে রিকশা চালিয়ে চলে যান। এ সময় হত্যাকারীরা হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র এবং বিমান ধরের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি পাশে রেখে যায়।

মো. তারিক রহমান বলেন, ‘আলোচিত এই মামলা ছিল একেবারেই ক্লু-লেস। পুলিশ সুপার, দক্ষিণের পুলিশ সুপারের (ক্রাইম) দিকনির্দেশনায় আমরা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্ত শুরু করি। খুনিদের ধরা খুব মুশকিল ছিল। তারা পেশাদার খুনি নন বলে তাদের ধরতে বেগ পেতে হয়েছে আমাদের। তারা অপেশাদার খুনি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে এলাকায় রিকশা চালাতে থাকেন জিল্লুর রহমান আর আইয়ুব আলীও রাজমিস্ত্রির কাজ করতে থাকেন সাধারণের মতো করে। মূলত তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধরকে পথ রোধ করে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা ও স্বর্ণের বার ছিনতাই করে রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাওয়া। সে কারণেই তাকে খুন করা হয়েছে। মামলার তদন্ত শুরুর ১০ দিনের মধ্যে শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যায় সরাসরি জড়িত উপজেলার জঙ্গল খাইন ইউনিয়নের আইয়ুব আলীকে (১৯) ফটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দং এলাকায় তার নানাবাড়ি থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুরো হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে বর্ণনা দেন।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে শাহগদী মার্কেট এলাকা থেকে রিকশাচালক জিল্লুর রহমান ও বাপ্পু ধর নামের দুজনকে আটক করা হয়। সেদিন তাঁদের পটিয়া জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক বিশ্বেস্মর সিংহের আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তাদের পৃথক পৃথক পাঁচ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে আইয়ুব আলী ও জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, তাঁরা দুজন মিলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধরকে রাতের আঁধারে পথ রোধ করে টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু এ সময় নিহত বিমান ধরের সঙ্গে টাকা ও স্বর্ণালংকার কিছুই ছিল না। হত্যার সময় বিমান ধর নিজেকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান জানান, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে, তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ওসি (তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন