কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজারের টেকনাফে আত্মসমর্পণ করা আত্মস্বীকৃত ১০১ ইয়াবাকারবারীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার রায় আগামী ২৩ নভেম্বর ঘোষণার দিনধার্য্য করা হয়েছে। এর প্রাথমিক কার্যক্রম হিসেবে আদালতে হাজির হওয়া ১৭ জনের জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। একইসাথে মামলার অবশিষ্ট ৮৪ জন আসামীর জামিন বাতিল করে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল মামলাটির যুক্তিতর্ক শেষে এ ১৭ ইয়াবাকারবারীকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এমনটি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।
মামলার কার্যক্রম চলাকালে কাঠগড়ায় উপস্থিত ১৮ আসামীকে আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলেও মো. হাশেম অংকু নামের এক আসামী কৌশলে পালিয়ে গেছে। মামলাটির গত ধার্য্য় তারিখে উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ভাইসহ আত্মস্বীকৃত ইয়াবাকারবারি স্বজনরা আদালতে উপস্থিত থাকলেও মঙ্গলবার আদালতে মামলাটি চলাকালে তাদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
কারাগারে প্রেরণ করা আসামীরা হলো, নুরুল হুদা মেম্বার (৩৮), শাহ আলম (৩৫), আবদুর রহমান (৩০), ফরিদ আলম (৪২), মাহবুব আলম (৩৪), রশিদ আহমদ খুলু (৫৪), মো. তৈয়ব (৪৬) জাফর আলম (৩৭), আবু তৈয়ব, (৩১) আলী নেওয়াজ (৩১), মোঃ আইয়ুব (৩৫), কামাল হোসেন (২৬), নুরুল বশর কালাভাই (৪০), আবদুল করিম মাঝি (৪০), দিল মোহাম্মদ (৩৪), মো. সাকের মিয়া মাঝি (২৮) এবং মো. কাশেম প্রকাশ আকবর আলী ।
পিপি জানান, ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারের টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল মাঠে ১০২ জন ইয়াবাকারবারী আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণকৃত ১০২ জন আসামীর মধ্যে একজন মৃত্যুবরন করে। কক্সবাজারের তৎকালীন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি প্রধান অতিথি, তৎকালীন আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী, কক্সবাজারের ৪ জন সংসদ সদস্য, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি গোলাম ফারুক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ উর্ধতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরো জানান, দীর্ঘ প্রস্তুতির পর এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তাদের কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট এবং ৩০ টি দেশীয় তৈরি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে ওসি (তদন্ত) এবিএমএস দোহা বাদী হয়ে পৃথক ২ টি মামলা দায়ের করেন (মাদক মামলা: ২৭/২০১৯ ইংরেজি, জিআর : ৯৯/২০১৯ (টেকনাফ) এসটি : ৩৫৪/২০২০) আর অস্ত্র মামলা : ২৬/২০১৯, জিআর : ৯৮/২০১৯ (টেকনাফ), এসটি : ৭৩/২০২০)। ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্র সমুহ টেকনাফের মহেশখালীয়া পাড়াস্থ বীচ হ্যাচারী নামক একটি পরিত্যক্ত একটি হ্যাচারী থেকে উদ্ধার করা হয় বলে মামলা ২টির এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
মামলায় রাষ্ট্র পক্ষে ২১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং আসামীদের পক্ষে সাক্ষীদের জেরা করা হয়। আসামীদের পক্ষে আদালতে টেকনাফের বাহারছরার শামলাপুর পুরানপাড়ার নাছির উদ্দিন ও বাহারছরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজ উদ্দিন এবং টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন ভুলু সাফাই সাক্ষি দেন। আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষা ফলাফল যাচাই, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়াসহ মামলাটি বিচারিক কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গত ১৪ নভেম্বর থেকে যুক্তিতর্ক শুরু করে ১৫ নভেম্বরও চলে।
জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী, অ্যাডভোকেট সলিমুল মোস্তফা, অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন আসামীদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।













