২৪ অক্টোবর ২০২৫

‘আদিম’র মস্কো জয়

বিনোদন ডেস্ক »

গণঅর্থায়নে নির্মিত ‘আদিম’ এর রাশিয়াযাত্রা বৃথা যায়নি; মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবের নেটপ্যাক জুরি অ্যাওয়ার্ড জিতেছে বাংলাদেশের এ সিনেমা। শুক্রবার মস্কোর স্থানীয় সময় দুপুরে নির্মাতা যুবরাজ শামীমের হাতে তুলে দেওয়া হয় জুরি অ্যাওয়ার্ড। গণমাধ্মেকে সেই অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন উচ্ছ্বসিত শামীম। তিনি বলেন, ‌‘মনে হচ্ছে আমি হয়ত কোনো ঘোরের মধ্যে আছি। ফেস্টিভাল জার্নির পুরো বিষয়টা এখন পর্যন্ত আমার কাছে কল্পনা মনে হচ্ছে। এই অর্জন আমার বাবা শাহজাহান ভূঁইয়ার নামে উৎসর্গ করছি।’

মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে নির্বাহী প্রযোজক মোহাম্মদ নূরুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে ২৭ অগাস্ট মস্কোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন যুবরাজ শামীম। ৩০ অগাস্ট মস্কোতে হয় আদিমের ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার শো। এর আগের বিকেলে ‘আদিম’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনেও আসেন নির্মাতা।

সংবাদ সম্মেলনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে শামীম বলেন, ‘এ রকম অভিজ্ঞতা একেবারেই প্রথম। আমার কনফিডেন্স অনেক বেড়েছে। সাংবাদিকরা সিনেমা দেখে আমাদের সঙ্গে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে অংশ নিয়েছিলেন। অনেক কথা হয়েছে তাদের সঙ্গে। সেগুলোর মধ্যে থেকে একটা কথা বলতে চাই। তারা বলেছেন, সিনেমাটি দেখে তাদের মনে হয়েছে, তারা অনেক সুখে আছেন।’

এরই মধ্যে স্থানীয় পত্রিকায় সিনেমাটি নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে বলেও জানান শামীম। গত সোমবার সকালে ভারতের পুষ্পা সিনেমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মৈত্রী মুভি মেকারসের চিফ অপারেটিং অফিসার পি. চিরঞ্জীবীর আলাপ হয়েছে শামীম ও নুরুজ্জামানের। চিরঞ্জীবী ‘আদিম’ দেখার আগ্রহের কথা সে সময় তাদের জানিয়েছিলেন।

সাধারণত যেভাবে সিনেমা হয়, সেভাবে ‘আদিমের’ জন্য প্রযোজক খোঁজেননি তিনি। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি নির্মাণে তিনি দ্বারস্থ হয়েছিলেন সাধারণ মানুষের।

গণ অর্থায়নের এই উদ্যোগে প্রতি ইউনিট শেয়ার পাঁচ হাজার টাকা ধরে সিনেমার শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল। আর তা দিয়েই নির্মাণের পুরো খরচ উঠে আসে। আদিমের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাদশা, দুলাল, সোহাগী, সাদেক। চিত্রগ্রহণে ছিলেন আমির হামযা। সাউন্ড ও কালার করেছেন সুজন মাহমুদ।

নির্মাতা যুবরাজ শামীম বলেন, ‘এ সিনেমায় কোনো পেশাদার অভিনেতা-অভিনেত্রী নেই। সবাই যে যার নিজের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।’

নির্মাতা চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে টঙ্গীর ব্যাংক মাঠ বস্তিতে বসবাস করেছেন টানা সাত মাস। সেখানে থেকেই তিনি স্থায়ী বাসিন্দাদের রিহার্সাল করিয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত করিয়েছেন।

সে সময় নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে এ নির্মাতাকে। পুলিশ তাকে একবার ‘মাদকসেবী’ মনে করে গ্রেপ্তার করে। আবার কখনও স্থানীয় মাদক কারবারিরা তাকে সাংবাদিক মনে করে হুমকি দিয়েছে।

কিছু মানুষ অসহযোগিতা করলেও বেশিরভাগ মানুষের আন্তরিক সহযোগিতায় শেষমেশ এ বছর নির্মাতা চলচ্চিত্রটির কাজ শেষ করেন। এরপর মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অফিসিয়াল বিভাগে প্রদর্শনের জন্য মনোনীত হয় আদিম।

আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ইতালির রিলিজিয়ন টুডে ফিল্ম ফেস্টিভালে আদিমের ইতালিয়ান প্রিমিয়ার হবে। সেখান থেকেও যুবরাজ শামীম উৎসবে যোগদানের আমন্ত্রণ পেয়েছেন বলে জানালেন।

যুবরাজ শামীমের নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রসায়নের ব্যানারে নির্মিত হয়েছে এ চলচ্চিত্র। আদিমের সহপ্রযোজক হিসেবে যুক্ত আছে সিনেমাকার ও লোটাস ফিল্ম।

পরিচালকের প্রত্যাশা, দেশের দর্শকরাও ‘আদিম’ দেখুক। তবে দেশে কবে এ সিনেমা মুক্তি দেওয়া যাবে, সে বিষয়ে এখনও তিনি নিশ্চিত নন। তিনি বলেন, ‘দেশে সিনেমা মুক্তি দিতে চাইলে প্রযোজক সমিতির সদস্য হতে হয়। সেন্সর সার্টিফিকেট নিতে হয়। আমাদের মত স্বাধীন নির্মাতার জন্য সমিতির সদস্য হওয়া কষ্টকর দীর্ঘ এক প্রসেস। সব ঠিক থাকলে এ বছরের শেষের দিকে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে মুক্তি দিতে চাই।’

কোনো কারণে হলে মুক্তি দিতে না পারলে ওটিটিতে আদিম মুক্তি পাবে বলে জানান এ নির্মাতা।

আরও পড়ুন