চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় সিডিএর আওতাভুক্ত বিভিন্ন মৌজায় সরকারি নতুন নিবন্ধন ফি দিগুণ করায় জমি ক্রয়-বিক্রয় কমে এসেছে।
এতে বিপাকে পড়েছেন দলিল দাতা-গ্রহীতা ও সংশ্লিষ্টরা। যার কারণে রাজস্ব আদায় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। উৎসে কর থেকে বাঁচতে জায়গা-জমির দানপত্র দলিলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
জানা যায়, পরিবারের সদস্যদের বিদেশ যাওয়া, মেয়ে বিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে জমি বিক্রি করতে আসেন দাতারা। তবে নিবন্ধন ফি বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই জমি বিক্রি বা ক্রয় করতে গিয়ে প্রতি শতক জমিতে আগে ১২ হাজার ২২৪ টাকা উৎসে কর দিলেও এখন দিতে হচ্ছে তার দ্বিগুণ প্রায় ২৫ হাজার টাকা।
অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি বাঁচাতে দাতা-গ্রহীতারা করছেন দানপত্রের দলিল। আবার দলিল রেজিস্ট্রি করতে আসা ব্যক্তিদের কাগজপত্রের সমস্যা দেখিয়ে কিছু দলিল লেখকের কাছে জিম্মি হয়ে দিতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
সাব-রেজিস্ট্রি সূত্র জানায়, নতুন অর্থবছরে জমি নিবন্ধন খরচ দিগুণ বেড়ে যাওয়ায় গত জুলাই-আগস্ট মাসে জমি নিবন্ধন হয়েছে আগের চেয়েও কম। সরকারি উৎসে কর বৃদ্ধির ফলে অনেকেই করছেন না জমি বেচা-কেনা।
এর বেশিরভাগ দলিল হচ্ছে দানপত্র দলিল। যেখানে প্রতি মাসে ৫০০ দলিল নিবন্ধন হতো, বর্তমানে দলিল নিবন্ধন হচ্ছে মাসে শতাধিকের নিচে। দুই মাসে কবলার সংখ্যা খুবই কম।
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরতরা জানান, প্রতি শতকে ২৫ হাজার টাকা গেইন ট্যাক্স পরিশোধ করা ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে কবলা দলিলের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। সরকার যে বেশি রাজস্ব পেত, এখন সেই রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এমনকি অনেক মৌজায় জায়গার প্রতি শতকে ২৫ হাজার টাকা মূল দাম হলেও একই সমপরিমাণ কর দিতে হচ্ছে জমি নিবন্ধন ফি হিসেবে।
আনোয়ারা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল করতে আসা একজন দলিল দাতা জানান, দলিল নিবন্ধন ফি অনেক বেড়ে যাওয়ায় জমি নিবন্ধন কমে গেছে। আগে উৎসে কর প্রতি শতকে ১২ হাজার ২২৪ টাকা দিয়েছিলাম।
কিন্তু বর্তমানে প্রতি শতকে সরকারকে দিতে হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা। দলিল লেখকরা আগে নির্ধারিত ফি নিলেও এখন কাগজপত্রের বিভিন্ন ইস্যু দেখিয়ে নিচ্ছেন বাড়তি টাকা।
যার কারণে আমরা সাধারণ জমি বিক্রেতারা এখন তাদের কাছে জিম্মি। তাই আগের পদ্ধতিতে জমি নিবন্ধন করতে পারলে দলিল সৃজন ও রাজস্ব বাড়বে।
আনোয়ারা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত আরিফুল ইসলাম বলেন, নতুন নিবন্ধন ফি নির্ধারণের ফলে সাফ কবলা দলিল সৃজন একেবারে কমে গেছে।
বেশির ভাগ দাতা-গ্রহীতা নিবন্ধন ফি কমাতে দানপত্র করছেন। উৎসে কর বৃদ্ধির ফলে এখন দৈনিক গড়ে ১০ থেকে ১৫টির বেশি দলিল হচ্ছে না। যার ফলে দাতা ও গ্রহীতার মাঝে সাফ কবলা দলিল তৈরিতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
আনোয়ারা উপজেলা সাব-রেজিস্টার জোবায়ের হোসেন বলেন, অনেকেই খরচ বাঁচানোর জন্য জমি রেজিস্ট্রিতে দাতা-গ্রহীতা দানপত্র করছেন। কিন্তু দানপত্র দলিলে কোনো এক সময়ে দাতার ওয়ারিশগণ প্রশ্ন তুলতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, আগে দৈনিক শতাধিক জমি নিবন্ধন হলেও গত জুলাই থেকে জায়গা দলিল নিবন্ধন অনেক কমে এসেছে।