২৬ অক্টোবর ২০২৫

আনোয়ারায় সাব-রেজিস্টারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

দলিল লেখকদের কলম বিরতিতে বিপাকে সেবাগ্রহীতারা

চট্টগ্রামের আনোয়ারা সাব-রেজিস্টার জোবায়ের হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে ক্ষোভে ফুঁসছে দলিল লেখক ও সেবাগ্রহীতারা। তাঁর অপসারণের দাবিতে গত রবিবার (১৯ অক্টোবর) থেকে কলম বিরতি পালন করছে আনোয়ারা দলিল লেখক সমিতি। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম।

জমি ক্রয়-বিক্রয়ের কাজে আসা সেবাগ্রহীতারা দফায় দফায় ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে। কেউ কেউ অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

আনোয়ারার হাইলধর ইউনিয়নের খাসখামা এলাকার সেবাগ্রহীতা আবু তাহের বলেন, “আমার জমির দলিল রেজিস্ট্রি করতে পাঁচ দিন ধরে আসছি। দলিল লেখকরা কাজ বন্ধ রেখেছে। বলছে, সাব-রেজিস্টার ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ নেন না। এখন আমরা কোথায় যাব?”

আরেক সেবাগ্রহীতা আব্দুল হান্নান বলেন, “আমরা তো সরকারের নিয়ম মেনে ফি দিতে রাজি, কিন্তু যদি অফিসের লোকজন অতিরিক্ত টাকা দাবি করে, তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?”

দলিল লেখক সমিতির সদস্য সচিব মো. ইব্রাহিম মুন্সী অভিযোগ করে বলেন, “সাব-রেজিস্টার নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত টাকা দাবি করছেন। এতে সমিতির ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ জানালেও তিনি কোনো কর্ণপাত করছেন না। ফলে বাধ্য হয়েই আমরা কলম বিরতি শুরু করেছি।”

তিনি আরও জানান, “অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ না হলে বড় আকারের কর্মসূচি নেওয়া হবে। প্রয়োজনে চট্টগ্রাম জেলা দলিল লেখক সমিতির সহায়তায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিস অবরোধসহ লাগাতার আন্দোলন চলবে।”

এদিকে কলম বিরতির কারণে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দৈনিক গড়ে ৫০ থেকে ৬০টি দলিল রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব সরকার পায়—যা বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ।

সাব-রেজিস্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটি নিয়ে নিউজ করার দরকার নেই। সমাধান হয়ে যাবে।” কখন হবে জানতে চাইলে বলেন, “আগামীকাল (মঙ্গলবার) আসেন, আমি সব সমাধান করে দেব।”

তবে চট্টগ্রাম জেলা সাব-রেজিস্টার খন্দকার জামিরুল রহমান বলেন, “আনোয়ারা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ঘটনাটি আমরা জেনেছি। অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ মানুষের মতে, আনোয়ারা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত। এই সাব-রেজিস্টারের যোগদানের পর দুর্নীতির মাত্রা আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন