শীতের হাওয়া বইতে শুরু করতেই উপকূলজুড়ে ব্যস্ততা বেড়েছে শুঁটকি উৎপাদনে। ঝলমলে রোদের নিচে রাসায়নিক ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে শুকাতে সারি সারি মাছের ডালা সাজানো হয়েছে। দূর থেকে দেখতে যেন সাগরপারের বুকে রঙিন কোনো চাদর বিছানো।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার উপকূলীয় ৩ নম্বর রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা ঘাটকুল ও উঠান মাঝির ঘাট এখন শুঁটকি পল্লি হিসেবে পরিচিত। বঙ্গোপসাগরের চরজুড়ে কালো প্লাস্টিকের চাদর বিছিয়ে শত শত শ্রমিক শুঁটকি প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বড় জাল দিয়ে সাগর থেকে ধরা মাছ কূলে আনার পরই শুরু হয় বাছাই। ছোট–বড় চিংড়ি, কোরাল, সুরমা, লইট্টা, পোয়া ও ফাইস্যা বিভিন্ন মাছ মাচায় তুলে রোদে শুকাচ্ছেন শ্রমিকেরা। শুকানোর পর বস্তায় ভরে পাঠানো হয় আড়তে। পুরো চরজুড়ে রোদ আর শীতের হাওয়ায় ভেসে বেড়ায় শুঁটকির গন্ধ।

শ্রমিকেরা জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আড়তদারের অধীনে কাজ করে দৈনিক ৬০০–৭০০ টাকা আয় করেন। এই মজুরিতেই চলে তাদের পরিবার ও সন্তানের পড়াশোনা। শীত মৌসুমেই মূলত তারা বছরজুড়ে সংসার চালানোর মতো আয় করতে পারেন। উঠান মাঝির ঘাট এলাকায় দেখা যায় শ্রমিকেরা ভরপুর রোদে মাছ শুকাচ্ছেন, কেউবা শুকনো মাছ বস্তায় ভরে আড়তে নিয়ে যাচ্ছেন। শিশু-কিশোরেরাও সহযোগিতা করছে কাজে।

আড়তদাররা জানান, প্রতি মৌসুমে কয়েক হাজার শ্রমিক শুঁটকির কাজে যুক্ত হন। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৪–৫ দিনে ছোট মাছ শুকানো যায়; বড় মাছ শুকাতে লাগে প্রায় এক সপ্তাহ। রাসায়নিক ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়ায় এ শুঁটকির চাহিদা বেশি। শুকানো শেষে বস্তায় ভরে চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, ঢাকা, নোয়াখালী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। এখান থেকে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে অর্গানিক শুঁটকি।

চাক্তাইয়ের আড়তদাররা জানান, আনোয়ারার শুঁটকি এখন আলাদা ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত। এগুলো অর্গানিক, পরিস্কার ও গন্ধে মিষ্টি হওয়ায় বিশেষ করে প্রবাসীদের কাছে খুব জনপ্রিয়। প্রতি বছরই রপ্তানি বাড়ছে।
আনোয়ারা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল হক বলেন, গত বছর আনুমানিক ৩৫০ টন শুঁটকি উৎপাদিত হয়েছিল। এ বছর ৫০০ টন ছাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ডিডিটি বা কীটনাশক ব্যবহার না করতে জেলেদের নিয়মিত সচেতন করা হচ্ছে এবং ২০০ জেলেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিষমুক্ত শুঁটকি স্বাদে ভালো ও স্বাস্থ্যসম্মত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, শুঁটকি শিল্প আনোয়ারার ঐতিহ্য। নিয়মিত তদারকি চালানো হচ্ছে। কেউ অবৈধ রাসায়নিক ব্যবহার করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সরকারি প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।













