২৯ অক্টোবর ২০২৫

আনোয়ারা উপকূলে ৫৭০ কোটি টাকার বেড়িবাঁধে বছর না যেতেই ভাঙ্গন

খালেদ মনছুর  »

পানি লাগলেই ভেঙ্গে যাচ্ছে বালি দিয়ে নির্মিত ঝুরঝুরে বেড়িবাঁধ। নির্মাণের এক বছর না যেতেই বেড়িবাঁধের বেশিরভাগ অংশ চলে গেছে নদীগর্ভে। ঘূণিঝড় ইয়াসের কারণে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধ। আর একটু ভাঙলেই লোকালয়ে ঢুকে যাবে জোয়ারের পানি।

গতকাল বুধবার(২৭ মে) দুপুরে উপকূলীয় রায়পুর ইউনিয়নের সাঙ্গু কোস্টগার্ড বরফকল এলাকা, দক্ষিণ পরুয়া পাড়া, গলাকাটাঘাট এলাকায় গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়। এসময় স্থানীয়দের পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারদলীয় এক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে দেখা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা ছৈয়দ মাঝি বলেন, ভূমিমন্ত্রীর মাধ্যমে সরকার উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ৫৭০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতাদের যোগসাজশে মাটির পরিবর্তে বালি দিয়ে নিম্মমানের বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে। আজকে বছর না যেতেই সেটা জোয়ারের পানিতে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, আনোয়ারার উপকূলীয় বেড়িবাঁধের সাঙ্গু কোস্টগার্ড স্টেশন থেকে বরফকল পর্যন্ত, দক্ষিণ পরুয়াপাড়া ও সরেঙ্গা এলাকায় নির্মিত বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মাটির পরিবর্তে বালি দিয়ে নির্মাণ করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হাতে টোকা দিলেই ঝুরঝুর করে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে সাগরে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি অনুপম চক্রবর্তী জানান, কোস্টগার্ড সাঙ্গু স্টেশন থেকে ফকিরহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের অংশটি সরাসরি পানি উন্নয় বোর্ড থেকে জরুরী বরাদ্ধ হিসেবে কাজ করা হয়। এই কাজে কোনো সাব ঠিকাদার ছিলেন না। প্রায় এক কোটি টাকার এই কাজে স্থানীয় হাসান মাঝি মাটি ভরাটের কাজটি করেন।

এসময় মাটির পরিবর্তে শঙ্খ নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করে সেটি দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেন। এছাড়া কোনো ধরণের জিও ব্যাগ না দেয়ায় বছর না যেতেই ধসে যাচ্ছে নদীতে। এই অবস্থা বার আউলিয়া, দক্ষিণ পরুয়াপাড়া, সরেঙ্গাসহ আরো বিভিন্ন স্থানে হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সাব ঠিকাদার এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এমনটি হয়েছে বলে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে।

জানা যায়, একদিকে সাগর আর অন্যদিকে নদী বেষ্টিত আনোয়ারা উপকূলীয় রায়পুর, বারশত ও জুঁইদন্ডী ইউনিয়নে প্রায় ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এই তিনটি ইউনিয়রে জনসাধারণের সুরক্ষার জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়ে থাকে। কিন্তু, এর আগে অদৃশ্য কারণে বার বার নিম্নমানের বেড়িবাধের কারণে বছর না যেতেই বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

স্বাধীনতার পরবর্তী ৫০ বছরের মধ্যে এবার আনোয়ারা উপকূলের জন্য সর্বোচ্চ ৫৭০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছে সরকার। স্থানীয় সাংসদ ও ভূমিমন্ত্রীর সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রচেষ্টায় এই বিপুল পরিমাণ বরাদ্ধ পাওয়া সম্ভব হয়েছে। মোটা অংকের বরাদ্ধ পাওয়ার পর আশায় বুক বাঁধে উপকূলের জনসাধারণ। উপকূলবাসী মনে করছেন এবার আর তাদের বাপ দাদার ভিটা ছেড়ে কোথাও যেতে হবেনা। প্রথম পর্যায়ে ৩২০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। সেখান থেকে উপকূলীয় সরেঙ্গা, ফকিরহাট, ঘাটকুল, দক্ষিণ পরুয়াপাড়াসহ বিভিন্নস্থানে বেড়িবাঁধের কাজ করা হয়। । অর্থ সংকুলান না হওয়ায় বার আউলিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ও বাধ কোনটাই নির্মাণ করা হয়নি। গেল বছর এই অংশ দিয়ে সাগরের পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই বছর বর্ষার আগে ভাঙ্গা অংশটি ভরাট করে দেয়া হয়েছে।

এদিকে গতবারের বরাদ্ধের টাকায় বেড়িবাঁধের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় বরাদ্ধের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫৭০ কোটি করা হয়। বর্তমানে বার আউলিয়াতে মাটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ব্লকের কাজ চলমান রয়েছে। পিচের মাথা তেকে পারকী বিচ এলাকায়ও ব্লকের কাজ চলছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন আগামী বছরের মধ্যে আনোয়ারা উপকূলে একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমদ বলেন, কোস্টগার্ডসহ বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। আমি পাউবোর এক্সচেঞ্জের সাথে কথা বলেছি। এগুলো জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করে দেয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, আমরা এবার আনোয়ারায় পানি ঢুকা বন্ধ করতে পেরেছি এটাই স্বস্তি। ফকির হাট এলাকার কাজটা আমি যোগদানের আগের । তারপরও আমি সেটা মাথায় রেখেছি। বর্ষার মধ্যে এখানের জন্য নতুনভাবে ডিজাইন করে বর্ষার পরে কাজ করার ব্যবস্থা করা হবে। আগামী বছরের মধ্যে আমরা বাকী কাজগুলো শেষ করে একটি টেকসই বেড়িবাঁধ উপকূলবাসীকে উপহার দিতে পারব।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন