বাংলাধারা প্রতিবেদন»
আজ ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। ব্যক্তি, সম্প্রদায় ও সমাজের কাছে সাক্ষরতার গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনের ১৪ তম অধিবেশনে ১৯৬৬ সালের ২৬ অক্টোবর এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ঘোষণা করা হয়। ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে দিবসটি যথানিয়মে পালিত হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করা আবশ্যক। তাই ২০৩০ সালের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা স্থীর করে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। এ বছর দিনটির প্রতিপাদ্য
‘মানব পুনরুদ্ধারে সাক্ষরতা: ডিজিটাল বিভক্তি হ্রাসকরণ‘
এ দিবসটি নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস সায়মা।
শিক্ষার মান বৃদ্ধিই হোক সাক্ষরতা দিবসের অঙ্গীকার
জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সুশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। একটি দেশের সাক্ষরতা হার নির্ভর করে সে দেশের জনগণ কতটুকু দক্ষ ও অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন। তাই উন্নয়নের সাথে সাক্ষরতার গভীর সংযোগ রয়েছে। সাক্ষরতার হার বিস্তারে পাশের চেয়ে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি,কারিগরি শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা জরুরী। বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ইংরেজি ভাষার দক্ষতার উপর আলাদা জোর প্রদান করতে হবে। শিকড় শক্ত করতে প্রাথমিক শিক্ষায় দক্ষ শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। সংবিধানের ১৭নং অনুচ্ছেদে নিরক্ষরতা দূর করার লক্ষ্যে রাষ্ট্র অবতৈনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০৩০ সালের মধ্যে দক্ষ ও মানসম্মত শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রাটি অর্জনের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে যাওয়ার কাজ সহজ হয়ে যাবে। করোনা মহামারিতে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা করছে গবেষকরা যেটা দেশের উন্নয়নে বিরাট বাধা সৃষ্টি করবে তাই এই পরিস্থিতি নিরূপণে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান,স্কুলে টিপিন প্রোগ্রাম চালু করা যেতে পারে। এছাড়াও নারী শিক্ষায় কুসংস্কার দূর করতে হবে এবং তাঁদেরও দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে।পাশাপাশি শিক্ষা আইনের বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করা সম্ভব হবে।
মো.আবু তারেক
শিক্ষার্থী,আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সাক্ষরতা দিবস হোক নিরক্ষর মুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গিকার
বস্তুত শিক্ষা মানুষের অন্তর্নিহিত একটি গুণ। এটিকে কোনো প্রতিষ্ঠান, আকার এবং নিক্তি দিয়ে মাপা যায়না। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শিক্ষাকে কিছু স্তর এবং রুপায়নে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমানে অন্তত অক্ষরজ্ঞান থাকাকে সাক্ষরতা এবং না থাকাকে নিরক্ষরতা হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পরই দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৭ নং ধারায় অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষাকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এরপর ১৯৭৪ সালে কুদরত-এ-খুদা প্রণীত “বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন” ১৯৮৩ সালের মধ্যে ১ম থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষার উপর নজরারোপ করে। পরবর্তীতে নব্বই দশকে সরকার খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষার উদ্যোগ নেয়। তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়নি। দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখনো নিরক্ষর। বাংলাদেশ বর্তমানে একটি উঠতি অর্থনীতির দেশ আর বাংলাদেশের প্রধান হাতিয়ার হলো মানব সম্পদ। দেশের বিরাট একটি সংখ্যাকে দারিদ্র্য সীমার নিচে ও নিরক্ষর রেখে দেশ কখনও আগাতে পারবেনা বরং সকলকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। সুতরাং শিক্ষাকে সার্বজনীন করার কোনে বিকল্প নেই। বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক “সাক্ষরতা দিবস” পালিত হয়ে আসছে। বর্তমান সরকারের “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ার যে প্রত্যয় এবং কাঙ্ক্ষিত এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার অবশ্যই বাড়াতে হবে। দেশের সর্বত্র শিক্ষার আলো ছড়িয়ে নিরক্ষর মুক্ত দেশ গড়াই উক্ত দিবসের প্রধান লক্ষ্য হোক।
ইস্রাফিল রনি
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সাক্ষরতা হোক দেশের সফলতার চাবিকাঠি
শিক্ষা ও সাক্ষরতা যেন এক মালায় গাঁথা ফুল। প্রত্যেক দেশ ও জাতি শিক্ষাকে উৎসাহিত করে। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন কিংবা শিক্ষা অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশে যাওয়ার উপমা দিয়ে বারবার শিক্ষাকে অনন্য আসনে বসানো হয়েছে। সাধারণত কোন ভাষা পড়তে ও লিখতে পারার জ্ঞান কে সাক্ষরতা বলা হয়। ১৯৬৭ সালে ইউনেস্কো সাক্ষরতার সংজ্ঞা প্রদানের পূর্বে কেবল নাম লিখতে পারাকেই সাক্ষরতা হিসেবে গণ্য করা হতো। ইউনেস্কো সাক্ষরতার সংজ্ঞায় সাক্ষরতা চিহ্নিত করতে তিনটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে। বর্তমানে এই তিনটি শর্ত সামনে রেখেই সাক্ষরতা নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশের বর্তমান সাক্ষরতার হার প্রায় মোট জনগোষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশ। দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী হিসেবে নারীদের সাক্ষরতার গুরুত্বও অপরিসীম। তবে অতীতের তুলনায় বর্তমানে আমাদের দেশের নারী-পুরুষ সকলেরই সাক্ষরতার হার আশাব্যঞ্জক। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে নিরক্ষরতা এখানে বিষফোঁড়ার মতো। দারিদ্র্য বিমোচন, জনসংহতি, ধর্ম নিরপেক্ষতা, স্বাস্থ্য চেতনা, জনসংখ্যা সচেতনতা, লিঙ্গ সমতা, গনতন্ত্রের মতো অবিচ্ছেদ্য বিষয় গুলো বুঝতে এবং ধারণ করতে শিক্ষিত চেতনাসম্পন্ন মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়নে শতভাগ সাক্ষরতার কোন বিকল্প নেই।
কানিজ তানিমা
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সাক্ষরতা প্রবৃদ্ধি, জাতির সমৃদ্ধি!
একটা দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন, সেই দেশে বসবাসরত মানুষের শিক্ষা ও সাক্ষরতার সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে, এরা সমান্তরাল পথেই চলে। যে দেশগুলো সাক্ষরতার হারে অগ্রসর, সে দেশগুলোই উন্নয়নের কাতারে সম্মুখ সারিতে জানান দিচ্ছে নিজেদের সক্রিয় অবস্থান। বর্তমান সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলদেশকে উন্নত দেশের রুপান্তরের যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রতিটি জনগন স্বাক্ষরতার আওতায় আনাটা অতিব জরুরী। তার জন্য বিভিন্ন সময় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও, অনেক সময় তা আলোর মুখ দেখেনা। যার ফলে, সাক্ষরতার হারটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক ধীর গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া, করোনা অতিমারির কারণে বিগত দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, ফলশ্রুতিতে সাক্ষরতা হারের প্রবৃদ্ধি অনেকটা কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে, সামনের দিনগুলোতে কিভাবে সাক্ষরতা হার ত্বরান্বিত করা যায়, কিভাবে ক্ষতিটা পুষিয়ে নিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া যায়, তা নিয়ে সমন্বিত এবং সুসংহত পরিল্পনা জরুরী। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি, শিক্ষিত নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। একটা উন্নত সমাজ কাঠামো বিশিষ্ট, সমৃদ্ধি দেশ বিনির্মানে প্রয়োজনে দেশের প্রতিটি জনগণকে সাক্ষরতার আওতায় আনতে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা সর্বদা বর্তমান থাকুক, সাক্ষরতা দিবসে এটাই ঐকান্তিক প্রত্যাশা।
নাঈম উদ্দীন
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সাক্ষরতার মশাল জ্বলুক ঘরে ঘরে
সাক্ষরতা একটি মানব অধিকার, ব্যক্তিগত ক্ষমতায়নের একটি হাত এবং সামাজিক ও মানব উন্নয়নের একটি মাধ্যম। সাক্ষরতা বলতে মূলত বুঝানো হয় রচনামূলক লেখাপড়া, শিক্ষা ও গবেষণা,নৃতাত্ত্বিক ভাষাগত দক্ষতা। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে আমরা যখন স্বাধীনতা লাভ করি,তখন দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ১৬.৮ শতাংশ। বর্তমানে যা ৭৪.৭০ শতাংশে উঠে এসেছে। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের উচ্চ শিখরে আরোহণ করার প্রতিটি ধাপ সাফল্যের সহিত অতিক্রম করছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে অজ্ঞতা ও নিরক্ষরতার কারণে সমাজে সমস্যার ভিন্ন রূপ দেখা দিয়েছে। তাই সার্বজনীন সাক্ষরতার উদ্দেশ্য হলো সকল শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা, শিক্ষার প্রসার, কুসংস্কার দূরীকরণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মানবসম্পদ তৈরি করা। সর্বোপরি বাংলাদেশসহ প্রত্যেকটি দেশের মানুষের মধ্যে গণসচেতনতার প্রসার ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করা উচিত। জ্বলে উঠুক সাক্ষরতার মশাল, প্রজ্বলিত হোক সমাজ, মোচন হোক সকল অন্ধকার – এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হোক দেশ ও সমগ্র বিশ্ব।
সাদনান তাবাসসুম
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাধারা/এফএস/এফএস