২৯ অক্টোবর ২০২৫

আফগান নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনেত্রী সাবা সাহারা কোথায়?

মুজতবা সউদ, ঢাকা »

গতবছর (২০২০) ২৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন আফগানিস্তানের প্রথম নারী চলচ্চিত্র পরিচালক ও জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী সাবা সাহার। তিনি কাবুলের উপকণ্ঠে একটি লোকেশন দেখতে যাচ্ছিলেন। সে সময় তার গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিলো। এতে তার একজন দেহরক্ষী ও গাড়ির ড্রাইভারও গুলিবিদ্ধ হয়েছিলো।

তদানিন্তন আফগান সরকার হামলাকারীদের বিষয়ে কোন স্পষ্ট ধারণা না দিলেও, অনুমান করা হয়েছিলো এই হামলার ঘটনায় তালেবানরা জড়িত। সাবা সাহার কেবলমাত্র নারী পরিচালক এবং অভিনেত্রীই ছিলেন না, তিনি আফগান পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন বিশেষ কর্মকর্তাও ছিলেন।

নারী অধিকার ও চলচ্চিত্র শিল্পের গুরুত্ব নিয়ে সোচ্চার, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি বিরোধী লড়াইকে উপজীব্য করে চলচ্চিত্র ও টিভি অনুষ্ঠান নির্মাণ করতেন সাবা সাহার। তার পরিচালনার প্রথম ছবি ‘দি ল’ (The Law) মুক্তি পায় ২০০৪ সালে।

আফগানিস্তানে ব্যাপক সাফল্যের পাশাপাশি, বিশ্ব চলচ্চিত্রেও নিজেকে চিনিয়ে দিয়েছিলেন তিনি এই ছবি দিয়ে। ২০০৮ সালে তিনি নির্মাণ করেন ‘পাসিং দি রেইনবো’ (Passing the Rainbow”। পরিচালনার পাশাপাশি এই ছবির অন্যতম প্রধান চরিত্র, একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে অভিনয়ও করেন সাবা। বাণিজ্যিক সাফল্যের পাশাপাশি একটি নান্দনিক ছবি হিসেবেও প্রশংসিত হয়।

২০১১ সালে তিনি নির্মাণ করেন ‘কাবুল ড্রিম ফ্যাক্টরি’ (Kabul Dream Factory)। এ ছবিটিও প্রশংসিত এবং ব্যবসা সফল হয়।

এ ছাড়া আফগান টেলিভিশনে সাবা নির্মাণ করেন ২৪ পর্বের ধারাবাহিক ‘কমিশনার আমানুল্লাহ’। ধারাবাহিকটি নির্মিত হয় আফগানিস্তানের পুলিশ বাহিনীর গল্প নিয়ে।

বলা বাহুল্য নারীদের অভিনয়, চলচ্চিত্র পরিচালনা তো অনেক পরের কথা, নারী শিক্ষা বিষয়েই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী ছিল তালেবানদের। তাই নারী অধিকার বিষয়ে সোচ্চার, অভিনেত্রী এবং চলচ্চিত্র পরিচালকের উপর, তিনজন অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীর আক্রমণে তালেবানদের মদদ থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে, গুলিবিদ্ধ সাবা সাহারকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর, তার বিষয়ে আর কোন সংবাদ চোখে পড়েনি। তিনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন সে বিষয়ে প্রায় একবছরও কোন তথ্য জানা যায়নি।

সম্প্রতি আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছে তালেবানরা। সাবেক সরকারের প্রধান প্রধান ব্যক্তিরা দেশ ছেড়েছেন। রয়ে গেছে সাধারণ মানুষ। তারাই তাদের দেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু নারী শিক্ষা, নারী অধিকার, কর্মক্ষেত্রে নারী বিষয়ে তালেবানদের ইতোপূর্বের দৃষ্টিভঙ্গিতে শঙ্কিত হতে হয়, কী পরিণতি নেমে আসছে, সাবা সাহার মতো আফগানিস্তানের অগ্রসর নারীদের?

যারা চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, শিল্প ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। তালেবানদের ক্ষমতা দখলের পর, সাবা সাহার এখন কেমন আছেন, কোথায় আছেন, আদৌ বেঁচে আছেন কিনা জানি না।

শুধু জানি তিনি ১৯৭৫ সালের ২৮ আগষ্ট, কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন। শ্রদ্ধা এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রার্থনা করি, সাবা সাহার যেখানেই থাকুন, মহান আল্লাহ যেন তাঁর সহায় হন।

বাংলাধারা/এফএস/এআই

আরও পড়ুন