২৫ অক্টোবর ২০২৫

আবারও অস্থির পেঁয়াজের বাজার

তারেক মাহমুদ »

আবারও লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার। পণ্যটির দাম বৃদ্ধির লাগাম টানতে সরকার সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। এতে কয়েক দিনের মধ্যেই ১০ টাকা কমে ৭০ টাকা কেজিতে চলে এসেছিল পেঁয়াজ। কিন্তু পেঁয়াজের সেই কমে আসা দাম স্থিতিশীল থাকেনি। ফের বেড়েছে এর ঝাঁঝ। নগরীর খুচরা বাজারে এখন প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা।

নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে পেঁয়াজের এ বর্ধিত দাম দেখা যায়। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বাড়লেও আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সংকট আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে না আসায় এ বাড়তি দাম।

এসব বাজারে এক সপ্তাহ আগে খুচরা প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে। আর আমদানি করা মিশর ও মিয়ানমার পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা এবং ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে।

অথচ সপ্তাহ যেতে না যেতেই সরবরাহ কমেছে এমন অজুহাতে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। আর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৮ থেকে ১১০ টাকা। একইভাবে পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৬ টাকা। এ সব বাজারে খুচরা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।

বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩০ লাখ মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয় ১৭ থেকে ১৯ লাখ মেট্রিক টনের মত। উৎপাদিত এ পেঁয়াজের ৩০ শতাংশ আবার সংরক্ষণ অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। তাতে চাহিদা পূরণ না হওয়ায় আমদানি করতে হয় ৭ থেকে ১১ লাখ মেট্রিক টন। স্বল্প দূরত্ব আর সহজলভ্যতার কারণে আমদানির বেশিরভাগটা ভারত থেকেই হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে এই উৎপাদনের হার প্রায় ১০ লাখ ৯২ হাজার টন। ভারত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে। যার একটি বড় অংশ এসেছে বাংলাদেশে।

এর আগে ২০১৭ সালের শেষ দিকেও একবার ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে নূন্যতম রপ্তানিমূল্য ৪৩০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করেছিল। তখন খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ৭৫ টাকা কেজিতে পাওয়া গেলেও দেশি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ আমদানিকারকরা জানান, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি-১ (তাহেরপুরী), বারি-২ (রবি মৌসুম), বারি-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন করা হয়। ফলে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৯ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর ভারত থেকে আমদানি করা হয় চাহিদার বাকি অংশ। আর আমদানিকৃত এসব পেঁয়াজই দর উঠানামায় বড় ভূমিকা রাখে।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা প্রতিকেজি পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে ২০ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজে বেড়েছে ১০ টাকা। কারওয়ান বাজার, মানিকদী বাজার, মালিবাগ, কচুক্ষেত বাজার, রামপুরা বাজার, মহাখালী বাজার, আজমপুর বাজার ও উত্তরা বাজারের তথ্য সংগ্রহ করে টিসিবি বলছে, শুক্রবার বাজারগুলোয় আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১৫ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়।

টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, গত সপ্তাহে (১৮ অক্টোবর) আগের সপ্তাহের (১১ অক্টোবর) তুলনায় আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। একইভাবে ওই সপ্তাহেও দেশি পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা।

টিসিবি বলছে, গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯৫ টাকায়। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২৫ অক্টোবর অর্থাৎ এক বছর আগে খুচরা বাজারে এই পেঁয়াজের মূল্য ছিল মাত্র ২৫ টাকা। তবে পেঁয়াজের বাজার অচিরেই স্বাভাবিক হবে বলে মনে করেন টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলে এমনিতেই বাজার স্বাভাবিক হবে।

পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ চেষ্টা চলছে বলেও হুমায়ুন কবির উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢাকা মহানগরীর প্রতিদিন ৩৫ জায়গায় ট্রাকে করে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন