আমন ধানে ব্লাস্টের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার জৈষ্ঠপুরা এলাকার কৃষকরা। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ৩০-৩৫ একর জমির ধান। গত আগস্ট মাসের অতিভারী বৃষ্টিতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির পর ঘুরে দাঁড়িয়ে ব্রি- ৫১, ৪৯, ২৮ ও ২৯ জাতের ধানের আবাদ করেন কৃষকরা, সেই ধানে এখন মই দিচ্ছে ব্লাস্ট। এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। এতে বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকরা।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের জৈষ্ঠ্যপুরা সূর্যব্রর্ত বিল, ব্রহ্মপুত্র বিল ও বড়ুয়া পাড়া বিল ঘুরে দেখা গেছে, একরের পর একর জমির আমন ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত। হলুদ, সাদা ও ধুসর রঙ ধারণ করেছে এসব জমির ধান। প্রায় জমিতে পড়ে আছে পচা খড় বিছালির অবশিষ্ট অংশ। এই এলাকায় শতাধিক কৃষক নিজস্ব জমি ও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেছেন।
জৈষ্ঠ্যপুরা গ্রামের কৃষক সুবল দে জানান, তিনি প্রায় দুই একর জমিতে ব্রি ধান ৪৯ ও ব্রি ধান ২৮ জাতের ধানের চারা রোপণ করেছেন। গত সপ্তাহে তার আবাদ করা আমন ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। ধান বাঁচাতে প্রায় ১ হাজার টাকার ওষুধও দিয়েছেন। তবে কোনো ফল পাওয়া যায়নি। চোখের সামনেই জমির সব ধান শেষ হয়ে গেছে। খড় বিছালিও নেই।

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির পরামর্শে হাজার হাজার টাকার ওষুধ ছিটিয়েও ফল পাচ্ছি না। কৃষি অফিসের লোকজন এখানে আসেন না। তাদের চিনিও না। শুনেছি, একজন উদয়ন আশ্চর্য নামের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন এই এলাকার দায়িত্বে। আমরা বিপদে আছি। অথচ তার দেখা নেই।’
একই কথা জানিয়ে ওই এলাকার কৃষক বাবুল দাশ, উজ্জ্বল চক্রবর্তী, সুজিত দাশ ও নিমাই দে। তারা বলেন, ‘অনেক ধার-কর্জ করে আমন ধানের চাষ করেছি। ফসল বোধয় ঘরে তুলতে পারবো না। সব শেষ হয়ে গেছে।’
জৈষ্ঠ্যপুরা সূর্যব্রত বিলের কৃষক অনিল দেব, দীলিপ দেব, সুকুমার দত্ত, অজিত নন্দী, সন্তোষ চৌধুরী, সঞ্জয় মহাজন ও অরুণ দাশ জানান, তাদের জমির প্রায় ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যে যা পরামর্শ দিচ্ছেন তাই ব্যবহার করে ফসল বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন তারা।

জানা গেছে, ব্রি ২৮ জাতের ধানের চাল অনেটাই সরু ও খেতেও সুস্বাদু। এ ধানের ফসল অন্যান্য জাতের ধানের আগে পাকে। এজন্য কৃষক এ জাতটিকে পছন্দ করে বেশি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উদয়ন আচার্য্য বলেন, ‘ব্লাস্টের কারণে প্রায় ২ একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এ রোগ প্রতিরোধে কৃষকদের ছত্রাক নাশক নাটিবো ও লাল সার উপরি প্রয়োগ এবং পচা রোগের জন্য প্লেনাম টিটোগোল্ড ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ বলেন, ‘ব্রি ২৯, ব্রি ২৮ ও ব্রি ৫২ জাতের ধানে ব্লাস্টের প্রকোপ থাকে বেশি। এছাড়া দিন ও রাতের তাপমাত্রায় তারতম্য থাকলে বা প্রচুর গরম পড়লে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ছত্রাক নাশক ওষুধ ছিটিয়ে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাঠে না গেলেও কৃষকরা উপজেলা কৃষি অফিসকে জানাতে পারতেন । এ ব্যাপারে কেউ তো জানায়নি।’ এ বিষয়ে সরজমিনে গিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।













