‘রাইত ১০ টায় ঘুমাইতে গেছি, ভোর ৬ টায় পাহাড় ধইসা ওয়াল আমগো উপরে আইসা পড়ছে। আমি চইলা গেছি মাটির তলে। পিচ্চিটা আমার কোলে। পাশে ওয়াল চাপা পইড়া স্বামীটা হাত-পা ছুঁড়তেছিলো। আমার স্বামী সন্তানরে বাঁচাইতে পারলাম না রে ভাই। আমি এখন কি নিয়া বাঁচমু।’
আজ ভোর ৬ টায় চট্টগ্রামের ষোলশহরে পাহাড় ধসে নিহত হওয়া ৭ মাস বয়সী শিশুকন্যা বিবি জান্নাততের মা ও সোহেলের স্ত্রী শরীফা বেগম এসব বলেই করছিলেন বিলাপ। কান্না আর বিলাপের মাঝে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন শরীফা।
ষোলশহর জংশন আইডব্লিও কলনীর আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে স্বামী-সন্তান হারানো শরীফা বেগমের কান্নায়। এমন অনাকাংখিত মৃত্যুতে এলাকাজুড়েও বিরাজ করছে শোকের আবহ।
শরীফা বলেন, গত ১৩ বছর ধইরা আমরা এইহানে বাস করতাছি। কোনদিন কোন সমস্যা হয় নাই। আমগো ঘরের ওপর পাহাড়ে একটা ওয়াল বানাইতে চাইলে আমরা মানা করছিলাম। বৃষ্টিতে ওয়ালটা আমগো ওপর ভাইঙ্গা পড়ার আশঙ্কায় এ ওয়াল বানাইতে বাবার মানা করলেও তারা আমগো কথা হুনেনাই। আমরা থানায় অভিযোগ করব কইলে তারা জানায় থানা তাগো কিনা। এখন তাগো একগুয়েমির দাম দিতে হইলো আমার স্বামী-সন্তানের জীবন দিয়া।
শরীফার এক প্রতিবেশী জানায়, ঘটনার খবর শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে এসেছিলাম। এসে দেখি তাদের ঘরের ওপর ওয়াল পড়ে সবাই ভেতরে চাপা পড়ে আছে। শরীফা ভাবিও মাটি চাপা পড়ছিলো। তার চুল কেটে তাকে টেনে বের করা গেলেও সোহেল ভাই ও তার মেয়েটাকে বাঁচানো যায়নি।
শরীফার আরেক প্রতিবেশী জানায়, ভোর ৬টায় পাহাড় ধসে পড়ার শব্দে আমরা ঘটনাস্থলে এলে দেখি ঘরের উপর মাটি ও ওয়াল। আমাদের আরো অনেক প্রতিবেশী মহিলারা এসেছিলো। অনেকে ভয়ে এগোয়নি।
এদিকে শরীফা ক্ষোভ ঝাঁড়লেন প্রতিবেশীদের উপর। তিনি জানান, আমার প্রতিবেশীরা যদি চেষ্টা করতো আমার স্বামী-সন্তানকে বাঁচাতে পারতো। তারা কেউ আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসিনাই। যতগুলো মহিলা ছিলো সবাই হাত লাগালেও ওয়ালটা আমাদের ওপর থেকে সরিয়ে ফেলা যেতো।
প্রসঙ্গত, আজ ভোর ৬টায় চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানা এলাকায় পাহাড় ধসে চাপা পড়া বাবা সোহেল ও সাত মাস বয়সী বিবি জান্নাতকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতলে নিয়ে গেলে তাদের মৃত ঘোষণা করে কর্তব্যরত ডাক্তার।