২৮ অক্টোবর ২০২৫

আমের স্বাদ বারো মাস

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক»

আমের স্বাদ বারো মাস। দেশীয় প্রযুক্তিতেই বারোমাসী আমের ফলন বাড়ির ছাদেই। ছোট্ট পরিসরেই পারিবারিক ফলের চাহিদা মেটাবে। বাড়ির ছাদে কিংবা ঘরের আঙ্গিনায় ছোট পরিসরে এ ধরনের আম গাছ লাগিয়ে নিজেরাই চাহিদা মেটাতে পারেন। ২০০৯ সালে ৫/৬ফুট উচ্চতার আমের এমন জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর অধীনে থাকা পাহাড়তলীস্থ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র । এ ধরনের আমের জাতের নাম দেয়া হয়েছে বারি আম-১১। সারা বছরব্যাপী এ জাতের গাছ থেকে মুকুল ও ফল উভয়ই আশা করতে পারেন চাষীরা। তবে বছরের ৩টি সময়ে এ ধরনের গাছে আমের মুকুল যেমন আসবে তেমনি তিনমাস পর পাকা আমের স্বাদও নেয়া যাবে। বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বারি) এর পাহাড়তলীস্থ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে মুক্তায়িত করা হয়েছে বারি আম -১১ জাতের।

পাহাড়তলীস্থ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ আমের জাত বারোমাসী ফলন দিবে। সারা বছরই আমের মুকুল আসার তিনটি সময় রয়েছে, তেমনি পূর্ণাঙ্গ আমে রূপ নিতেও তিনটি সময় নির্ধারিত হয়েছে। যদি বছরের প্রথম সময় থেকে ধরে নেয়া হয় তাহলে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে প্রথমবারের মত গাছে মুকুল আসবে। সে মুকুল থেকে মে-জুন মাসে ফলন পাওয়া যাবে। আবার এপ্রিল-মে মাসে যেসব গাছে মুকুল আসবে তা থেকে ফলন আসবে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। সর্বশেষ অক্টোবর-নবেম্বর মাসে যে মুকুল আসবে তা থেকে ফলন আসবে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে।

এ জাতের গাছের সাইজ মাঝারি ধরনের। মুকুল থেকে প্রস্ফূটিত আম হবে থোকায় থোকায়। প্রতিটি থোকায় ৫/৬টি আম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব আমের গড় ওজন হবে  ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ গ্রাম। তবে গাছের চারা থেকে পূর্ণাঙ্গ অর্থাৎ মুকুল আসার সম্ভাবনাময় সময় হচ্ছে চার থেকে পাঁচ  বছর। প্রতি চারমাস অন্তর এ জাতের ফল পাওয়া যাবে ৬০ থেকে ৭০টি। অর্থাৎ বছরে ৪০ থেকে ৫০ কেজি আম পাওয়া যাবে প্রতিটি গাছ থেকে। আরও জানা গেছে, এ জাতের আম হলুদ বর্ণের হবে। এ আমের চামড়া অনেকাংশে পাতলা। ফলে চামড়া ও আঁটি বাধে খাবারযোগ্য অংশের পরিমাণ প্রায় আশি শতাংশ। এ আমের মূল বৈশিষ্ট হচ্ছে শুধু সারাবছর ফলনই নয়, স্বাদে ও গুণে এবং ঘ্রানে এ আম বৈচিত্রময়। গুচ্ছ আমের ফলন ও মিষ্টি মধুর হওয়ায় চাষীদের মাঝে এ জাতের সাড়া ফেলবে।

এ ব্যাপারে পাহাড়তলী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.এ এস এম হারুনর রশীদ বাংলাধারা প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বারি আম-১১ এর ফলন অনেক বেশি। স্বল্প সময়ে দীর্ঘমেয়াদী ফলনের জন্য এ ধরনের জাত সকলেরই চাষের আওতায় আনা উচিত। বাড়ির ছাদে কিংবা ছোট পরিসরে এ ধরনের জাতের ফলন পাওয়া যাবে কিনা সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুষ্ঠু পরিচর্যার মাধ্যমে যে কোন স্থানেই চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে ফল পাওয়া স্বাভাবিক।

‘আমের উন্নত জাতের পরিচিতি ও উৎপাদন এবং চাষ পদ্ধতির কলা কৌশল বিষয়ক অনেক সেমিনার ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে পাহাড়তলীস্থ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে। অনেকবার কৃষকদের বারি আম-১১ এর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের আমের চারা বা কলম বিনে পয়সায বিতরণ করা হয়। গ্রাহকদের জন্য প্রতিটি চারার দাম ১৫০ টাকা। এ ধরনের চারার চাহিদা অনেক বেশী। বিশেষ করে ছাদে এ ধরনের চারা রোপনে ফলনের কাটতি হয় না। 

বাংলাধারা/এফএস/এফএস

আরও পড়ুন