৪ নভেম্বর ২০২৫

আয়েশা নাজনীনের ছোট গল্প: বোবা কান্না

বোবা কান্না

মানুষ যা চায় তা সহজে পেয়ে গেলেই হয়তো তার প্রতি আকর্ষণটা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ইদানিং মিতুর হাবভাব দেখলে মনে হয় ওকে বিয়ে করে মস্ত বড় একটা পাপ করে ফেলেছে সামীর যার প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছে তাকে হাজারো অনুশোচনার বিনিময়ে।

অথচ এই মিতুর জন্যই তাকে তার প্রিয় আর সবচেয়ে কাছের মানুষটির কাছ থেকে হিপোক্রেট উপাধি পেতে হয়েছে। সেই কৈশোর থেকে মিতু আর সামীর খেলার সাথী। দুজনের খুঁনসুটি আর দুরন্তপনার মত বন্ধুত্বের উচ্ছলতা যেন মাতিয়ে রাখতো আশপাশ।

পরম নির্ভরতা ছিল সে বন্ধুত্বে যেখানে কোন ছলচাতুরীর আশ্রয় মেলে না। নদীর জলের মতো সময় গড়িয়ে চলে বাঁধভাঙ্গা নিয়মে। লাভ করে তারুণ্যের হাতছানি। দুজন আস্তে আস্তে ছিটকে পড়ে দুদিকে কালের আবর্তে কিন্তু মিতুর হৃদয়ে রয়ে যায় কৈশোরের ভালোলাগা।মনের অজান্তে এক আবেগি প্লাবন ঝড় তুলে সামীর তার কল্পনায় -হাজার বর্ষায় সামীর তা জানতে পারে না।

একসময় ভার্সিটি লাইফে গিয়ে সামীর প্রেমে পড়ে নিহার।রূপকথার রাজ্যে স্বপ্নের কথা মালা সাজিয়ে চলতে থাকে তাদের অনুভূতির পথচলা। মিতুর মনে তখনো সজাগ কৈশোরের স্মৃতি যা এরই মধ্যে হঠাৎ সে আত্মপ্রকাশ করে। সামীর থমকে যায় এক মুহূর্তে, নিহার সাথে সম্পর্কের কথা জানিয়ে তার এ আহবান মেনে নেয়া অসম্ভব জানাতে কেমন যেন অস্থির হয়ে ওঠে মিতু।

পরক্ষনেই প্রবল আক্রোশে ফিরে পেতে চায় সে তার সুপ্ত প্রেম। বদলে যাওয়া সময়ের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে হোঁচট খায় সে। ‘তুই আমার খুব ভালো বন্ধু’ এর চেয়ে বেশি নয়’ সামীরের নিরুত্তাপ জবাবে ছুটে পালাতে চায় সে অর্থহীন লাগে জীবনটা তার কাছে। সেনসিটিভ মিতু মনের অজান্তে তাই তুলে নেয় সুইসাইডের গোলাবারুদ। তিন দিন হসপিটালে থাকার পর ভাগ্যক্রমে সে যাত্রায় রক্ষা পায়।

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা মিতুর কাছে যায় সামীর একরাশ রজনীগন্ধা নিয়ে। মানবিকতার উৎকর্ষতা না হয় ভালোবাসার কাছে আজ পরাজিত হোক। নিহার সাথে সম্পর্কের পাট চুকিয়ে আজীবন একসূত্রে গাঁথা থাকার শপথ নেয় সে বাধ্য হয়ে মিতুর হাতে হাত রেখে। আর নিহা একা পথ চলে বিরহের যন্ত্রনাকেই চলার সাথী হিসেবে বেঁছে নেয়। প্রথম বছরের দাম্পত্য জীবন ভালই কাটে দুজনের।

কিন্তু তারপর থেকে মিতু কেমন যেন পাল্টে যেতে থাকে। অহেতুক নানান সন্দেহ আর প্রশ্নবানে জর্জরিত করে রাখা তার দৈনন্দিন রুটিনের অংশ হয়ে পড়ে। তার ধারণা নিহার সাথে এখনো গোপনে সম্পর্ক রাখছে তার স্বামী। তা না হলে এত কিছুর পরও বিয়ে করলো না কেন নিহা। সন্দেহ আর অবিশ্বাসের ঘুণপোকায় ক্ষয় হয়ে যেতে থাকে সংসারের বাকি খসড়া টুকু।

যে মিতু তার জন্য জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিতে চেয়েছিল তার এমন কটাক্ষ কথায় বিপর্যস্ত হতে থাকে তাদের conjugal life. সম্পর্কের বাঁধন হালকা হয়ে ওঠে। মাদক নিষিদ্ধ সম্পর্কে জড়িয়ে অবাধ্য জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে থাকে মিতু। নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারে না সামীর। সেতো সর্বস্ব দিয়ে সুখী করতে চেয়েছিল তার স্ত্রীকে তবু কেন অতীতের সূত্র ধরে মিতু জলাঞ্জলি দিলো তার ভবিষ্যতের সুখস্বপ্নের সাতকাহন। উত্তর জানা নেই তার।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন